২৪ এপ্রিল, ২০১৭ ১৫:১৮

মহিমান্বিত মেরাজের রাত

মাওলানা মুহম্মাদ জিয়াউদ্দিন

মহিমান্বিত মেরাজের রাত

মেরাজ শব্দের অর্থ ঊর্ধ্বালোকে গমন করা। মহান আল্লাহ রসুল (সা.)-কে পৃথিবী থেকে ঊর্ধ্বালোকে নিয়ে যে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করেছেন তাকে মেরাজ বা ঊর্ধ্বালোকে ভ্রমণ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। আধ্যাত্মিকতার এই ঘটনা রজব মাসের ২৭ তারিখে সংঘটিত হয়েছিল। রসুল (সা.)-এর মেরাজের সফরে দুটি পর্ব বয়েছে। একটি হলো, মক্কা থেকে বায়তুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত সফর। আর অপরটি হলো, বায়তুল মোকাদ্দাস থেকে বিভিন্ন আসমানে আরোহণ ও ভ্রমণ। প্রথম পর্বকে ইসরা আর দ্বিতীয় পর্বকে মেরাজ বলে। ইসরা বা রাত্রিকালীন সফর এবং মেরাজ বা উর্ধ্বালোকে ভ্রমণ উভয় সফর এক রাতেই হয়েছিল। পবিত্র কোরআনে ইসরা সম্পর্কে এরশাদ হচ্ছে, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রিবেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি।

যাতে আমি তাঁকে কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। নিশ্চয় তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। ’ সূরা : বনী ইসরাইল, আয়াত : ১। তাফসিরে ইবনে কাসীরে এসেছে, মেরাজের ঘটনা এই যে, নবী করিম (সা.) এই সফরে রাত্রিবেলায় জাগ্রত অবস্থায় করেছেন। তিনি মক্কা মুকাররমা হতে বায়তুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত বোরাকযোগে সফর করেন। বোরাক হলো এক প্রকার জান্নাতি প্রাণী যা রসুল (সা.)-কে বহন করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। বায়তুল মোকাদ্দাস থেকে তিনি জান্নাতি সিঁড়ির মাধ্যমে আসমানে গমন করেন। সিঁড়িটির মধ্যে ধাপ ধাপ করা ছিল। একের পর এক সব আসমানে তিনি গমন করেন। প্রত্যেক আকাশে ফেরেশতারা তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। প্রত্যেক আসমানে অবস্থানরত নবীদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। প্রত্যেক নবী বিশ্বনবীকে সাদর সম্ভাষণ জানান। জিবরাইল প্রত্যেক নবীর সঙ্গে বিশ্বনবীকে পরিচয় করিয়ে দেন। অতঃপর রসুলে পাক (সা.) এমন এক ময়দানে পৌঁছেন যেখানে ভাগ্যলিপি লেখার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। এরপর তিনি ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ দেখেন যেখানে আল্লাহর নির্দেশে স্বর্ণের প্রজাপতি এবং বিভিন্ন প্রকার প্রজাপতি ইতস্তত ছোটাছুটি করছিল। ফেরেশতারা স্থানটিকে ঘিরে রেখেছিল। এখানে রসুল (সা.) হজরত জিবরাইল (আ.)-কে স্বরূপে দেখেন। তাঁর ছয়শত পাখা ছিল। সেখানেই তিনি দিগন্তবেষ্টিত সবুজ রঙের রফরফ দেখতে পান। রফরফ বলা হয় এক প্রকার পাল্কিকে। তিনি বায়তুল মামুরও দেখতে পান। বায়তুল মামুর হলো সপ্তম আসমানে অবস্থিত একটি মসজিদ। যেখানে প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা আল্লাহকে সেজদা করে। যারা একবার সেখানে প্রবেশ করে তারা কেয়ামত পর্যন্ত আর কখনো সেজদা করার সুযোগ পাবে না। এরপর রসুল (সা.) জান্নাত ও জাহান্নাম স্বচক্ষে দেখেন। সেখানে মহান আল্লাহ রসুল (সা.)-এর উম্মতের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেন। রসুল (সা.) মেরাজে থাকা অবস্থায় নামাজ ফরজ হওয়ার দ্বারা নামাজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়। কারণ অন্যান্য আমল ফরজ হয়েছে রসুল (সা.)-এর কাছে জিবরাইলকে পাঠানোর মাধ্যমে। আর নামাজ ফরজ করা হয়েছে স্বয়ং রসুল (সা.)-কে আসমানে ডেকে নিয়ে। এর দ্বারা নামাজের গুরুত্ব ও মর্যাদা অন্যান্য এবাদতের তুলনায় যে বেশি তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। মেরাজ শেষে রসুল (সা.) জমিনে অর্থাৎ বায়তুল মোকাদ্দাসে ফিরে আসেন। সেখান থেকে বোরাকে করে ফিরে যান মক্কা মুকাররমায়।

লেখক : ইসলামী গবেষক।


বিডি-প্রতিদিন/২৪ এপ্রিল, ২০১৭/মাহবুব

সর্বশেষ খবর