শ্রীলঙ্কাকে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকট থেকে পুনরুদ্ধারে ‘পরিচ্ছন্ন’ রাজনীতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েক। গতকাল তিনি শপথ নিয়েছেন। ২০২২ সালে অর্থনীতির অব্যবস্থাপনার কারণে সৃষ্ট অসন্তোষ প্রতিবাদে রূপ নেয় এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকশে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হন। গত শনিবারের নির্বাচনে জয়ী হন অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েক। শপথ নেওয়ার পর তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি নতুন পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমি এটি অর্জনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা রাজনৈতিক ব্যবস্থায় মানুষের সম্মান ও বিশ্বাস পুনরুদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব।’ ৫৫ বছর বয়সি অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েক একে ডি নামে পরিচিত। তিনি শ্রীলঙ্কার জনগণের উদ্দেশে বলেন, ‘গণতন্ত্র একজন নেতা নির্বাচনের মাধ্যমে শেষ হয় না। আমাদের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আমি গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আগে বলেছি যে আমি কোনো জাদুকর নই, আমি একজন সাধারণ নাগরিক। এমন অনেক কিছু আছে যা আমি জানি এবং অনেক কিছুই আছে যা আমি জানি না। আমার লক্ষ্য হলো এমন ব্যক্তিদের সমবেত করা যারা জ্ঞান ও দক্ষতা রাখেন এবং তারা এই দেশের উন্নয়নে সহায়তা করবেন।’
দিশানায়েক তার ভাষণ শেষে বুদ্ধের আশীর্বাদ গ্রহণ করেন। শপথ অনুষ্ঠানে শ্রীলঙ্কার অন্যান্য প্রধান ধর্মের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের আগে দেওয়া এক বিবৃতিতে দিশানায়েক বলেন, ‘সিনহালিজ, তামিল, মুসলিম এবং সব শ্রীলঙ্কানের ঐক্য এ নতুন শুরুর ভিত্তি।’
নির্বাচনের আগে প্রচারণার সময় দিশানায়েক ভোটারদের সুশাসন ও কঠোর দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার উৎপাদনশীলতা, কৃষি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নয়নেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি চালিয়ে যাওয়ার এবং দেশটির দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর এর কৃচ্ছ্র প্রভাব কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দিশানায়েক শপথ নেওয়ার আগে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী দিনেশ গুনাবর্ধন পদত্যাগ করেন। এতে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পথ সুগম হয়ে যায়।
বিবিসি সিংহলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আগেই দিশানায়েক ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তিনি নির্বাচিত হওয়ার পরপরই সংসদ ভেঙে দেবেন। তিনি সেই সময় বলেন, ‘যে সংসদ জনগণের ইচ্ছার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, তা চালিয়ে যাওয়ার কোনো মানে নেই।’ গত রবিবার দ্বিতীয় পর্যায়ে ভোট গণনা চলার পর দিশানায়েককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
এদিকে সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিংহে তার উত্তরসূরিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘এই প্রিয় জাতির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে আমি এর ভবিষ্যৎ নতুন প্রেসিডেন্টের হাতে তুলে দিচ্ছি।’