২২ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৩:২১

দুনিয়া কারও জন্য স্থায়ী নয়

মুফতি আমজাদ হোসাইন

দুনিয়া কারও জন্য স্থায়ী নয়

আমরা সবাই আখিরাতের মুসাফির। আখিরাতই  আমাদের একমাত্র স্থায়ী ঠিকানা। সেই ঠিকানা আরামের হবে না আজাবের, তা  কারও জানা নেই। তাই বেঁচে থাকতেই এ দুটি স্থায়ী ঠিকানার যে কোনো একটির সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার আরাম-আয়েশের  জন্য কত পন্থা অবলম্বন করতে হয়। অথচ স্থায়ী আবাস আখিরাতের আরাম-আয়েশের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ফিকির নেই। সার্বক্ষণিক জাগতিক উন্নতির  ধ্যানের কারণে দুনিয়ার  ভালোবাসা দিন দিন বাড়তেই থাকে আর পরকালকে ভুলতে থাকে। মনে রাখতে হবে, জাগতিক যত সুখ-শান্তিই আসুক না কেন সঙ্গে যদি ইমানের দৌলত না থাকে তাহলে শেষ পরিণতি চির-অশান্তি ও বড়  কষ্টের। দুনিয়াবি হাজারো আরাম-আয়েশে থাকলেও একদিন মৃত্যুর থাবা সবার শান্তি কেড়ে নিয়ে যাবে। চলে যেতে হবে অন্ধকার কবরে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যা দুনিয়ার সব অবৈধ স্বাদকে নষ্ট করে দেবে। দুনিয়ার ভোগবিলাস ও স্বাদের চিন্তা মন থেকে উঠে যাবে। আর আখিরাতের চিন্তা আসতে থাকবে।’ মানুষ দুনিয়ায় যত সম্মানিত ও সম্পদের মালিকই হোক না কেন, যখন মৃত্যু আসবে, তখন কোনো শক্তিই আজরাইল (আ.)-এর থাবা থেকে রেহাই দিতে পারবে না। দুনিয়ার সব কিছু ফেলে, রিক্ত হস্তে অন্ধকার কবরে যেতে হবে। যদি এখন কারও মৃত্যু হয়ে যায় তাহলে তার শরীরে যা কিছু আছে তা সঙ্গে সঙ্গে খুলে ফেলা হবে। সবাই এসে বলবে লাশ কোথায়? আপনজনেরা বলবে রাত হওয়ার আগেই দাফনের কাজ শেষ করতে হবে। গোসল দিয়ে খাটিয়ার ওপর চাদর দ্বারা ঢেকে রাখা হবে। ছেলে কাঁদবে, মেয়ে কাঁদবে, আত্মীয়স্বজন কাঁদবে কিন্তু কেউ এক দিনের জন্যও এ বাড়িতে তাকে রাখতে রাজি হবে না। জানাজা  শেষে  কাঁধে করে এমন স্থানে নিয়ে কবর দেওয়া হবে যেখানে দিনের বেলায় মানুষ একাকী যেতে ভয় করে। সেই নির্জন স্থানে মাটিচাপা দিয়ে একা রেখে সবাই চলে আসবে। প্রতিবাদ করার কোনো শক্তি থাকবে না। নির্জন কবরের চারদিকে শুধুই অন্ধকার আর অন্ধকার।

মুনকার-নাকির সওয়াল-জওয়াবের জন্য হাজির। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত কতটুকু আদায় করেছে, জীবনে কত ওয়াক্ত নামাজ কাজা করেছে, মহিলারা স্বামীর সঙ্গে কী আচরণ করেছে, পর্দা করত কিনা, নেক আমল কতটুকু করেছে, ধনীরা জাকাত দিত কিনা— সবকিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিতে হবে। সঠিক উত্তর দিতে না পারলে শুরু হয়ে যাবে কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি। যেখানে সাহায্য করার কেউ নেই। তখন একমাত্র মানুষের নেক আমল ও আল্লাহর রহমতই তাকে সাহায্য করবে। মানুষ এ চিন্তা যদি দিনে অন্তত একবারও করত, তাহলে দুনিয়ার প্রকৃত পরিচয় জানতে পারত। তাই মুসলিম ভাই-বোনদের বলছি, মৃত্যুর কষ্ট খুব কঠিন। মৃত্যুর যন্ত্রণা অত্যন্ত ভয়াবহ। আল্লামা আবুল লাইস সমরখন্দি (রহ.) বলতেন, হজরত ওমর (রা.) একবার হজরত কা’ব (রা.)-কে বলেছিলেন, আমাকে মৃত্যুর অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলুন। হজরত কা’ব বললেন, ‘মৃত্যু হলো কাঁটাদার গাছের মতো। যা মানুষের পেটে ঢোকানোর পর যখন তার প্রতিটি কাঁটা শিরায় শিরায় লেগে যায়, তখন একজন শক্তিশালী মানুষ তা জোরে টেনে বের করে। এই কাঁটার কষ্ট মানুষটি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করে। অনুরূপ মৃত্যুপথযাত্রীর কাছেও মনে হয়  তার শরীরের গোশতগুলো যেন একটি  কাঁটার সঙ্গে বেরিয়ে আসছে। সে মৃত্যুযন্ত্রণা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করে।’ মিশকাতের এক হাদিসে আছে : রসুল (সা.) বলেছেন, পাঁচটি জিনিসের আগে পাঁচটি জিনিসকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করো। ১. বুড়ো হওয়ার আগে ইবাদত করার সুযোগ হাতছাড়া করো না। ২. রোগব্যাধি আসার আগে সুস্থ অবস্থাকে সুযোগ মনে করে নেক আমল করে নাও। ৩. অভাবগ্রস্ত হওয়ার আগে টাকা-পয়সাকে ইবাদতের সুযোগ মনে করে দান-সদকা করে নাও। ৪. কাজকর্মে ব্যস্ত হওয়ার আগে অবসর সময়কে সুযোগ মনে করে নেক আমল করে নাও। ৫. মৃত্যু উপস্থিত হওয়ার আগে নেক কাজ করার জন্য জীবনকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করো।

প্রিয় পাঠক! মন দিয়ে  শুনুন! সকাল-সন্ধ্যা একটু সময় বের করে চিন্তা করুন আমাদের কত আত্মীয়স্বজনের মৃত্যু হয়েছে। কীভাবে তাদের খাটিয়ায় করে উঠিয়ে নিয়ে মাটির নিচে রেখে আসা হয়েছে। আজ মাটি তাদের সুন্দর চেহারাকে বিগড়িয়ে দিয়েছে। তারা কীভাবে আত্মীয়স্বজনকে কাঁদিয়ে চলে গেছেন। তাদের সব জিনিসপত্র, কাপড়-চোপড়, গয়না ফেলে রেখে গেছেন। তারা কীভাবে আছেন, আজ কেউ তাদের খবর নেওয়ার নেই। আল্লাহতাআলা আমাদের মৃত্যু ও আখিরাতের চিন্তায় চিন্তিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব, বারিধারা, ঢাকা

সর্বশেষ খবর