বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত হাসান বসরি (রহ.)-এর মায়ের নাম খাইরা। তিনি নবী কারিম (সা.) এর স্ত্রী উম্মে সালামা (রা.)-এর আজাদকৃত দাসী। তাঁর স্বামী ইয়াসারও ছিলেন যুদ্ধসূত্রে বন্দীত্ব বরণকারী গোলাম। তিনি মদিনা মুনাওয়ারায় বসবাস করতেন। অতঃপর একসময় দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে মহিয়সী নারী হজরত খাইরাকে বিবাহ করেন। খাইরা ছিলেন সে সমস্ত অনুগত নারীদের একজন, যারা স্বামীর সমস্ত কাজে তার আনুগত্যের সৌন্দর্য প্রদর্শন করতেন। উম্মে সালামা (রা.)-এর খেদমতের সময়টুকু ছাড়া বাকি পুরো সময় তিনি স্বামীর জন্য ব্যয় করতেন। পরবর্তীতে আল্লাহ তাআলা এই আদর্শ দম্পতিকে দুজন জগত বিখ্যাত পুত্রসন্তান দান করেন। যারা ইলম ও আমলের মাধ্যমে আজও মানুষের হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন। তাদের একজন হাসান বসরি আরেকজন সাইদ বসরি।
খাইরা নিজ নামের মতই তাঁর সবকিছুতেই ছিলেন খায়ের তথা কল্যাণ। নিজের মনিবা হজরত উম্মে সালামা (রা.)-এর সাথেও তাঁর খুব মধুর সম্পর্ক ছিল। একবার তিনি উম্মুল মুমিনিনের কোনো এক কাজে ঘরের বাইরে ছিলেন। তখন তাঁর দুগ্ধপোষ্য শিশু হাসান ক্ষুধায় কাঁদছিল। তা দেখে উম্মে সালামা (রা.) নিজের স্তন তাঁর মুখে দেন। আল্লাহর কুদরতে তা থেকে দুগ্ধ প্রবাহিত হয়। এভাবে হাসান বসরি (রহ.)-ও নববি বরকতের ছোঁয়া পেয়ে যুগশ্রেষ্ঠ ইমামে পরিণত হন।
তা ছাড়া দাসত্বের শৃঙ্খল ইলমের নুরানি জগতে তাঁর পথচলার প্রতিবন্ধক হতে পারেনি। বরং সময় ও সুযোগ বুঝে তিনিও নিজ সীমাবদ্ধতার মাঝে থেকেই ইলমে ওহির জ্ঞানার্জন করেছেন। নিজের আজাদকারী মনিবা উম্মুল মুমিনিন হজরত উম্মে সালামা ও হজরত আয়েশা (রা.)-এর সূত্রে তিনি অনেক হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি হাদিসের জগতে এতটাই বিশ্বস্ত যে ইবনে হিব্বান (রহ.) তাঁর কিতাবুস সিকাহ তথা নির্ভরযোগ্য হাদিস বর্ণনাকারীদের আলোচনামূলক কিতাবে তাঁর নামও উল্লেখ করেছেন। (কিতাবুস সিকাহ : ২/১২৬)
পরবর্তীতে তাঁর থেকেও জগত্ বিখ্যাত অনেক মহাদ্দিস হাদিস বর্ণনা করেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, তাঁরই ছেলে যুগের শ্রেষ্ঠ তাবেয়িদের অন্যতম হাসান বসরি ও তাঁর ভাই সাইদ বিন আবুল হাসান বসরি, আলি বিন জায়েদ বিন জাদআন, মুয়াবিয়া বিন কুররা মুজানি (রহ.) প্রমুখ। আর নারীদের মধ্যে তাঁর শিষ্য ছিলেন হাফসা বিনতে সিরিন, উম্মে হুজাইল আনসারিয়া আল বাসরিয়া (রহ.)। (তাহজিবুল কামাল ৮/৫৩১)
ইলমের প্রচার ব্যাপক করতে হজরত খাইরা মাঝে মাঝে মহিলাদের নিয়ে মজলিশে বসতেন। হাদিসের ইলম শিখানোর পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন বিষয়ে নসিহত করতেন এবং উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা ও উম্মে সালামা (রা.) থেকে আহরণকৃত জীবন ঘনিষ্ঠ ইসলামের বিভিন্ন বিধান শিক্ষা দিতেন। আর সবচেয়ে শিক্ষণীয় বিষয় হলো, তিনি নিয়মিত পড়াশোনা করতেন এবং রুটিন অনুযায়ী চলার চেষ্টা করতেন। তাছাড়া সন্তানদের সঙ্গে তিনি সমবয়সী বন্ধুর ন্যায় আচরণ করতেন।
একবারের ঘটনা। তাঁর মা মহিলাদের সাথে দ্বিনি আলোচনায় বসেছিলেন। এমন সময় হাসান সেখানে প্রবেশ করলেন। তিনি মায়ের হাতে পেঁয়াজ জাতীয় একটি গাছ দেখতে পান। যা থেকে তিনি আহার করছিলেন। হাসান বসরি তখন বললেন, আম্মাজান! এই দুর্গন্ধময় গাছটাকে ফেলে দিন।
তখন তাঁর মা খাইরা বললেন, চুপ করো। তুমি তো এখনই দেখছি বার্ধক্যে পৌঁছার মতো বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছ। তিনি হেসে মাকে জিজ্ঞেস করলেন, আম্মাজান, তাহলে বয়সে বড় কে আমি না আপনি? (ওফায়াতুল আয়ান ২/৭২)
ইমাম বুখারি (রহ.) ব্যতীত বহু সংখ্যক মুহাদ্দিস তাঁর সূত্রে হাদিস বর্ণনা করেন। (নিসাউন মিন আসরিত তাবেয়িন, পৃ.১৬১-১৬৭)
বিডি প্রতিদিন/এমআই