২৮ মার্চ, ২০১৬ ১৩:১৪

তওবাকারীদের প্রতি আল্লাহ ক্ষমাশীল

মাওলানা মুহম্মাদ সাহেব আলী

তওবাকারীদের প্রতি আল্লাহ ক্ষমাশীল
গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া মানুষের স্বভাবের অন্তর্গত। শয়তানের ধোকায় মানুষ ভুল পথে পরিচালিত হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আদম সন্তান সবাই অপরাধ করে। অপরাধীদের মধ্যে উত্তম তারাই যারা তওবা করে।’ (তিরমিজি)

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘তোমরা যদি গুনাহ না কর, তবে আল্লাহ তোমাদের সরিয়ে দিবেন এবং সে স্থলে এমন জাতি সৃষ্টি করবেন যারা গুনাহ করবে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, তখন তিনিও তাদের ক্ষমা করে দিবেন।’ (মুসলিম)

মানুষ মাত্রই গুনাহ করে। গুনাহের জন্য তওবা করতে দেরি করা এবং গুনাহের কাজে অটল থাকা মস্ত বড় অন্যায়। শয়তান সব সময় ধোকা দেওয়ার চেষ্টা করে। সাত ধরনের বাধা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে শয়তান মানুষের ওপর বিজয়ী হওয়ার চেষ্টা করে। একটি বাধায় অপারগ হলে তার পরেরটি দ্বারা চেষ্টা চালায়। সেগুলো হচ্ছে— ১. সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে : শিরক ও কুফর। ২. এতে সফল না হলে বিদআত তথা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে এবং রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবিদের অনুসরণের ক্ষেত্রে নতুন নীতি সৃষ্টি করার মাধ্যমে ভুল পথে পরিচালিত করার চেষ্টা চালায়। ৩. এতেও যদি না হয়, তখন কবিরা গুনাহে লিপ্ত করার চেষ্টা করে। ৪. এক্ষেত্রে সামর্থ্য না হলে ছগিরা গুনাহে লিপ্ত করে। ৫. এতেও সফল না হলে, দুনিয়াবি বৈধ কাজ বেশি পরিমাণে করায়। ৬. এখানেও অপারগ হলে— অধিক ফজিলত ও বেশি নেকি আছে এমন কাজের তুলনায় কম নেকির কাজের দ্বারা। ৭. এতেও সফল না হলে পথভ্রষ্ট করার জন্য জিন ও মানুষরূপী শয়তানকে তার বিরুদ্ধে নিয়োগ করে দেয়।

গুনাহের কাজ দুই ভাগে বিভক্ত : ১. কবিরা বা বড় গুনাহ। যে সব কাজে দুনিয়াতে দণ্ডবিধি নির্ধারণ করা আছে অথবা আখেরাতে শাস্তির ভয় দেখানো হয়েছে অথবা আল্লাহর গজব বা লা’নত বা ইমান থাকবে না এমন কথা বলা হয়েছে তাকে কবিরা গুনাহ বলে। ২. ছগিরা (ছোট) গুনাহ। এটি হচ্ছে নিম্নপর্যায়ের পাপ। বিভিন্ন কারণে ছগিরা গুনাহ কবিরা গুনাহে পরিণত হতে পারে। যেমন : ছোট গুনাহের কাজে অটল থাকা অথবা তা বারবার করা বা তা তুচ্ছ মনে করা বা গুনাহের কাজে লিপ্ত হতে পেরে গর্ব করা অথবা গুনাহের কাজ প্রকাশ্যে করা।

সব ধরনের পাপ থেকেই তওবা করা বিশুদ্ধ। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তওবার দরজা উন্মুক্ত। তওবাকারী যদি নিজ তওবায় সত্যবাদী হয়, তবে তার পাপরাশীকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করা হবে— যদিও তা আকাশের মেঘমালার সংখ্যা বরাবর অধিক হয়।

তওবা কবুল হওয়ার শর্তাবলি : ১. সংশ্লিষ্ট গুনাহের কাজটিকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা, ২. কৃত অপরাধের কারণে লজ্জিত হওয়া, ৩. ভবিষ্যতে পুনরায় উক্ত অপরাধে লিপ্ত হবে না এ কথার ওপর দৃঢ় অঙ্গীকার করা। অন্যায় কাজটি যদি মানুষের অধিকার সংশ্লিষ্ট হয়, তবে উক্ত অধিকার তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর