বিপদাপদ আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তাঁর বান্দার জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। মানুষের জীবনে দুঃখ-কষ্ট আপদ-বিপদ নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। মানুষের অর্থ-বিত্ত, সম্পদ, সম্মান, আভিজাত্য থাকার পরও সে বিপদে পড়ে। বিপদ-আপদ প্রত্যেক বান্দার নিত্যসঙ্গী। কেউ শারীরিকভাবে অসুস্থ, কেউ পারিবারিকভাবে অশান্তিতে কিংবা কোনো দুশ্চিন্তায় পেরেশান। মানুষের জীবনে বিপদ আসবেই। সুতরাং এ বিপদে বিচলিত না হয়ে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করতে হবে।। ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কখনো ভয়ভীতি, কখনো ক্ষুধা অনাহার, কখনো জানমাল ও ফসলাদির ক্ষতি সাধন করে। যারা ধৈর্যের সঙ্গে এর মোকাবিলা করে, তুমি সে ধৈর্যশীলদের জান্নাতের সুসংবাদ দান কর। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৫৫)। আল্লাহতায়ালা এ আয়াতে সব উম্মতকে লক্ষ্য করেই পরীক্ষার কথা বলেছেন, সেহেতু সবার পক্ষেই অনুধাবন করা উচিত যে এ দুনিয়া দুঃখ-কষ্ট সহ্য করারই স্থান। মূলত মানুষের ইমান অনুসারেই আল্লাহতায়ালা মানুষকে পরীক্ষা করে থাকেন। রসুল (সা.) বলেন, সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা বিপদ-আপদ বালা-মুসিবত নবীদের প্রদান করেন। তারপর যারা তাদের পরের লোক, তারপর যারা এর পরের লোক, তারপর যারা এর পরের লোক। (মুসনাদে আহমদ ৬/৩৬৯)। অর্থাৎ প্রত্যেকের ইমান অনুসারেই তাদের পরীক্ষা হয়ে থাকে। বিপদে সবর করা হলো সবচেয়ে বড় কাজ। বিপদে যিনি যত বেশি সবর বা ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন তিনি তত বেশি সফল। আল্লাহ বলেন, হে ইমানদারগণ তোমরা সাহায্য চাও সবর ও সালাতের মাধ্যমে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবরকারীদের সঙ্গে আছেন। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৫৩)। আমাদের মনে রাখতে হবে সালাত ও সবরের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়া যায় এবং বিপদ দূরীভূত হয়। আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনও সহজ হয়।
সবরকারীদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা যখন বিপদে পড়ে তখন তারা যেন ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ এ দোয়াটি পাঠ করে। দোয়াটির অর্থ হচ্ছে- আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। সুতরাং আল্লাহতায়ালা যখন তাঁর বান্দাকে কোনো বিপদে ফেলেন তাতে কোনো না কোনো মহৎ উদ্দেশ্য আছে। আর এ উদ্দেশ্যকে সম্মান করা মুমিনের কাজ। হা-হুতাশ বা পেরেশান হওয়া নয়। তাকে ধৈর্যশীল হয়ে আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে। রসুল (সা.) বলেছেন, মুমিনের কর্মকান্ড আশ্চর্যজনক, তার সব কাজই ভালো। মুমিন ছাড়া আর কারও জন্য এমনটি হয় না। যদি তার কোনো খুশির বিষয় সংঘটিত হয় তবে সে শুকরিয়া আদায় করে, ফলে তা তার জন্য কল্যাণের হয়। আর যদি তার কোনো ক্ষতিকর কিছু ঘটে যায় তবে সে সবর করে, ফলে তা-ও তার জন্য কল্যাণকর হয়। (মুসলিম, ২৯৯৯)।
অন্য হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) বলেছেন, যে কেউ বিপদ মুসিবতে পড়ে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন বলবে এবং বলবে হে আল্লাহ আমাকে এ মুসিবত থেকে উদ্ধার করুন এবং এর থেকে উত্তম বস্তু ফিরিয়ে দিন। অবশ্যই আল্লাহ তাকে উত্তম কিছু ফিরিয়ে দেবেন। (মুসলিম, ৯১৮)। যে কোনো বিপদে পড়ে যেমন বন্যার পানিতে ফসলহানি, অকালে সন্তানের মৃত্যু, বাড়ির ধন-সম্পদ চুরি, বিনা অপরাধে জেল-জুলুম, কোনো দুর্ঘটনায় পড়ে শরীরের অঙ্গহানি ইত্যাদি যত রকমের বিপদ-আপদে বান্দা যখন ইন্না লিল্লাহ পড়ে এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তকে মেনে নেয় তাদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, এরা হচ্ছে সেসব ব্যক্তি যাদের ওপর রয়েছে তাদের মালিকের পক্ষ থেকে পাওয়া অবারিত রহমত ও অপার করুণা, আর এরাই হচ্ছে সঠিক পথপ্রাপ্ত। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৫৭)। সুবহানাল্লাহ। একজন বিপদগ্রস্ত বান্দার জন্য এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর কী হতে পারে? কঠিন বিপদে যে সওয়াব লাভের আশায় ধৈর্য ধারণ করে তার ব্যাপারে আল্লাহ রব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে সুসংবাদ ও পুরস্কার ঘোষিত হয়েছে। হাদিসে এসেছে, আমি যখন আমার কোনো মুমিন বান্দার আপনজনকে মৃত্যু দিই আর সে সবর করে, তখন আমার কাছে তার একমাত্র প্রতিদান হলো জান্নাত। (বুখারি, ৬৪২৪)।
সুতরাং বিপদ-আপদ যে কারণেই আমাদের জীবনে আসুক না কেন আমরা যেন আল্লাহর ফয়সালা মেনে নিয়ে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর শরণাপন্ন হই এবং তাঁর সাহায্য কামনা করি। এটাই একজন মুমিন বান্দার প্রধান কর্তব্য।
আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের বিপদে ধৈর্য ধারণ করার এবং আল্লাহর কাছে সবর ও সালাতের মাধ্যমে তাঁর সাহায্য পাওয়ার তৌফিক দান করুন।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার
বিডি প্রতিদিন/এমআই