ইসরায়েলে কিছু অস্ত্র রপ্তানির লাইসেন্স স্থগিত করা হচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, যুক্তরাজ্যের অস্ত্রের রপ্তানি লাইসেন্স পুনপর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিবিসি জানায়, ৩৫০টির মধ্যে প্রায় ৩০টি অস্ত্রের রপ্তানি লাইসেন্স স্থগিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ল্যামি। তবে এ লাইসেন্স স্থগিত করার মানে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়া নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। ইসরায়েলে এসব অস্ত্র রপ্তানি করা হলে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন ঘটিয়ে সেগুলো ব্যবহার হওয়ার ‘ঝুঁকি স্পষ্ট’ বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গাজায় যুদ্ধ চলার মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে যুক্তরাজ্য সরকার চাপের মুখে আছে। যদিও যুক্তরাজ্য ইসরায়েলে সরাসরি অস্ত্র সরবরাহ করে না। তবে তারা ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোকে ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রির জন্য রপ্তানি লাইসেন্স দেয়।
ইসরায়েলে বিক্ষোভ নেতানিয়াহুর ক্ষমতার ভিত নাড়িয়ে দিচ্ছে : গত রবিবার নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে প্রায় ৩ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছে। তারা মূলত যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে ব্যর্থ হওয়া ও জিম্মিদের জীবিত উদ্ধার না করার পেছনে বর্তমান সরকারকে দায়ী করছেন। গাজায় ছয় বন্দি মুক্তির ঘটনায় ইসরায়েলে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। সোমবার দেশটির সেনাবাহিনী ছয়জন জিম্মির লাশগুলো উদ্ধার করে। গত বছরের অক্টোবর মাসে ইসরায়েলে হামাস আক্রমণ করে ২ শতাধিকেরও বেশি মানুষকে জিম্মি করে। ওই ঘটনার ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো অনেকেই জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, লাশগুলো উদ্ধারের কিছু সময় আগেই তাদের হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার পেছনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘যারা জিম্মিদের হত্যা করেছে তারা চুক্তি চায় না।’ এদিকে হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা ইজ্জাত আল-রিশেক দাবি করেন, ছয় বন্দি ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। এদিকে ইসরায়েলের প্রধান শ্রমিক ইউনিয়ন সোমবার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। এক্ষেত্রে শ্রম আদালত কর্তৃক শ্রমিকদের চাকরিতে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার আগে কয়েক ঘণ্টার জন্য দেশটির অর্থনীতিতে স্থবিরতার নেমে আসে। দেশজুড়ে এ ধর্মঘটের মাধ্যমেই নেতানিয়াহু সরকারের ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রসিকিউটর, নেতানিয়াহু ও তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টসহ দুই হামাস নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েছেন।
হামলা অব্যাহত রাখলে বাকি জিম্মিরা ‘কফিনে’ ফেরত যাবে- হামাস : ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকলে গাজায় আটক বাকি জিম্মিদের ‘কফিনে করে’ ইসরায়েলে ফেরত পাঠানো হবে। সংগঠনটি হুঁশিয়ারি দেয়, যেসব যোদ্ধা জিম্মিদের পাহারা দিচ্ছেন, তাদের ‘নতুন নির্দেশনা’ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার এক বিবৃতিতে হামাসের কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবেইদা বলেন, নেতানিয়াহু চাচ্ছেন যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তির পরিবর্তে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্ত করতে। এর অর্থ হলো জিম্মিদের পরিবারের কাছে শুধু তাদের কফিনগুলোই পৌঁছাবে। এখন পরিবারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা তাদের আপনজনকে মৃত না জীবিত, কীভাবে ফিরে পেতে চান। তিনি আরও বলেন, নেতানিয়াহু এবং সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে বন্দিদের বিনিময় চুক্তিতে বাধা দিচ্ছে। তাই এসব বন্দিদের মৃত্যুর জন্য সম্পূর্ণরূপে নেতানিয়াহু এবং তার সেনাবাহিনী দায়ী।