রাশিয়ার ওপর বড় আকারের বিমান হামলার ঘটনায় পশ্চিমা দেশগুলোকে পরমাণু হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে আমেরিকা ও ব্রিটেনের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে রাশিয়ার এ সতর্কতা এসেছে, ইউক্রেনকে তার বিরুদ্ধে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন গতকাল মস্কোর শীর্ষ নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে পারমাণবিক প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনার জন্য জরুরি বৈঠক করেছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, পরমাণু শক্তিধর কোনো দেশ যদি রাশিয়ার ওপর অন্য কোনো দেশের হামলা সমর্থন করে তাহলে তা আগ্রাসি বলেই বিবেচিত হবে।
গতকাল মস্কোর শীর্ষ নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে পুতিন মূলত ইউক্রেন যুদ্ধেই রাশিয়ার পরমাণু নীতিতে পরিবর্তন আনার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পরমাণু শক্তিধর কোনো দেশ পরমাণু শক্তি নেই এমন দেশকে সাহায্য করলে তা যৌথ আক্রমণ বলে ধরে নেবে রাশিয়া। বৈঠকে তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো পরমাণু শক্তিহীন দেশ আক্রমণ চালালে তা একরকম। কিন্তু সে দেশ যদি পরমাণু শক্তিধর অন্য দেশ বা একাধিক দেশের থেকে সাহায্য পায়, তাহলে রাশিয়া বিষয়টিকে যৌথ আক্রমণ হিসেবে ধরে নেবে এবং সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্প্রতি বলেছেন, ইউক্রেনের পারমাণবিক চুল্লিগুলোয় হামলার ছক কষছে রাশিয়া। যেভাবেই হোক তা আটকানো প্রয়োজন।
বেলরুশে আক্রমণ হলে পরমাণু অস্ত্র
পুতিন জানিয়েছেন, ১৯৯৯ সালে বেলারুশের সঙ্গে রাশিয়ার বিশেষ চুক্তি হয়েছিল। বেলারুশ রাশিয়ার কাছের বন্ধু। বেলারুশে কোনো ধরনের আক্রমণ হলে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পুতিন। পুতিন জানিয়েছেন, বেলারুশের আকাশ ব্যবহার করে ইউক্রেন রাশিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে, যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে। এমনটি আর হতে দেওয়া যাবে না। সরাসরি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন তিনি।
রাশিয়ার পারমাণবিক নীতি কী বলে : বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তি রাশিয়া। যদি রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র একত্র করা হয়, তাদের কাছে বিশ্বের ৮৮ শতাংশ পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। রাশিয়ার বর্তমান পারমাণবিক নীতি ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার চার বছর আগে পুতিন নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এর মতে, পরমাণু হামলা হলে বা প্রচলিত হামলায় রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে : সেন্টার ফর আর্মস কন্ট্রোল অ্যান্ড নন-প্রলিফারেশনের মতে, রাশিয়ার আনুমানিক ৭ হাজারটি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, যা বিশ্বের বৃহত্তম। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৭২টি স্থলভিত্তিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ভারী বোমারু বিমানে মোতায়েন করা হয়েছে। ৮৭০টির বেশি কৌশলগত অস্ত্র এবং ১ হাজার ৮৭০টি নন-স্ট্র্যাটেজিক অস্ত্র মজুদ রয়েছে, আনুমানিক ২ হাজার ৬০টি অস্ত্র ধ্বংসের অপেক্ষায় রয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রয়েছে ৬ হাজার ৮০০।
বিশ্ব বর্তমানে বিভিন্ন যুদ্ধের সঙ্গে লড়াই করছে, তাই পুতিনের এ সতর্কবার্তা বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।