১১ মার্চ, ২০১৮ ০৯:০১

পরকালের পাঁচ স্টেশন

মাওলানা ওলিউল্লাহ পাটোয়ারী

পরকালের পাঁচ স্টেশন

প্রত্যেক মানুষ মৃত্যুবরণ করবে। পৃথিবীর কেউ মৃত্যুর কবল থেকে নিস্তার পাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেককেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৮৫)। এতে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয়, সবাইকে একদিন অবশ্যই আখিরাতের সফর করতে হবে। সেই পরিভ্রমণের লক্ষ্যের কিনারায় উপনীত হওয়ার জন্য কয়েকটি মঞ্জিল বা স্টেশন অতিক্রান্ত করা অপরিহার্য, সেগুলো হলো— প্রথম মঞ্জিল : প্রথম মঞ্জিল ‘সকরাতুল মাওত’ তথা মৃত্যুর দুর্বিষহ কষ্টের মঞ্জিল। এই ভয়াবহ অবস্থা প্রকাশ পাওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত মানব জাতির জন্য তওবার দরজা অবারিত থাকে। এ সময় সৎ ব্যক্তিদের অভ্যর্থনা দেওয়ার জন্য জান্নাত থেকে ফেরেশতা অবতরণ করেন। এ জন্য অনেক সময় মৃত্যুর আগে আওয়াজ আসে, ‘হে প্রশান্ত অন্তর! তুমি তোমার পালনকর্তার কাছে ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে। অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (সূরা আল ফজর : ২৭-৩০)। পক্ষান্তরে পাপিষ্ঠ ব্যক্তিদের মৃত্যুর সময় জাহান্নাম থেকে ফেরেশতারা নেমে আসেন। এ সময় তারা তাদের রুহু কবজ করাকালে দুর্গন্ধ অনুভব করেন। এর ফলে ফেরেশতারা নাসিকা বস্ত্র দ্বারা আবৃত করেন। দ্বিতীয় মঞ্জিল : মানব জাতির জন্য সফরে আখিরাতের দ্বিতীয় মঞ্জিল হচ্ছে কবর। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা কবরকে মাটির স্তূপ মনে করো না বরং কবর হচ্ছে জান্নাতের বাগিচা অথবা জাহান্নামের গর্তের মধ্য থেকে একটি গর্ত।’  (তিরমিজি)। তৃতীয় মঞ্জিল : সফরে আখিরাতের তৃতীয় মঞ্জিল হাশর। হাদিসে বিধৃত হয়েছে, কাফিরদের জন্য হাশরের এক দিন ৫০ হাজার বছরের সমতুল্য, পক্ষান্তরে মুমিনদের জন্য ক্ষণিকের বরাবর হবে। সেদিন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না। সেই ছায়াতলে শুধু সাত ধরনের বান্দা স্থান পাবে। এক. ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী শাসক। দুই. সেসব যুবক, যারা যৌবনকালে আল্লাহর ইবাদতে রত ছিল। তিন. সেই ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের দিকে অটুট থাকে। চার. সেই দুই ব্যক্তি, যাদের মাঝে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছে। এই ভালোবাসার ভিত্তিতে তারা সংঘবদ্ধ হয়েছে এবং এরই ভিত্তিতে তাদের বিচ্ছেদ হয়েছে। পাঁচ. সেই ব্যক্তি, যাকে পরমাসুন্দরী মহিলা নিজের দিকে আকৃষ্ট করতে চেয়েছিল, আর সে আল্লাহর ভয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ছয়. সেসব ব্যক্তি, যারা নির্জনে আল্লাহর জিকির করে এবং তাদের চোখ থেকে অঝরে অশ্রু প্রবাহিত হতে থাকে। (বুখারি)। চতুর্থ মঞ্জিল : সফরে আখিরাতের চতুর্থ মঞ্জিল হচ্ছে মিজান। মিজানের সময় সবার আশঙ্কা থাকে, নেক আমলের পাল্লা ভারী হবে না গুনার পাল্লা ভারী হবে। পঞ্চম মঞ্জিল : সফরে আখিরাতের পঞ্চম মঞ্জিল হচ্ছে পুলসিরাত। এটি এমন পুল, যা চুলের চেয়েও অধিক সূক্ষ্ম এবং তলোয়ারের চেয়েও অধিক তীক্ষ। এর ওপর দিয়ে সব মানুষকে অতিক্রম করতে হবে। এটি হবে তিমিরাচ্ছন্ন এক ভয়ানক সেতু, যা অতিক্রমকালে মুমিনদের সম্মুখে ইমানের আলোকরশ্মি উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে। অবিশ্বাসীদের কাছে আলো থাকবে না। ফলে তারা মুমিনদের কাছে আলো প্রার্থনা করবে। কিন্তু তাদের তা দেওয়া হবে না। মুমিন ও কাফিরদের মাঝে একটি দেয়াল তোলা হবে।

লেখক : খতিব : বাইতুন নূর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, দক্ষিণ পীরেরবাগ, ওলি মার্কেট, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর