৫ এপ্রিল, ২০১৮ ১১:৫৯
ধর্মতত্ত্ব

রজব মাসের নেক আমল

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

রজব মাসের নেক আমল

রমজান যেভাবে ‘র’ অক্ষর দিয়ে শুরু অনুরূপ রজব মাসও ‘র’ অক্ষর দিয়ে শুরু। প্রতিবছর আমাদের কাছে রজব মাস ঘুরে ঘুরে আগমন করে। এ রজব মাসের শিক্ষা হলো বেশি বেশি নেক আমল করে সত্যিকারের পরহেজগার-মুত্তাকি হওয়া। হজরত রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজবের চাঁদ দেখা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রহমত ও বরকতের দোয়া করতেন।  তিনি দোয়া করতেন এই বলে যে, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শা’বান ওয়া বাল্লিগনা রমাজান’। হে আল্লাহ রজব ও শাবান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন। এবং এ বরকতকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন (যাতে পবিত্র রমজানের ইবাদত সঠিক ও সুস্থতার সঙ্গে আদায় করতে পারি)। একজন মানুষ যখন খাঁটি দিলে ফারায়েজ ওয়াজিবাত ও সুন্নতে মুয়াক্বাদাগুলো আদায় করে তখন তার থেকে শরিয়তের ছোট ছোট আমলগুলোও বাদ পড়ে না। সে ছোট ছোট আমল করে নেকির খাতা পূর্ণ করে। বান্দার যখন একিন ও ইহসানের গুণ হাসিল হয়। একিন অর্থ আল্লাহ থেকে সবকিছু হওয়ার বিশ্বাস অন্তরে রেখে মাখলুক থেকে দিল পরিষ্কার করা। মাখলুক কিছু করতে পারে না এ কথা অন্তরে গেঁথে নেওয়া। আর ইহসান অর্থ সারাক্ষণ আল্লাহর ধ্যান অন্তরে সজাগ রাখা, সব ধরনের ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা। তাঁকে হাজির নাজির মনে করে ইবাদতসহ সব পার্থিব কাজ করা। যা নিয়মিত জিকির করার দ্বারা হাসিল হয় এবং বুজুর্গদের সোহবতে থেকে তাঁদের খেদমত করে সাহাবায় কেরামের মুজাহাদার অনুকরণ করে নবীর ভালোবাসায় তাঁর তরিকায় চলতে পারলে এ ইহসান অতি সহজে হাসিল হয়। এ ধরনের গুণের অধিকারী মানুষকেই মূলত মুত্তাকি-পরহেজগার বলা হয়। মহান আল্লাহতায়ালা পৃথিবী ও মানব জাতিকে এ জন্যই সৃষ্টি করেছেন যে, তাঁর বান্দারা এ পৃথিবীতে স্বীয় নেক আমলের মাধ্যমে আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহ করবে এবং এমন সৎ কর্ম সম্পাদন করবে যা দ্বারা আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি ও রেজামন্দি হাসিল হবে। আর সঠিকভাবে ইবাদত-বন্দেগি করার জন্যই মহান রব্বুল আলামিন যুগে যুগে নবী-রসুলদের সুমহান জামাত পৃথিবীর বুকে প্রেরণ করেছেন। কারণ দুনিয়া হলো ইবাদত করার জায়গা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘দুনিয়া হলো পরকালের খেতস্বরূপ’। অর্থাৎ মানুষ দুনিয়াতে বেশি বেশি নেক আমল করবে আর তার ফল পরকালে ভোগ করবে।  