আল্লামা ইবনুল কায়িম জাওজি (রহ.) বলেন, আল্লাহর কাছে পৌঁছানোর সবচেয়ে নিকটবর্তী দরজা নিঃস্বতা। কেননা তখন নিজের বলতে কোনো অবস্থা ও আবাস থাকে না। এমন কোনো কারণ থাকে না, যা নিয়ে সে ব্যস্ত থাকবে এবং এমন কোনো মাধ্যম থাকে না, যার বিনিময়ে অনুগ্রহ কামনা করবে। সে আল্লাহর কাছে প্রবেশ করে দৈন্য ও নিঃস্বতা নিয়ে, দারিদ্র্য ও আশ্রয়হীনতার ভগ্ন হৃদয় নিয়ে।
ফলে সে তার সব কিছু আল্লাহর হাতে সমর্পণ করে দেয়। আল্লাহকে পাওয়ার নিকটতম পথ ইবাদত এবং আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে সবচেয়ে গভীর দুর্ভেদ্য পর্দা পার্থিব কামনা। (মাওয়াইজুল ইমাম ইবনিল কাইয়িম, পৃষ্ঠা ২১)
তিনি আরো বলেন, মহান আল্লাহ তাঁর পথের পথিকদের স্তর ও গন্তব্য বর্ণনা করেছেন। আল্লাহপ্রেমীদের প্রথম স্তর সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ কোরো এবং সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কোরো।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৪১-৪২)।
অর্থাৎ প্রথম স্তরে বান্দা অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির ও ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভের মুজাহাদা শুরু করে। এর মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি তাঁর আবেগ, আগ্রহ ও ভালোবাসা প্রকাশ পেতে থাকে।
দ্বিতীয় স্তর সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতারাও তোমাদের জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে অন্ধকার থেকে তোমাদের আলোকে আনার জন্য। আর তিনি মুমিনদের প্রতি পরম দয়ালু।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৪৩)
অর্থাৎ বান্দা যখন আল্লাহর ভালোবাসা লাভে তাঁর আকাঙ্ক্ষার সত্যতা প্রমাণ করে জিকির ও মুজাহাদার মাধ্যমে, তখন আল্লাহ তাদের প্রতি অনুগ্রশীল হন এবং ফেরেশতারা তাদের আল্লাহর মারেফাতের নুরে আলোকিত করার দোয়া করে।
তৃতীয় স্তর সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘যেদিন তারা আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, সেদিন তাদের প্রতি অভিবাদন হবে সালাম। তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন উত্তম প্রতিদান।’ (সুরা আহজাব : ৪৪)
বান্দার সর্বোচ্চ চেষ্টা-সাধনা, ফেরেশতাদের দোয়া ও আল্লাহর অনুগ্রহে আল্লাহপ্রেমীদের জন্য জান্নাতের ফায়সালা করা হয়।
জান্নাতের সবচেয়ে বড় পুরস্কার মহান আল্লাহর সাক্ষাৎ। আল্লাহপ্রেমী বান্দারা যখন আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের পরম আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন তাদের ফেরেশতারা সালামের মাধ্যমে অভিনন্দন জানাবে। এভাবেই একজন বান্দার পরম আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে এবং সে তার ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের চূড়ান্ত গন্তব্য আল্লাহর সাক্ষাৎ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তখন তাঁর ও মহান রবের মধ্যে কোনো আবরণ বা পর্দা থাকবে না।
আল্লাহকে পাওয়ার সাধনা যেমন ব্যক্তি একাকী করতে পারে, তেমন সম্মিলিতভাবে করতে পারে। নিম্নোক্ত হাদিসে যার ইঙ্গিত পাওয় যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা জান্নাতের বাগান অতিক্রম কোরো, তখন তা আবাদ কোরো। সাহাবিরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), জান্নাতের বাগান কী? তিনি বললেন, জিকিরের মজলিস। নিশ্চয়ই আল্লাহর রয়েছে ফেরেশতাদের একটি ভ্রমণকারী দল। যারা জিকিরের মজলিস অনুসন্ধান করতে থাকে। তারা জিকিরের মজলিস খুঁজে পেলে তা ঘিরে রাখে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১০)
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন