রবিবার, ১০ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভারত-পাকিস্তান পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা ফুরিয়ে যায়নি

নিউইয়র্ক টাইমস-এর সম্পাদকীয়

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা আপাতত খানিকটা হ্রাস পেলেও পরমাণু যুদ্ধের হুমকি এখনো শেষ হয়ে যায়নি বলে মনে করছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। মার্কিন এই শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের বৃহস্পতিবারের সম্পাদকীয়তে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, যত দিন কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হয়নি তত দিন এই হুমকি অব্যাহত থাকবে। এজন্য কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ওই সম্পাদকীয়তে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে দুইবার যুদ্ধে জড়ানোর পর কাশ্মীরকে পৃথক দুই ভাগ করে তা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে দুই দেশ।

সম্প্রতি জঙ্গি হামলাকে ঘিরে দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃস্টি হয়েছে। এ নিয়ে বিমান হামলাও হয় যা পরবর্তীতে একটি যুদ্ধাবস্থার দিকে গড়ায়। গত মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার জেরে পাল্টাপাল্টি বিমানযুদ্ধে জড়ায় পারমাণবিক শক্তিধর দেশ দুটি। গত ২৭ ফেব্র“য়ারি ভূপাতিত করা ভারতীয় বিমানের পাইলটকে আটকের দুই দিন পর মুক্তি দেয় পাকিস্তান। তার পরও দুই দেশের নিয়ন্ত্রণ রেখায় সেনাবাহিনীর মধ্যে কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা চলে। তবে দুই দেশের মধ্যে আপাতত যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, সেই উত্তেজনা খানিকটা প্রশমিত হয়ে এসেছে। ইমরান খান আটক ভারতীয় পাইলটকে ফিরিয়ে দিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, পাকিস্তান যদি আটক ভারতীয় পাইলটকে মুক্তি না দিত তা হলে দুই দেশের সংঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেত।  সম্পাদকীয়টিতে লেখা হয়েছে, পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বাড়তে থাকা সাম্প্রতিক উত্তেজনা প্রশমিত হয়ে এলেও দুই দেশ কাশ্মীর বিরোধ নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার আগ পর্যন্ত আরেকটি মারাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অতীতে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিয়ন্ত্রণে রাখতে মার্কিন প্রেসিডেন্টরা কাজ করেছেন জানিয়ে সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, ‘১৯৯৯, ২০০২ ও ২০০৮ সালে ক্লিনটন, বুশ ও ওবামা প্রশাসন কার্যকর উদ্যোগ নিলেও ট্রাম্প প্রশাসন কেবল কয়েকটি বিবৃতিতে ধৈর্য ধারণের আহ্বানের মধ্য দিয়ে কাজ সারতে চেয়েছেন। পাকিস্তানের প্রতি কঠোর এবং ব্যবসায়ী স্বার্থের কারণে ভারতের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রকে নরম করে তোলার জন্য ট্রাম্পকে এই ইস্যুতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় দেখা যাওয়া কঠিন’। সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, সংঘাত নিরসনের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার প্রয়োজন। এতে ভবিষ্যতে হামলা মোকাবিলায় ভারতের সক্ষমতা জোরালো হতে পারে এবং কাশ্মীরে দিল্লির শাসন বিরোধীদের প্রতি ভারতের মনোভাবেও বদল  ঘটাতে পারে।

মার্কিন জেনারেলের সতর্কতা : দুই দেশের সৃষ্ট উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে পারমাণবিক হুমকিতে বিশ্ব সম্প্রদায়। যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াগুলোতে সতর্ক করা হয়েছে, কাশ্মীর নিয়ে বিরোধ থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় শুরু হয়ে যেতে পারে পারমাণবিক যুদ্ধ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের একজন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধিতে অব্যাহতভাবে তৎপর রয়েছে সন্ত্রাসীরা। ওই সেনা কর্মকর্তা হলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের নেতৃত্বে থাকা জেনারেল জোসেফ ভোটেল। তিনি মনে করেন, এই অঞ্চলে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে লড়াই করতে হবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। এ তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানের সংবাদপত্র ডন। ওদিকে সিনেটর মিট রমনি মনে করেন, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না হলে এ অঞ্চল থেকে শান্তি দূরে থাকবে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের হাউস কমিটি অন আর্মড সার্ভিসেসে জেনারেল জোসেফ বলেন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বাইরে সক্রিয় জঙ্গিরা আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতার জন্য অব্যাহত হুমকি হয়ে উঠেছে।

সর্বশেষ খবর