৩০ এপ্রিল, ২০১৬ ১৯:০৫

মমতাসহ একাধিক মন্ত্রীর ভাগ্য বাক্সবন্দি

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

মমতাসহ একাধিক মন্ত্রীর ভাগ্য বাক্সবন্দি

ফাইল ছবি

মন্ত্রিসভার দশ প্রভাবশালী সদস্যকে নিয়ে ভাগ্য পরীক্ষা দিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। শনিবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে পঞ্চম দফায় কলকাতাসহ তিন জেলার ৫৩ আসনে (কলকাতা’র ৪, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা’র ৩১ এবং হুগলি’র ১৮টি আসন) ভোট গ্রহণ হয়। মমতা ছাড়াও এদিনের লড়াইয়ে ময়দানে ছিলেন রাজ্যটির শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বিদ্যুৎ দফতরের মন্ত্রী মণীশ গুপ্ত, ফায়ার সার্ভিসের মন্ত্রী জাভেদ খান, যুবকল্যাণ ও আবাসন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পরিকল্পনা রূপায়ণ মন্ত্রী রচপাল সিং, পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি, বিধানসভার স্পীকার তৃণমূলের বিমান বন্দোপাধ্যায় এবং ডেপুটি স্পীকার সোনালী গুহ(বোস)। ভোটের আসরে ভাগ্য পরীক্ষা দিয়েছেন কলকাতার মেয়র তৃণমূল প্রার্থী শোভন চট্টোপাধ্যায় ও ডেপুটি মেয়র ইকবাল আহমেদ, সেলিব্রিটি প্রার্থী দেবশ্রী রায়।

অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলেরও বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন, যার মধ্যে ভবানীপুর কেন্দ্রে মমতার বিপক্ষে ছিলেন বাম-কংগ্রেসের জোট প্রার্থী সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কংগ্রেসের সাবেক সাংসদ দীপা দাশমুন্সি এবং বিজেপির প্রার্থী ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সদস্য নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর নাতি চন্দ্র কুমার বসু। এছাড়াও ছিলেন সিপিআইএম থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া রাজ্যটির সাবেক মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা, সিপিআইএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী, রবীন দেব, শতরূপ ঘোষ প্রমুখ।

২০১১ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসকে সাথে নিয়ে এই ৫৩টি আসনের মধ্যে ৪৬ আসনে জয় পেয়েছিল রাজ্যটির শাসক দল তৃণমূল। বামফ্রন্ট পেয়েছিল ৬টি। ১টি আসন পেয়েছিল এসইউসিআই। তবে এবার তৃণমূলে সঙ্গ ছেড়ে বামেদের সাথে কংগ্রেস জোট করায় লড়াইটা বেশ কঠিন। গতবারের বিধানসভার ভোটের সাফল্য ধরে রাখাটা শাসক দলের পক্ষে যে ততটা সহজ হবে না তা ভালই জানে শাসক শিবিরও। অন্তত ১৫টি আসনের লড়াই তৃণমূলের কাছে বেশ শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত বিধানসভার নির্বাচনে লড়াইটা ছিল প্রধানত দ্বিমুখী। একদিকে তৃণমূল কংগ্রেস ও জাতীয় কংগ্রেসের জোট অন্যদিকে বামফ্রন্ট। বেশ কিছু আসনে বিজেপির উপস্থিতি থাকলেও তার উল্লেখযোগ্য প্রভাব ছিল না। কিন্তু ২০১৪ সালের লোকসভার ভোটে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে যায়। বিধানসভা ওয়াড়ী ফলাফলে অনেক আসনে বামফ্রন্টকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে গেরুয়া শিবির। বিজেপির উত্থানে বামফ্রন্টের ভোটব্যাংকেও বড়মাপের ধস নামে। পাশাপাশি ২০১১ সালের বিধানসভার তুলনায় কিছু আসনে প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ কমে যায় তৃণমূল কংগ্রেসেরও।