মানব জাতি দুনিয়ার কাজকর্মে এমনভাবে ঝুঁকে পড়ে যে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিজেদের দুনিয়াকে সর্বাধিক সুন্দর ও উন্নত করার ও দুনিয়ার হায়াতকে অধিকতর সুখকর ও মজাদার করে তোলার ফিকির করতে থাকে। এর জন্য হাড়ভাঙা মেহনত করতে থাকে। পরিণামে কেউ কেউ দুনিয়ার কিছুটা পায় আর অনেকে মেহনতই করে যায় দুনিয়ার কিছুই সে পায় না, বরং সে বেকার খাটাখাটনি করে যায়। কিন্তু এর বিপরীত। বান্দা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে নেক আমল করে আল্লাহপাক তার প্রতি নেকিকে দশগুণ বাড়িয়ে দেন এবং দুনিয়া ও পরকালে শান্তি আর সফলতাদান করেন। পদে পদে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও নুসরত পেতে থাকেন। প্রিয় পাঠক! একটু চিন্তা করুন! যে কাজে উভয় জাহানের সফলতা আসবে বুদ্ধিমান লোকেরা তাই করে থাকে। পবিত্র কোরআনের অনেক জায়গায় আল্লাহতায়ালা বুদ্ধিমান লোকদের খেতাব করে বিভিন্ন আয়াত নাজিল করেছেন। ইসলাম ধর্ম পরকালীন জীবনকে সুখময় ও সুন্দর করে তোলার জন্য যে পথ ও পদ্ধতি বাতলে দিয়েছে মূলত সেগুলো কঠিন বিষয় নয়। মানুষ যদি সেসব মত ও পথ অবলম্বন করে, তবে তার পার্থিব জীবনটাও পুরোপুরি সুখময় হয়ে যায়। পরকালে অনাবিল শান্তির জায়গা তো তার জন্য অপেক্ষা করছে। মরণের পরপরই শান্তি আর শান্তি ভোগ করবে। ফারায়েজ, ওয়াজিবাত, সুন্নতে মুয়াক্কাদাগুলো আদায়ের পর মহান আল্লাহতায়ালা হজরত রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে এমন কিছু আমলের কথাও বাতলে দিয়েছেন যেগুলোর ওপর আমল করতে না তেমন কোনো কষ্ট হয়, না তাতে অনেক সময় নষ্ট হয়, না তাতে কোনো পয়সা খরচ হয়। শুধু একটু ধ্যান ও খেয়ালকে জাগ্রত রাখার ব্যাপার মাত্র। মানুষ যদি একটু ধ্যান ও খেয়ালের সঙ্গে কাজ করে তবে বিশেষ কোনো কষ্ট-ক্লেশ ও ব্যয়-খরচ ছাড়াই তার আমলনামায় বিশাল নেকির সম্ভার সঞ্চিত হতে থাকে এবং যদি এ ছোট ছোট আমলগুলো পাবন্দীর সঙ্গে করতে থাকে তাহলে ইনশা আল্লাহ অতি সহজেই আখেরাতে বিশাল সওয়াবের স্তূপ জমা হবে। প্রিয় পাঠক! আমলনামায় নেকি বৃদ্ধি করার যথাযথ মূল্য ও মর্যাদা আজ আমরা বুঝতে পারছি না। ময়দানে মাহশারে ছোট একটি নেকির কত প্রয়াজন তা শুধু চক্ষুযুগল বন্ধ হওয়ার পরেই টের পাওয়া যাবে। তাই পবিত্র রজব মাস আমাদের মাঝে উপস্থিত। আমরা সময় নষ্ট না করে একটু ভেবেচিন্তে পথচলার চেষ্টা করি। আমরা প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর মসজিদে বসে জিকির আজকার করি। সূরা ইয়াসিনের তেলাওয়াত এবং সূরা হাশরের শেষ আয়াতগুলো তেলাওয়াত করি। ইশরাকের নামাজের পর মসজিদ থেকে বের হই। জোহরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করি। একা মসজিদে না গিয়ে সঙ্গে করে দু-চারজন মুসলিম ভাইকে নামাজের দাওয়াত দিয়ে মসজিদে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। আসরের নামাজ মসজিদে আদায় করে নামাজের পর কিছুক্ষণ ধ্যান করি। মাগরিবের নামাজ মসজিদে আদায় করে সূরা ওয়াক্বেয়া তেলাওয়াত করার পর আউয়্যাবিনের ছয় রাকাত নামাজ মসজিদে আদায় করি। এশার সময় হলে যথাসময় জামাতের সঙ্গে সালাত আদায় করি।  ঘুমানোর আগে সূরা মূলক তেলাওয়াত করি। সঙ্গে সঙ্গে আরও কিছু নেক আমল করি।  শেষ রাতে দুই-চার রাকাত তাহাজ্জুত নামাজ পড়ার অভ্যাস গড়ি। ইনশা আল্লাহ আল্লাহতায়ালা আমাদের রুজি-রোজগারে বরকত দেবেন। পরকালে শান্তি দান করবেন।

 লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব বারিধারা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর