গাজায় যুদ্ধবিরতির খুব কাছে চলে এসেছে হামাস ও ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন দাবি করেন, চলমান যুদ্ধের ইতি টানতে দুই পক্ষই ৯০ শতাংশ একমত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখন উভয় পক্ষকে অনুরোধ করেছি, যেন বাকি ১০ শতাংশ নিয়েও মতৈক্যে পৌঁছায় এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত করে।’
তার যুক্তি, ‘এখন ইসরায়েল ও হামাসের দায়িত্ব মতৈক্যে পৌঁছানো, লড়াই বন্ধ করা এবং বন্দিদের মুক্তি দেওয়া।’ তবে ব্লিঙ্কেন বলেন, এখনো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একমত হওয়া বাকি আছে। যেসব বিষয়ের এখনো ফয়সালা হয়নি, তার মধ্যে আছে ফিলাডেলফি করিডোর। এটি গাজা উপত্যকা ও মিসরের সীমান্তে পড়েছে। এ ছাড়া ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দিরা কীভাবে মুক্তি পাবেন, সেটা নিয়েও মতভেদ রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করছি, মধ্যস্থতাকারী মিসর ও কাতার আমাদের ভাবনার কথা হামাসকে জানাবে। আমরা ইসরায়েলের সঙ্গে কথা বলব। তারপর দেখব, কেমন করে বাকি বিষয়গুলো নিয়ে একমত হওয়া যায়। এদিকে মার্কিন নিউজ চ্যানেল ফক্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, এখনো চুক্তি হওয়ার মতো অবস্থা আসেনি। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে ঢুকে ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করে, ২৫০ জনেরও বেশি মানুষকে পণবন্দি করে নিয়ে যায়। ইসরায়েল প্রত্যাঘাত করে এবং গাজায় ৪০ হাজার ৮০০ মানুষ মারা গেছেন বলে হামাস জানিয়েছে।
ইসরায়েল যাচ্ছেন বেয়ারবক : জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক গতকাল ইসরায়েলে গেছেন। সফরে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। তিনি অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাংকেও যাবেন। মূলত বৃহস্পতিবার বেয়ারবক তার মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু করেছেন। তিনি সৌদি আরবের রিয়াদে গেছেন। ডিডাব্লিউর সাংবাদিক নিনা হ্যাসে কূটনৈতিক সূত্র উদ্ধৃত করে জানান, বেয়ারবক সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের নিজেদের এলাকা বজায় রেখে ‘টু স্টেট’ সমাধানের ওপরেই গুরুত্ব দিতে হবে। এরপর জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্ডান যান। সেখানে তিনি ঘোষণা করেন, গাজায় মানবিক সাহায্যের জন্য জার্মানি বাড়তি ৫ কোটি ইউরো দেবে। তিনি জর্ডানকেও বাড়তি ১ কোটি ২৭ লাখ ইউরো দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
অন্ধ না হয়ে নেতানিয়াহুকে চাপ দিন : ১১ মাস ধরে গাজায় পুরো হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। শুধু তাই নয়, হামাস নির্মূলের নাম করে গোটা গাজা ভূখন্ড গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল। এ অবস্থায় বহুদিন ধরেই যুদ্ধবিরতির পথে হাঁটতে চাইছে হামাস। এবার সংঘাত থামাতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়াতে আমেরিকার কাছে আর্জি জানিয়েছে তারা। হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আর অন্ধ হয়ে থাকবেন না। এবার ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করুন।,
গাজায় যুদ্ধ থামানোর জন্য মধ্যস্থতা করছে সৌদি আরব, মিসর, কাতারের মতো দেশ। উদ্যোগী হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। প্রতিনিয়ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে ওয়াশিংটন। একাধিকবার কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত শান্তি বৈঠকে যোগ দিয়েছে হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা। কিন্তু কোনোবারই যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে সম্মত হতে পারেনি দুপক্ষ। কারণ পণবন্দিদের মুক্তি নিয়ে একাধিক শর্ত চাপিয়েছে হামাস। যা মেনে নেয়নি তেলআবিব। এখনো নিজের সিদ্ধান্তেই অনড় রয়েছেন নেতানিয়াহু। এখন তাকে অবস্থান থেকে টলাতে আমেরিকার কাছে দরবার করছে হামাস।
দিন দুয়েক আগেই দোহায় অনুষ্ঠিত হয়েছে শান্তি বৈঠক। সেখানে উপস্থিত ছিল কাতারে থাকা হামাসের প্রতিনিধি খলিল আল হাইয়া। সংবাদমাধ্যমে সে জানিয়েছে, নেতানিয়াহু চুক্তিতে সম্মত হননি। এবার আমেরিকার উচিত আর ইসরায়েলের পক্ষে না থাকা। অন্ধ হয়ে থাকা বন্ধ করুন। যুদ্ধবিরতি নিয়ে চাপ বাড়ান নেতানিয়াহুর ওপর। এটা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা চুক্তির খুব কাছেই ছিলাম।’ এদিকে যত দিন যাচ্ছে আরও দীর্ঘ হচ্ছে গাজায় থাকা পণবন্দি ঘরে ফেরার অপেক্ষা। গত ১১ মাস তারা হামাসের হাতে জিম্মি। যা নিয়ে প্রতিনিয়ত ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। এর মাঝেই ফের গাজা থেকে ছয় জিম্মির লাশ উদ্ধার করেছে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)। তাদের অভিযোগ, ওই ছয়জনের লাশ উদ্ধার হওয়ার কিছুক্ষণ আগে তাদের হত্যা করা হয়। এর পরই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ইসরায়েলের একাধিক শহর। জিম্মিদের মৃত্যু নিয়ে সবার কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন নেতানিয়াহু। নিজের দেশেই ক্রমাগত চাপ বাড়ছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর ওপর।