আরবি ‘গিবত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ পরনিন্দা, কুৎসা রটানো, পেছনে সমালোচনা, পরচর্চা, দোষারোপ, কারও অনুপস্থিতিতে তার দোষ অন্যের সামনে তুলে ধরা। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের পেছনে দোষ বর্ণনা, পরচর্চা ও নিন্দা করা জঘন্যতম অপরাধ। ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার দোষত্রুটি আলোচনার নামই হলো গিবত বা পরনিন্দা। গিবত হতে পারে কথা বা ইশারায় কিংবা লেখনীর মাধ্যমে। গিবত যেভাবেই হোক তা মানুষের দুনিয়া ও পরকালে লাঞ্ছিত হওয়ার অন্যতম কারণ। হাদিসের বর্ণনা, ‘যারা সামনে বা পেছনে অন্যের দোষ বলে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের দুঃসংবাদ।’ (মুসলিম) আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াবে না।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত ১২) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা পেছনে ও সামনে মানুষের নিন্দা করে।’ (সুরা হুমাজাহ, আয়াত ১)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন রসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কি বলতে পারো গিবত কাকে বলে?’ উত্তরে সাহাবিরা বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসুলই ভালো জানেন।’ তখন দয়াল নবি বললেন, ‘গিবত হলো কোনো ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার এমন দোষত্রুটি বর্ণনা করা, যা শুনলে সে কষ্ট পায়। (তিরমিজি ও মেশকাত) অন্য হাদিসে প্রিয় নবী (সা.) গিবতের পরিচয় এভাবে তুলে ধরেছেন, ‘একদিন কোনো প্রয়োজনে এক বেঁটে মহিলা রসুলুল্লাহর খেদমতে আসেন। সেই মহিলা চলে যাওয়ার পর আয়েশা (রা.) রসুলের কাছে ওই মহিলার দৈহিক কাঠামো বেঁটে বলে মন্তব্য করেন। এমন মন্তব্য শুনে রসুলের চেহারা মলিন হয়ে গেল। তিনি বললেন, ‘আয়েশা, তুমি তার গিবত করলে! তুমি এমন কথা বললে যা সমুদ্রে নিক্ষেপ করলে সমুদ্রের পানির রং পরিবর্তন হয়ে কালো হয়ে যেত।’ আয়েশা বললেন, ‘আমি তো এমন ত্রুটির কথাই বলেছি যা তার ভেতর আছে।’ অর্থাৎ আমি তো কোনো মিথ্যা কথা বলিনি।’ এ কথা শুনে রসুল (সা.) বললেন, ‘হে আয়েশা! যদিও তুমি সত্য কথা বলেছ কিন্তু তুমি তার ত্রুটি বর্ণনা করায় তা গিবত হয়ে গেল।’ (মুসলিম)
গিবতের ভয়াবহতা সম্পর্কে হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘গিবত ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য।’ তিনি জানতে চাইলেন এটা কীভাবে? রসুলুল্লাহ বললেন, ‘এক ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তওবাহ করলে তার গুনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু যে গিবত করে তার গুনাহ যার গিবত করা হয় সে মাফ না করা পর্যন্ত মাফ হয় না।’ (তাফসিরে মাজহারি) হজরত হাসান ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য একটি হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মেরাজের রাতে আমাকে এমন একদল মানুষের পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো, যাদের নখ ছিল তামার। তারা নখ দিয়ে নিজের মুখ, দেহের গোশত আঁচড়াচ্ছিল। আমি জিবরাইলকে জিজ্ঞেস করলাম, ওরা কারা? তিনি বললেন, ওরা ওই সব লোক যারা তাদের মুসলমান ভাইয়ের গিবত করত এবং ইজ্জতহানি করত।’ (মাজহারি)
গিবত থেকে বেঁচে থাকার জন্য প্রিয় নবী নসিহত করে বলেছেন, ‘হে আমার আদরের উম্মত! তোমরা একে অন্যের নিন্দা কোরো না। আর পরনিন্দা হলো অন্য ভাইয়ের এমন দোষ বর্ণনা করা যা তার অপছন্দ। যে ব্যক্তি অন্য মুসলমানের দোষ অনুসন্ধান করে আল্লাহ তার দোষ অনুসন্ধানে নেমে পড়েন। আর আল্লাহ যার দোষ অনুসন্ধান করেন তাকে লাঞ্ছিত ও অপমানজনক শাস্তি দেবেন।’ (তিরমিজি) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তুমি যদি কখনো কোনো ভাইয়ের গিবত করেই ফেল তাহলে সেই গিবতের কাফফারা হলো তুমি যার গিবত করেছ, তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবে। তুমি এভাবে বলবে, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার ও তার গুনাহ মাফ করে দাও।’ (বায়হাকি)
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি পীরসাহেব, আউলিয়ানগর
বিডি প্রতিদিন/এমআই