এবারের বিধানসভার নির্বাচনে প্রেক্ষাপট অনেকটা ভিন্ন। সব মহলকে অবাক করে দিয়ে কংগ্রেসের হাত ধরেছে সিপিআইএম। বাম-কংগ্রেসের জোটকে সমর্থন জানিয়ে পথে নেমেছে বিজ্ঞজনেদের একাংশ। তার কারণ একাধিক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তৃণমূলকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উৎখাত করা। একথা বলাই যায় যে, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে দুর্নীতিকে ইস্যু করে পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম কোন নির্বাচন হচ্ছে। সারদা আর্থিক কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে নারদা ঘুষের ঘটনা, কলকাতার বুকে ফ্লাইওভার ধসে যাওয়া-সব মিলিয়ে ভোটের মুখে একের পর এক ঘটনায় যথেষ্ট বিড়ম্বনায় শাসক দল। যা পরোক্ষে বিরোধীদের হাতকেই শক্তিশালী করেছে। এবারের নির্বাচনে নারদায় অভিযুক্ত দুই প্রভাবশালী মন্ত্রী, মেয়র ও এক তৃণমূল নেতাকে নিয়ে ময়দানে নেমেছে দিদি। এর মধ্যে কলকাতা বন্দরের প্রার্থী নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, বালিগঞ্জ কেন্দ্রের প্রার্থী পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বেহালা পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ও খানাকুলের প্রার্থী ডেপুটি মেয়র ইকবাল আহমেদ। সারদায় কয়েক হাজার কোটি রুপির কেলেঙ্কারির বিষয় থাকলেও তা চোখে দেখা যায়নি কিন্তু নারদায় স্টিং অপারেশেন একেবারে ক্যামেরার সামনে মন্ত্রী-নেতানেত্রীদের রুপি নেওয়ার সামনে চলে আসায় বেশ চাপে তৃণমূল।

এমন এক পরিস্থিতিতে চলছে এবারের ভোটযুদ্ধ। এদিন ভোট শুরু হয় সকাল ৭টায়, চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। সকালের দিকে শান্তিপূর্ণ ভোট হলেও বেলা গড়ানোর সাথেই একাধিক জায়গায় থেকে বিক্ষিপ্ত সহিংসতার ঘটনা ঘটে। বেহালাতে স্বতন্ত্র দলের প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তারকেশ্বরের ২৬৫ নম্বর বুথে অসুস্থ ভোটারদের হয়ে ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রিসাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সাতগাছিয়া কেন্দ্রের একটি বুথে ইভিএম-এর কাছে যেতে চাইলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বাধার মুখে পড়েন ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সোনালি গুহ (বোস)। এরপরই দিদিগিরি দেখান সোনালী। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানের সাথে আঙুল উঁচিয়ে তর্কাতর্কি শুরু করে দেন তৃণমূল প্রার্থী। পাশাপাশি সিপিআইএম’এর এক এজেন্টকে বুথ থেকে মেরে বের করে দেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি। ক্যামেরায় সেই ছবি ধরা পড়ার পরই সোনালীর বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, হুমকি প্রদর্শনসহ কয়েকটি ধারায় বিষ্ণুপুর থানায় এফআইএর দায়ের করা হয়েছে।

হুগলির আরামবাগে সিপিআইএম কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বারুইপুরের নবগ্রামের একটি বুথের সামনে দুর্বৃত্তদের ছোঁড়া গুলিতে এক তৃণমূল কর্মী আহত হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
 
এদিন বিকেল তিন’টায় মিত্র ইন্সিটিউশনে ভোট দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ পাঠভবন স্কুলে ভোট দেন রাজ্যটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, এছাড়াও ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা, সেলিব্রিটি রূপা গাঙ্গুলী, সৌরভ গাঙ্গুলী, অভিনেতা দেব, সঙ্গীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র ও তাঁর স্বামী সুরকার জয় সরকার, ইন্দ্রানী দত্ত, ইন্দ্রানী হালদার, দুই মেয়ে রিয়া ও রাইমাকে নিয়ে ভোট দেন মুনমুন সেনসহ সেলেবরা।

বিডি-প্রতিদিন/৩০ এপ্রিল, ২০১৬/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর