৩০ জানুয়ারি, ২০১৬ ১২:৩১
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

ব্যভিচার প্রতিরোধে ইসলাম

মুফতি মহিবুল্লাহ হিল বাকী আননদবী

ব্যভিচার প্রতিরোধে ইসলাম

মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। মহান আল্লাহ বলেছেন—  আমি বনি আদমকে সম্মানিত করেছি, তাদের জলে স্থলে পরিচালিত করেছি, পরিচ্ছন্ন দ্রব্যাদিতে তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করেছি এবং তাদের অন্য অনেক সৃষ্টির উপর মর‌্যাদা দিয়েছি। (বেনি ইসরাইল : ৭১)

আমরা তো মুসলমান। মুসলিমগণ সর্বোত্তম সম্প্রদায়। মহান আল্লাহ বলেছেন, ইসলামই আমার মনোনীত দীন জীবন বিধান— মহান আল্লাহ মুসলমানদের সম্বোধন করে বলেছেন— ‘আমি আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামে সন্তুষ্ট হলাম।’  (মাইদা-৩)

আমরা তো মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত। আমরা সর্বোত্তম উম্মত। আমরা পবিত্র, পরিচ্ছন্ন। মহান আল্লাহ পরিচ্ছন্ন ধর্মীদের ভালোবাসেন। পক্ষান্তরে জেনা-ব্যভিচার, কদর্য ও নিকৃষ্ট অনাচার। এটি অশ্লীলতা ও বিশ্রী বিষয়। এটি আমাদের শরিয়ত ও জীবন বিধানে হারাম ও নিষেধ। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা জেনা-ব্যভিচারের কাছেও যেও না, নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল ও মন্দ পথ।’ (বনি ইসরাইল-৩২)

মানুষের জন্মক্রম পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন। পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার মাঝেই তাদের সম্মান ও মর‌্যাদা নিহিত। জন্মগত পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা চলমান থাকে বিয়েশাদির মাধ্যমে জন্মদান সূত্রে। আমাদের পিতা হজরত আদম (আ.) এই জগতে প্রথম স্বামী এবং মা হাওয়া (আ.) প্রথম স্ত্রী। তাদের উরসে জন্মগ্রহণকারী সন্তান-সন্ততিরা পবিত্রতা পরিচ্ছন্নতার অধিকারী ছিলেন। বিয়েবহির্ভূত সূত্রে জন্ম নেওয়া বাচ্চাগুলো জারজ সন্তানরূপে পরিচিত হয়। এটি তাদের জন্য চরম অবমাননাকর। তাদের তথাকথিত পিতা-মাতা এ জন্য দায়ী। ইসলাম জেনা, ব্যভিচার, সমকামিতা ও অশালীন যৌনাচার হারাম ও নিষিদ্ধ করেছে। মহান আল্লাহ কোরআন মাজিদে বলেছেন, ‘বলুন আমার প্রভু প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব অশ্লীলতা হারাম করে দিয়েছেন।’ (আরাফ-৩৩)

দীন হলো উপদেশকেন্দ্রিক। দীন-ই-ইসলাম উপদেশ দিয়েছে পবিত্রতা রক্ষা ও জেনা-ব্যভিচার থেকে আত্মরক্ষার জন্য। মহান আল্লাহ সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, ‘তিনি চোখের অপব্যবহার ও অন্তরের গোপন বিষয় সম্পর্কে অবহিত।’

মহান আল্লাহ মানুষকে পরনারী ও পরপুরুষের প্রতি তাকানো থেকে বিরত থাকা এবং সতীত্ব রক্ষার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন— ‘মুমিনদের বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে ও তাদের যৌনাঙ্গের সুরক্ষা করে এবং মুমিন নারীদের বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে ও তাদের যৌনাঙ্গের সুরক্ষা করে।’ (সূরা নূর-৩০-৩১)

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো গায়র মুহরাম পুরুষ ও মহিলা যদি নির্জনে একত্রিত হয় সেখানে তৃতীয়জন থাকে শয়তান। বস্তুত, ইসলাম জেনা-ব্যভিচার ও তত্প্রাসঙ্গিক সব অনাচার নিষিদ্ধ করেছে। রসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসে বলেছেন, চোখের জেনা হলো দেখা আর মুখের জেনা হলো অবৈধ রসালাপ করা। প্রবৃত্তিতা কামনা করে আর যৌনাঙ্গ সেটিকে বাস্তবায়ন করে কিংবা প্রত্যাখ্যান করে। মহান আল্লাহ জান্নাতিদের পরিচয় দিয়ে বলেছেন, ‘তারা মহান আল্লাহর সঙ্গে অন্য ইলাহকে ডাকে না বিধিবহির্ভূত কাউকে হত্যা করে না এবং জেনা করে না।’ (ফুরকান-৬৮) রসুলুল্লাহ (সা.) বায়আত নিতেন যেসব বিষয়ে তার একটি হলো জেনা করবে না। সমাজকে জেনামুক্ত রাখার দায়িত্ব নেতৃস্থানীয় ও জনগণ সবার। যে সমাজে জেনার পথ উন্মুক্ত থাকে সে সমাজে আল্লাহর গজব নাজিল হয়। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘ব্যভিচারী নারী এবং ব্যভিচারী পুরুষ তাদের প্রত্যেককে তোমরা একসঙ্গে করে বেত্রাঘাত করবে। দীনের বিধান কার্যকরে ওদের প্রতি যেন তোমাদের কোনো সহানুভূতি না জন্মে।’ (নূর-২) উল্লেখ্য, শরিয়ত ঘোষিত শাস্তি কার্যকর করবে শুধু বিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারবে না। জেনাকারীদের জন্য পরকারে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে, মেরাজের রাতে জাহান্নাম পরিদর্শনে গিয়ে রসুলুল্লাহ (সা.) দেখতে পেলেন যে, কতক নারী লোহার রডের সঙ্গে ঝুলে রয়েছে। তাদের যৌনাঙ্গ হতে পুঁজ পানি ঝরছে। জিবরাইল (আ.) বললেন, এরা জেনাকারী ব্যভিচারী নারী-পুরুষ। মহান আল্লাহ সবাইকে এই গর্হিত অপরাধ থেকে মুক্ত রাখুন।  আমিন।

সর্বশেষ খবর