২০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১৩:৪৭

কলকাতায় শেষ হল বাংলাদেশ বিজয় উৎসব

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

কলকাতায় শেষ হল বাংলাদেশ বিজয় উৎসব

কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া পাঁচদিন ব্যাপী ‘বাংলাদেশ বিজয় উৎসব ২০১৫’ শনিবার শেষ হয়েছে। এদিন বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিক সমাপনী ঘোষণা করেন বাংলাদেশের শিশু ও নারী বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। এসময় উপস্থিত ছিলেন কলকাতাস্থ বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার জকি আহাদ।  

পরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আফরোজ চুমকি জানান, ‘বাংলাদেশের জন্য এবং সেদেশর জাতির জন্য সবচেয়ে গৌরবের একটা দিন হল এই ১৬ ডিসেম্বর। নয় মাস সংগ্রাম, যুদ্ধের পর ৩০ লাখ ভাইয়ের রক্তের বিনিময়ে এবং ২ লাখ নির্যাতিত মা বোনের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটা দেশ পেয়েছি, একটা পতাকা পেয়েছি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে আমরা বিশ্বের কাছে আমরা আমাদের পতাকা তুলে ধরতে পেরেছি’।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি তখন কিশোরী, আমার বাবা সৈয়দ মঈজুদ্দিন মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। সে সময় আমরা আমার বাবার হাত ধরে ত্রিপুরা হয়ে কলকাতায় পলিয়ে এসেছিলাম। স্বভাবতই কলকাতার প্রতি আমার একটা আলাদা অনুভূতি আছে। এখানে আসার আমন্ত্রণ পেলে আমি সেটাকে রাখার চেষ্টা করি’।

শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ টেনে চুমকি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হারানোটা যেমন বেদনাদায়ক তেমনি আমাদের কাছে গর্বের বিষয় হল তাঁর সুযোগ্য মেয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখাচ্ছেন এবং স্বপ্ন বাস্তবায়িত করছেন। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করেছেন এবং বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী, আলবাদর যারা মা-বোনেদের ওপর নির্যাতন করেছিল, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যারা পাক বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল তাদেরও বিচার করছেন এবং বিচারের রায় কার্যকর করছেন-সবমিলিয়ে এবারের বিজয় দিবসে এটা আমাদের কাছে বিশেষ আনন্দের বিষয়’।

হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক আরও বেশি মাত্রায় বিরাজ করছে বলেও জানান চুমকি। তিনি বলেন, ‘হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গণ্য হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে চলবে। আমরা সেইভাবেই এগিয়ে যাব। এগিয়ে যওয়ার জন্য আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে হবে। সেইসঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস আমাদের আগামী প্রজন্মকেও জানাতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘ভারতের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ যে সেসময় বাংলাদেশের ২ কোটি শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল, গেরিলা প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দিয়েছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি অনেক ভারতীয় জওয়ানও সেই যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছিল- আমি তাদেরকে সালাম জানাই’।

সব শেষে কলকাতায় পাঁচ দিনব্যাপী এমন একটি বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে আয়োজন করার জন্য কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনেরও ভূয়ষী প্রশংসা করেন বাংলাদেশের শিশু ও নারী বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ ডিসেম্বর কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এই উৎসবের সূচনা করেন বাংলাদেশের শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। পাঁচ দিনের এই উৎসবে আয়োজন করা হয়েছিল বাংলাদেশি পণ্য ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের মেলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। বাংলাদেশ থেকে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন রুনা লায়লা, নচিকেতা, সুজিত মোস্তাফা, তিমির নন্দী, পারভীন সুলতানা’র মতো দুই বাংলার জনপ্রিয় শিল্পীরা।

উৎসবের আকর্ষণ বাড়াতে ঢাকাই জামদানি, রাজশাহী সিল্ক, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, হস্তশিল্প, বুটিক সিরামিক ও মেলামাইন সামগ্রিক বিবিধ পণ্যের প্রদর্শণীও ছিল। আর ছিল কাচ্চি বিরিয়ানি, ভুনা খিচুড়ি, ও পিঠাসহ জিভে পানি আনা বাংলাদেশি সুস্বাদু খাবারও। নেতাজী ইন্ডোরে বিজয় দিবসের এই অনুষ্ঠান কলকাতাবাসীর মধ্যে বিপুল সাড়া জাগিয়েছে।

বিডি-প্রতিদিন/২০ ডিসেম্বর, ২০১৫/মাহবুব

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর