৭ মার্চ, ২০১৮ ০৯:৪৮

নামাজ আদায়ের নিয়মনীতি কীভাবে শিখতে হবে

মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ

নামাজ আদায়ের নিয়মনীতি কীভাবে শিখতে হবে

নামাজ ইসলামের ফরজ ইবাদত। হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে যেভাবে নামাজ পড়তে দেখো সেভাবে নামাজ পড়।’ রসুল (সা.)-এর উপরোক্ত নির্দেশটা ছিল সরাসরি তার সাহাবাদের উদ্দেশ করে। তবে এই নির্দেশ মূলত সব উম্মতের জন্য প্রযোজ্য, সাহাবাদের জন্য সীমাবদ্ধ নয়।

এখন প্রশ্ন জাগে তাহলে সাহাবায়ে কিরামের পরবর্তী উম্মত যারা রসুল (সা.)-কে সরাসরি দেখার সৌভাগ্য লাভ করেনি যেমন আমরা, আমাদের জন্য রসুলের সেই নামাজের ধরন-পন্থা-পদ্ধতি বোঝার উপায় কী?

এই প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো— সাহাবাদের বিবরণ ও তাদের বর্ণিত আমল থেকে তা শিখতে হবে। ওই প্রশ্নের বিস্তারিত জবাব হচ্ছে ফিকহের ইমামদের দ্বারস্থ হয়েই পূর্ণাঙ্গ নামাজ শিখতে হবে। যার কারণ নিম্নরূপ— রসুল (সা.) থেকে সর্বপ্রথম নামাজের তরিকা শিখেছিলেন সাহাবায়ে কিরামরা। নবী (সা.) তাদের মৌখিকভাবেও শিক্ষা দিয়েছেন এবং নিয়মিত তাদের নিয়ে নামাজ আদায় করে আমলিভাবেও নামাজ শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর সাহাবায়ে কিরাম থেকে নামাজ শিখেছেন তাবেয়িনে কিরাম। তাদের কাছ থেকে শিখেছেন তাবে-তাবেয়িরা। এভাবে প্রত্যেক উত্তরসূরি পূর্বসূরিদের কাছ থেকে নামাজ আদায়ের নিয়মনীতি ও পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। কিয়ামত পর্যন্ত এই ধারাবাহিকতা চলমান থাকবে। এই নামাজকেই বলা হয় সুন্নাহসম্মত নামাজ।

অন্যদিকে রসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় শরিয়তের বিধিবিধান মানসুখ বা রহিত হওয়ার ধারাও চলমান ছিল। বহু বিষয় নামাজে বৈধ থাকলেও পরবর্তীতে তা রহিত হয়ে জীবনের শেষ দিকে নামাজের আসল রূপরেখা তৈরি হয়েছে। অন্যান্য বিধিবিধানের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটেছে। সুতরাং এটা খুবই স্বাভাবিক যে সাহাবারা সবসময় রসুল (সা.)-এর সাহচর্যে থাকতে না পারায় তাদের পক্ষে হয়তো সেটা জানারও সুযোগ হয়নি।

এসব কারণে সাহাবায়ে কিরামের বর্ণনা বিবরণের মধ্যে নামাজসহ বিভিন্ন বিধিবিধানের ক্ষেত্রে মতপার্থক্য হওয়াটাই স্বাভাবিক। সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে কিছু বিশিষ্ট সাহাবা ছিলেন যারা বুদ্ধি-প্রজ্ঞার দিক থেকেও অগ্রগামী। রসুলের সাহচর্য গ্রহণের ক্ষেত্রেও সবার আগে এবং রসুলের আস্থা ও নির্ভরযোগ্যতার ক্ষেত্রেও তারা অন্যদের তুলনায় এগিয়ে ছিলেন। এদের বর্ণনা ও বিবরণ সাধারণত অন্যদের বর্ণনার সঙ্গে বিরোধ হলে এই বিশেষ সাহাবাদের বিবরণ ও বিশ্লেষণই অগ্রগণ্য থাকে। এর মধ্যে ছিলেন চার বিশিষ্ট খলিফা যথাক্রমে হজরত আবু বকর (রা.), হজরত উমর (রা.), হজরত উসমান (রা.), হজরত আলী (রা.), হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)সহ আরও অনেকে।

মোট কথা, নামাজের নিয়মনীতি, পন্থা-পদ্ধতির বিস্তারিত বিবরণ সাহাবারাই তাবেয়িনদের শিখিয়েছেন। আর তারা তাবে-তাবেয়িনকে শিখিয়েছেন। এভাবে উত্তরপ্রজন্ম পূর্বপ্রজন্ম থেকে নামাজ আদায়ের নিয়ম-পদ্ধতি প্রকৃতপক্ষে আমলিভাবে এবং কিছু কিছু মৌখিক বিবরণের মাধ্যমেই গ্রহণ করেছেন। একে শরিয়তের ভাষায় তাওয়ারুস বা তায়ামুল বলা হয়। আল্লাহ আমাদের সহিভাবে নামাজ আদায়ের তাওফিক দান করুন।

লেখক : শায়খুল হাদিস ও প্রধান মুফতি, শাইখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা

সর্বশেষ খবর