১৩ আগস্ট, ২০১৬ ০৯:৩৯

রিও অলিম্পিকে অ্যাথলেটরা বেছে নিচ্ছেন মহানবীর চিকিৎসা পদ্ধতি

অনলাইন ডেস্ক

রিও অলিম্পিকে অ্যাথলেটরা বেছে নিচ্ছেন মহানবীর চিকিৎসা পদ্ধতি

রিও অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার সুবাদে ইতিমধ্যে সব মিলিয়ে ২২টি স্বর্ণের মালিক হয়েছেন খ্যাতনামা মার্কিন সাঁতারু মাইকেল ফেলপস। তবে চলমান আসরে ১৯তম স্বর্ণজয়ের মুহূর্তে ফেলপসের শরীরজুড়ে থাকা কালচে-গোলাপি রঙের দাগ আলোচনায় নিয়ে এসেছে এক ধরনের প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতির কথা। যা মূলত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণিত ও নির্দেশিত একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা। যাকে আধুনিক বিজ্ঞানের পরিভাষায় কাপিং (Cupping) থেরাপি এবং আরবিতে হিজামা (حِجَامَة ) বলা হয়। 

আরবি ‘আল হাজম’ থেকে এসেছে এই শব্দের উৎপত্তি। যার অর্থ চোষা বা টেনে নেওয়া। এই প্রক্রিয়ায় সুঁচের মাধ্যমে নেগেটিভ প্রেশার দিয়ে (টেনে/চুষে) নিস্তেজ প্রবাহহীন দূষিত রক্ত বের করে আনা হয়। এতে শরীরের মাংসপেশীসমূহের রক্তপ্রবাহ দ্রুততর হয়। পেশী, চামড়া, ত্বক ও শরীরের ভেতরের অরগানসমূহের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি শরীর সতেজ ও শক্তিশালী হয়।

বলা হয়ে থাকে, হিজামার মাধ্যমে ব্যাকপেইন, উচ্চ রক্তচাপ, পায়ে ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা, মাথাব্যথা (মাইগ্রেন), ঘাড়ে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, আর্থ্যাইটিজ, বাত, ঘুমের ব্যাঘাত, থাইরয়েড ব্যাঘাত, জ্ঞান এবং স্মৃতিশক্তিহীনতা, ত্বকের বর্জ্য পরিষ্কার, অতিরিক্ত স্রাব নিঃসরণ বন্ধ করা, অর্শ, অন্ডকোষ ফোলা ও ফোঁড়া-পাঁচড়া ইত্যাদি প্রতিরোধ হয়। এছাড়াও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, শরীর সতেজ ও কর্মস্পৃহা বাড়াতেও কার্যকারী ভূমিকা রাখে হিজামা।

জলদানব ফেলপস ছাড়াও অনেক ক্রীড়াবিদের কাছে এটা খুবই জনপ্রিয় একটি থেরাপি। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক সংস্থাও (আইওসি) এই থেরাপিকে বৈধতা দিয়েছে। আগেও অনেক অ্যাথলেটের গায়ে এমন দাগ দেখা গেছে। কিন্তু আলোচনা তৈরি হলো ফেলপসকে দেখে।

আমাদের দেশে হিজামাকে সাধারণ অর্থে শিঙা লাগানো বলা হয়। আরব দেশে উৎপত্তি অতি প্রাচীন এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে নবীর দেখানো বা বলা চিকিৎসা পদ্ধতি বলা হয়। হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজামার উপকারিতা সম্পর্কে উম্মতকে অবহিত করেছেন। তিনি নিজে এ পদ্ধতির চিকিৎসা ব্যবহার করেছেন এমনকি অন্যকে হিজামা পদ্ধতির চিকিৎসা নিতে উৎসাহিতও করেছেন। 

হাদিসে আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজামা করেছেন মাথা ব্যথার প্রতিষেধক হিসেবে। পিঠের ব্যথার জন্য দুই কাঁধের মাঝে ও ঘাড়ের দু’টি রগে। হিজামার উপকারিতা সম্পর্কে সিহাহ সিত্তার গ্রন্থসমূহে বহু হাদিস রয়েছে।

হযরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর সূত্রে নবী করিম (সা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রোগমুক্তি তিনটি জিনিসের মধ্যে নিহিত। এগুলো হলো- শিঙা লাগানো, মধু পান করা এবং আগুন দিয়ে গরম দাগ দেওয়া। তবে আমি আমার উম্মতকে আগুন দিয়ে গরম দাগ দিতে নিষেধ করি।’ –সহিহ বোখারি: ৫৬৮১

হিজামার সময় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম অবশ্যই জীবাণুমুক্ত হতে হবে। অতঃপর হিজামার স্থানে ধারালো সুঁচ বা ব্লেড দ্বারা হালকাভাবে ছিদ্র করে নিতে হবে। পরে কাপ সেট করে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এভাবে দূষিত রক্ত বের হয়ে কাপে জমতে থাকবে। 

এখানে আরও একটা বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, হিজামার পর সাধারণত ওই স্থানে গোল চিহ্ন বা ফোলা অনুভূত হয়। যা সর্বোচ্চ তিন দিন থাকতে পারে। এটা দূষিত রক্ত বের হওয়ার চি‎হ্ন।

বিডি-প্রতিদিন/১৩ আগস্ট, ২০১৬/মাহবুব

সর্বশেষ খবর