হতাশা ও বিষণ্নতা কখনোই কোনো সমস্যার সমাধান নয়, বরং বিষণ্নতায় বাড়ে বিপদ। হতাশা ও বিষণ্নতা মানুষের কর্মোদ্যম নষ্ট করে, মানুষের সামনে থাকা সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে দেয় না। তাই বিষণ্নতা কখনো মুমিনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা হীনবল হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না; তোমরাই বিজয়ী যদি তোমরা মুমিন হও।’
(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৯)
কোরআন গবেষকরা বলেন, উল্লিখিত আয়াতটি উহুদ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর চরম বিপর্যয়ের পর অবতীর্ণ হয়। যে যুদ্ধে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) গুরুতর জখম হন। এমন পরিস্থিতির পর মহান আল্লাহর নির্দেশ হলো বিষণ্ন ও হীনবল হওয়া যাবে না।
মুমিনের বিরুদ্ধে যদি কোনো সক্রিয় শত্রু বাহিনীও ষড়যন্ত্র করতে থাকে, তবু মুমিন মনোবল হারাবে না।
আল্লাহ তাআলার নির্দেশ হলো, ‘এবং তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তা কোরো না এবং তারা যে ষড়যন্ত্র করে তার কারণে মনঃক্ষুণ্ন হয়ে না।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১২৭)
প্রশ্ন হলো, চরম বিপদের সময়ও মুমিন কেন বিষণ্ন হবে? উত্তর হলো, মুমিন বিষণ্ন হবে না। কেননা সে বিশ্বাস করে আল্লাহ তাঁর সর্বোত্তম অভিভাবক, তিনি তার কল্যাণকামী এবং তিনি সর্বদা তার সঙ্গেই আছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বিষণ্ন হয়ো না, অবশ্যই আল্লাহ তাআলা আমাদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৪০)
বিষণ্নতা মনের কাজ করার ইচ্ছাশক্তিকে অকেজো বানিয়ে দেয়, তার কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এ জন্য শয়তান মুমিনের অন্তরে বিষণ্নতা ঢেলে দেয় যেন সে নিজের জন্য ও দ্বিনের জন্য ভালো কিছু করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘শয়তানের প্ররোচনায় হয় এই গোপন পরামর্শ মুমিনদের দুঃখ দেওয়ার জন্য।’
(সুরা : মুজাদালা, আয়াত : ১০)
তবে শয়তানের প্রতারণার ফাঁদে মুমিন কখনো আটকায় না, বিষণ্ন হওয়ার পরিবর্তে আল্লাহর ওপর নির্ভর করে। কেননা সে জানে, ‘আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া তাদের সামান্যতম ক্ষতি সাধনেও সক্ষম নয়। মুমিনদের কর্তব্য আল্লাহর ওপর নির্ভর করা।’ (সুরা : মুজাদালা, আয়াত : ১০)
বিষণ্নতা থেকে বাঁচতে মুমিনের করণীয় হলো নেক কাজের ধারা অব্যাহত রাখা। এটাই হতাশা ও বিষণ্নতা থেকে বাঁচার উপায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সৎপথের কোনো নির্দেশ আসবে, তখন যারা আমার সৎপথের নির্দেশ অনুসরণ করবে তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৩৮)
আর মুমিন দুঃখ-বেদনা ও বিষণ্নতা থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় কামনা করবে। কেননা মহানবী (সা.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দুশ্চিন্তা, পেরেশানি, অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণভার ও মানুষের প্রভাবাধীন হওয়া থেকে।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩৬৯)
এরপর যখন আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহে তার বিপদ কেটে যাবে, তখন সে মহান প্রতিপালকের কৃতজ্ঞতা আদায় করে বলবে, ‘সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূরীভূত করেছেন; আমাদের প্রতিপালক ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ৩৪)
ইসলাম মানুষকে বিষণ্ন হতে নিষেধ করেছে। তবে স্বভাবজাত দুঃখবোধকে অস্বীকার করেনি। মহানবী (সা.)-ও তাঁর সন্তান ইবরাহিমের মৃত্যুতে ব্যথিত হয়েছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘অশ্রু প্রবাহিত হয় আর হৃদয় হয় ব্যথিত। তবে আমরা মুখে তা-ই বলি, যা আমাদের রব পছন্দ করেন। হে ইবরাহিম! তোমার বিচ্ছেদে আমরা অবশ্যই শোকসন্তপ্ত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৩০৩)
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন