বুধবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বৈশ্বিক উষ্ণতার খড়গে হিমালয়ের বরফ

ঝুঁকিতে ২০০ কোটি মানুষ

বৈশ্বিক উষ্ণতার খড়গে হিমালয়ের বরফ

জয়বায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে গোটা পৃথিবীতে। ইতিহাসের ভয়ঙ্কর তুষারপাত শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। আবার অস্ট্রেলিয়ায় চরম গরমের পর শুরু হয়েছে ব্যাপক বন্যা। জলবায়ু পরিবতর্নের এই প্রভাব শুরু হয়েছে হিমালয়ের ওপরে থাকা শত শত মিটার পুরো বরফের আস্তারণ বা হিমবাহে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আর বছর দুয়েকের মধ্যে হিমালয়ের হিমবাহগুলোর অন্তত এক তৃতীয়াংশ গলে যাওয়ার হুমকিতে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলেও এ পরিস্থিতি তৈরি হবে। আর সে চুক্তির বাস্তবায়ন না হলে পরিস্থিতি হবে আরও ভয়াবহ। তখন হিমালয়ের হিমবাহগুলোর দুই তৃতীয়াংশ গলে যাবে। এতে প্রায় ২০০ কোটি মানুষকে চরম পরিণতি বরণ করতে হবে। হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলের অবস্থা মূল্যায়নের ভিত্তিতে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট (আইসিমড)-এর এক প্রতিবেদনে এমন সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের বিপন্নতার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসে কপ-২১ নামের একটি সম্মেলনে প্রথমবারের মতো একটি জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হন বিশ্বনেতারা। ২০১৬ সালের এপ্রিলে ১৭৫টি দেশ ওই সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। প্রতিবেদনটিতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় না কমালে বিশাল বিশাল এসব হিমবাহের দুই-তৃতীয়াংশই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে । চলতি শতকেই গড় তাপমাত্রার পরিমাণ যদি এখনকার চেয়ে এক দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসও বাড়ে তাহলেও বরফের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ অদৃশ্য হয়ে যাবে। হিন্দুকুশ ও হিমালয়ের ওই হিমবাহগুলো সংলগ্ন অন্তত ৮টি দেশের সুপেয় পানির অন্যতম প্রধান উৎস। কে-টু ও এভারেস্টের মতো বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গধারী এ দুটি পর্বতমালার মধ্যেই মেরু অঞ্চলের পর পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বরফ জমা আছে। বৈশ্বিক উষ্ণতাবৃদ্ধির কারণে সেখানকার হিমবাহগুলো এক শতকেরও কম সময়ের মধ্যে শুষ্ক পাথরের খাতে পরিণত হতে পারে বলে শঙ্কা বিজ্ঞানীদের। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে সৃষ্ট বায়ুদূষণও বাড়তে থাকা তাপমাত্রার কারণে আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই ওই পর্বতমালার বরফ গলার হার বাড়তে পারে বলেও ধারণা তাদের।

ভারত ও পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল, বাংলাদেশ ও নেপালের দক্ষিণাঞ্চলের সমভূমি নিয়ে গঠিত ইন্দো-গঙ্গা সমভূমির জনবহুল এলাকা থেকে দূষিত বায়ু বরফের গায়ে ধুলা ও কালো কার্বনের আস্তর সৃষ্টি করে; এটি বরফের জমাট গঠনকে ভেঙে ফেলে হিমবাহের পরিস্থিতিকে শোচনীয় করে তোলে। হিন্দুকুশ ও হিমালয় পর্বতমালার এ হিমবাহ গঙ্গা, সিন্ধু, ইয়েলো, মেকং ও ইরাবতীর মতো বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নদী ব্যবস্থাপনাকে টিকিয়ে রেখেছে। বিবিসি

সর্বশেষ খবর