৩ মে, ২০১৬ ১০:২৭

'বাড়াবাড়ি করছে কেন্দ্রীয় বাহিনী'

অনলাইন ডেস্ক

'বাড়াবাড়ি করছে কেন্দ্রীয় বাহিনী'

ফাইল ছবি

সবেমাত্র কলকাতা বিমানবন্দরে এসে করিডরে হাঁটতে শুরু করেছেন। আচমকা একটি ছেলে তাঁকে প্রণাম করতে এসে কেঁদে ফেললেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, কী হয়েছে ভাই? দমদমের বাসিন্দা মিঠুন সরকার এরপর যা বললেন তা এই রকম – ভোট দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যদের হাতে তিনি বেধড়ক মার খেয়েছেন। কাউকে কিছু বলেও তিনি প্রতিকার পাননি।

তাঁর কথা শুনে দৃশ্যতই খেপে ওঠেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ, শেষ তিন দফার ভোটের পর তিনি এমন অজস্র অভিযোগ পেয়েছেন। এমনকি, প্রতিবন্ধীর উপরও আক্রমণ হয়েছে৷ কোথায় কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোট শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করবে, তা না করে তারা সন্ত্রাস চালাচ্ছে বলে একদিন আগেই পূর্ব মেদিনীপুরের সভায় অভিযোগ করেছিলেন তিনি। সোমবার বিমানবন্দরে ওই যুবকের কথা শোনার পর কোচবিহারে এসে নির্বাচনী জনসভায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, "কেন্দ্রীয় বাহিনী বাড়াবাড়ি করছে৷ মানুষকে ভোট দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না৷" পাশাপশি তিনি জনতার উদ্দেশে বলেন, "কোন ভয় পাবেন না৷ সকাল সকাল বুথে গিয়ে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করুন৷ সেটাই একমাত্র প্রতিবাদ।"

বস্তুত, ষষ্ঠ পর্বের ভোটের আগেই মমতা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, বাহিনী যেন সন্ত্রাস না করে। কিন্তু এরপরও, গুচ্ছ অভিযোগ। সূত্রের খবর, মমতা এতোই খেপেছেন যে, যেখানে যেখানে সন্ত্রাসের অভিযোগ এসেছে, সব তথ্য সংগ্রহ করছেন। এমনকি এটা নিয়ে আইনি পদক্ষেপের কথাও ভাবছেন তিনি।

অন্যদিকে, নির্বাচনে কমিশনের আচরণে তিনি যে খুশি নন, সেকথা শুরু থেকেই বুঝিয়ে আসছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বিশেষত, সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপির অভিযোগের পরই সংশ্লিষ্ট পদগুলোতে যেভাবে বদল হচ্ছিল, তা পক্ষপাতদুষ্ট বলেই তাঁর অভিযোগ৷ পূর্ব মেদিনীপুরের সভাতেও এই নিয়ে তিনি তাঁর ক্ষোভ গোপন করেননি৷

এদিকে টানা দু'মাস নির্বাচনী সফরের একেবারে শেষ পর্যায়ে মমতা৷ এদিন তিনি তুফানগঞ্জ, বাণেশ্বর ও কোচবিহারে তিনটি বিশাল সভা করেন৷ কীভাবে তিনি এই নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শক্তির মোকাবিলা করছেন, সেকথা তুলে ধরে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, "প্রথম প্রচার শুরু করেছিলাম উত্তরবঙ্গ থেকেই৷ শেষও করছি উত্তরবঙ্গে৷ সেদিন যা বলেছিলাম, আজও তাই বলছি৷ তৃণমূলই জিতবে৷ সরকার গঠনের শক্তি আমরা পেয়ে গেছি৷ এখন আপনারা আমাদের শক্তিবৃদ্ধির কাজটি করছেন৷ একটি একটি করে ভোট দিয়ে প্রতিবাদ করুন৷ ওরা আমাদের মেরে ফেলতে চেয়েছিল৷ কিন্তু মানুষ সঙ্গে আছে, রাখে কৃষ্ণ মারে কে৷"

বস্তুত, এই নির্বাচনে মমতাকে একার শক্তির উপর ভর করে লড়তে হচ্ছে৷ তবে বিরোধীরা আক্রমণ করবে এটা স্বাভাবিক৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনী যে এতটা বেপরোয়া হবে, তা তিনি ভাবতে পারেননি৷ পূর্ব মেদিনীপুরের সভায় মমতা সাফ জানিয়ে দেন, "বিজেপিকে কয়টা আসন পাইয়ে দিতে এই সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে৷" এদিন কোচবিহারে ক্ষোভপ্রকাশ করেন৷ পাশাপাশি, শান্তিপূর্ণ ভোটের দাবি তুলে বলেন, "কোন ভাগাভাগির রাজনীতি কোচবিহারে চলবে না৷ বিজেপির পদ্মকে জব্দ করতে হবে৷ আর ফরওয়ার্ড ব্লকের সিংহকেও৷ কোচবিহার জেলাতে এবার তৃণমূলই জিতবে৷"

শেষপর্বে ২৫টি আসনে ভোট বাকি৷ বর্তমান যা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, তাতে পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬ আসনেই খুব ইতিবাচক জায়গায় তৃণমূল৷ অন্যদিকে কোচবিহারের নয়টি আসনই এবার মমতার টার্গেট৷ তাঁর সভাকে কেন্দ্র করে এদিন যে উদ্মাদনা দেখা গেল, তাতে নেত্রী আশাবাদী, ঝড় কোচবিহারেও৷ গতকাল সোমবার তিনটি সভা রয়েছে এই জেলায়৷ সঙ্গে শেষ হবে তাঁর নির্বাচনী প্রচার৷ যদিও ভোটের দিন অর্থাত্‍ ৫ মে পর্যন্ত মমতা উত্তরবঙ্গেই থেকে যাচ্ছেন৷

সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন
 
বিডি-প্রতিদিন/০৩ মে, ২০১৬/মাহবুব

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর