হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলা থেকে বেঁচে যাওয়াদের নিয়ে কাজ করা শান্তিতে নোবেলজয়ী জাপানি সংগঠন নিহন হিদাঙ্কিও-এর নেতারা বিশ্বে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়ছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে সংগঠনটি বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোকে পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়েছে।
নাগাসাকিতে ১৯৪৫ সালে মার্কিন বোমা হামলার ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া ও নিহন হিদাঙ্কিও গ্রুপের সহ-প্রধান শিগেমিৎসু তানাকা বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে এবং এখনো যুদ্ধ চলছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকিও দিচ্ছে।’
পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে জনমত গড়ে তোলার স্বীকৃতি হিসেবে চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পেয়েছে জাপানি সংগঠন নিহন হিদাঙ্কিও। সংগঠনটির নেতা তানাকা বলেন, ‘আমি ভয় করছি যে, মানবজাতি হিসেবে আমরা নিজেদের ধ্বংস করার পথে চলছি। এটি থামানোর একমাত্র উপায় পারমাণবিক অস্ত্রের বিলুপ্তি।’ ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমা হামলা চালায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী সংগঠনের নাম ঘোষণায় নোবেল ইনস্টিটিউ বলেছে, ওই হামলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সংগঠন নিহন হিদাঙ্কিও বিশ্বকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার জন্য নিরলসভাবে যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, এবারের শান্তির নোবেল তারই স্বীকৃতি। নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির প্রধান জর্জেন ওয়াটনে ফ্রাইডনেস বলেছেন, হিবাকুশা নামেও পরিচিত এই সংগঠনটি ‘পারমাণবিক অস্ত্র মুক্ত বিশ্ব অর্জনের প্রচেষ্টা এবং এই বিপর্যয়কে নিজের চোখে দেখে আসা প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান সবার সামনে তুলে ধরে পারমাণবিক অস্ত্র আর কখনো ব্যবহার করা উচিত নয়’ এমন প্রচারণার জন্য এই পুরস্কার পেয়েছে। নিহন হিদাঙ্কিও একটি পরমাণু অস্ত্র-বিরোধী সংগঠন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমা ও নাগাসাকির পারমাণবিক বোমা হামলায় যারা বেঁচে গিয়েছিলেন, তাদের নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে পরমাণু-অস্ত্র বিরোধী প্রচারণা শুরু করে ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটি। জর্জেন ওয়াটনে ফ্রাইডনেস বলছেন, ‘১৯৪৫ সালের আগস্টের পারমাণবিক বোমা হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিশ্বব্যাপী একটি আন্দোলনের উদ্ভব হয়েছিল; যার সদস্যরা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিপর্যয়কর মানবিক পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।’
নোবেল পুরস্কার শান্তি চেষ্টা বাড়াবে : জাপানের হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলার ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়াদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ‘নিহন হিদাঙ্কিও’ এবারে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ায় বিশ্বে শান্তির জন্য চেষ্টা জোরদার হবে। পাশাপাশি বিশ্ব নেতারাও হিরোশিমার শান্তি স্মৃতি পার্ক দেখতে যেতে উৎসাহী হবেন। এমনটাই আশা করছেন পার্কটির দর্শণার্থীরা। নরওয়ের নোবেল ইনস্টিটিউট শুক্রবার অসলোতে এক সংবাদ সম্মেলনে ১০৫তম নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ওই সংগঠনের নাম ঘোষণা করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষভাগে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমায় একটি পারমাণবিক বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিনিরা সেই বোমার নাম দিয়েছিল ‘লিটল বয়’। তিন দিন পর প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে নাগাসাকি শহরে আরেকটি পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় যুক্তরাষ্ট্র, যার নাম তারা দিয়েছিল ফ্যাট ম্যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯৪৯ সালে হিরোশিমাকে ঘোষণা করা হয় ‘শান্তির শহর’। নির্মিত হয় শান্তি স্মৃতি পার্ক। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে যারা পারমাণবিক বোমার ক্ষত নিয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন, জাপানি ভাষায় তাদের বলা হয় ‘হিবাকুশা’। -রয়টার্স।
এই হিবাকুশারাদের একটি স্থানীয় সংগঠন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষায় ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে নিয়ে ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠা করে জাপান কনফেডারেশন অব এ- অ্যান্ড এইচ-বম্ব সাফারারস অর্গানাইজেশন, যাকে জাপানি ভাষায় সংক্ষেপে বলা হয় ‘নিহন হিদাঙ্কিও’।