সম্পদ পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য। ঈমানদার সম্পদশালী হলে আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় ব্যয় করে বহু কল্যাণকর কাজ করতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য। স্থায়ী সত্কর্ম তোমার রবের কাছে পুরস্কারপ্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং আশান্বিত হওয়ার জন্যও সর্বোত্কৃষ্ট।’(সুরা : কাহফ, আয়াত : ৪৬)
যারা পার্থিব সম্পদ ও সৌন্দর্য মন্দ চোখে দেখে, তাদের প্রতি আল্লাহর জিজ্ঞাসা : ‘তাদের জিজ্ঞাসা করো, আল্লাহ বান্দাদের জন্য যে সৌন্দর্য ও পবিত্র রিজিক সৃষ্টি করেছেন, তা হারাম করল কে? বলে দাও, এগুলো ঈমানদারদের পার্থিব জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য এবং বিশেষভাবে পরকালের জন্য নির্দিষ্ট। এভাবে আমি জ্ঞানবানদের জন্য আমার আয়াতগুলো সবিস্তারে উপস্থাপন করি।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩২)
দুনিয়ার প্রয়োজনীয় কাজকর্ম ও উপার্জন বাদ দিয়ে শুধু পরকাল নিয়ে পড়ে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়নি। বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে অন্য আয়াতে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ যা তোমাকে দিয়েছেন, তা দিয়ে আখিরাতের আবাস সন্ধান করো। কিন্তু দুনিয়া থেকে তোমার অংশ ভুলে যেয়ো না...।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৭৭)। আর সম্পদ উপার্জন হলে তার যত্ন করা উচিত। সম্পদ নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।
সম্পদের সুরক্ষা বিধান ও মর্ম অনুধাবনে যারা অক্ষম, তাদের হাতে সম্পদ তুলে দেওয়া নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের সম্পদ, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য উপজীবিকা করেছেন, তা নির্বোধদের হাতে অর্পণ কোরো না...।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫)
কষ্ট করে উপার্জন করা সম্পদ বিনষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে সম্পদের সুরক্ষায় প্রাণপণ লড়াই করে যেতে হবে। সাঈদ ইবনে জাইদ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি নিজের ধন-সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে মারা গেলে সে শহীদ।
যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জমি চুরি করবে কিয়ামত দিবসে তার গলায় সাত তবক জমি ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৪১৮)
সম্পদ সুরক্ষার তাগিদ থেকে নিজের ভূ-সম্পত্তি মাঝেমধ্যে দেখতে যাওয়া উচিত। আবু সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরি (রা.)-এর কাছে এলাম। তিনি ছিলেন আমার বন্ধু। আমি বললাম, আপনি কি আমাদের সঙ্গে খেজুরবাগানে বেড়াতে যাবেন না? অতএব, তিনি তাঁর কালো চাদর পরিহিত অবস্থায় রওনা হলেন। (আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ২৩৫)
এই হাদিস থেকে জানা যায়, নিজের বন্ধু, প্রিয়জন বা অন্য কাউকে সঙ্গে নিয়ে মাঝেমধ্যে নিজের সম্পদ দেখতে যাওয়া উচিত। আলোচ্য হাদিস বুখারি শরিফের বর্ণনায় আরো দীর্ঘ আকারে এসেছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮১৩)
ভূ-সম্পত্তি দেখতে যাওয়া নিয়ে আরো একটি হাদিস আছে। উম্মু মুসা (রা.) বলেন, আমি আলী (রা.)-কে বলতে শুনেছি, নবী (সা.) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-কে গাছে উঠে কিছু নিয়ে আসতে হুকুম দিলেন। তাঁর সঙ্গীরা আবদুল্লাহ (রা.)-এর ঊরুর দিকে তাকিয়ে তাঁর কৃশতার কারণে তাঁরা হেসে দিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা কেন হাসছ? (পুণ্যের) পাল্লায় আবদুল্লাহর পা উহুদ পাহাড়ের তুলনায় বেশি ভারী হবে। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৯২০; আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ২৩৬)
আলোচ্য হাদিস থেকে ভূ-সম্পত্তি দেখা, বাগানে যাওয়া, ফল পেড়ে খাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