২৪ মে, ২০১৬ ১৫:৩৪

দেড় ফুটের রিঙ্কিকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে 'উদয়'

অনলাইন ডেস্ক

দেড় ফুটের রিঙ্কিকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে 'উদয়'

স্কুলে গিয়ে সবাই যখন বেঞ্চে বসে পড়ে, ওকে তখন বসতে হত টেবিলের ওপর। দেড় ফুট উচ্চতার মেয়েটি টেবিলে বসে পড়া শুনত। ক্লাসে ও যখন ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে তাকাতো তখন স্কুলের বাকি শিক্ষার্থীরা তাকিয়ে থাকত ওর মুখের দিকে। ক্লাসে তাই ওর পড়া হত কিন্তু বাকিদের পড়া আর হত না। বাকি পড়ুয়াদের না বোঝাতে পেরে তাই ওকে নিয়ে অনেকটাই বিরক্ত ছিলেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

ওর দোষ ও স্বাভাবিক গঠনের নয়। ওর বয়সি ক্লাসের অন্য পড়ুয়াদের উচ্চতা যেখানে চার ফুট, সেখানে ওর উচ্চতা মাত্র দেড় ফুট। বছর ১৪-‌র রিঙ্কি দাসের অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্ম। এই বয়সেও দাঁড়াতে পারে না সে। ছোট্ট পা দুটো লুকিয়ে থাকে জামার আড়ালে। কোলে করে স্কুলে নিয়ে গিয়ে মা কল্যাণীদেবী টেবিলের ওপর বসিয়ে রাখতেন মেয়েকে। বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল সংলগ্ন মাঝাবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যেতেই সমস্ত ক্লাসের পড়ুয়ারা ছুটে আসত তার কাছে। ঘিরে ধরে ওর সঙ্গে মজা করত। অনেকে আবার ছোট্ট কান দুটো ধরে টানত। সহপাঠীদের অত্যাচারে একসময় স্কুল ছাড়তে হয় মেয়েটিকে। সেই মেয়েটিকে এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের শিলিগুড়ির উদয় স্কুল।

রিঙ্কির বাবা প্রভাস দাস প্যান্ডেলে শ্রমিকের কাজ করেন। একটা সিজনে কাজ থাকে তো বাকি সময় যাযাবরের মতো ঘুরতে হয়। খুঁজতে হয় কাজ। সংসার চালাতে তাই মা কল্যাণীদেবীকে বাসাবাড়িতে কাজে যেতে হয়। সংসার তো আর ছোট নয়। দুই ছেলে এবং আরও এক মেয়ে রয়েছে তাঁদের। এই পরিস্থিতিতে ভাল কোন স্কুলে রিঙ্কিকে ভর্তি করাবেন, তার জো নেই। অনেক বেসরকারি সংস্থা রয়েছে যারা এই ধরনের শিশুদের রাখে। কিন্তু তাতেও তো খরচ কম নয়। প্রভাসবাবু চেয়েছিলেন মেয়েকে সাধারণ স্কুলে ভর্তি করে দেবেন। কিন্তু শিলিগুড়িতে এই ধরনের শিশুদের সাধারণ স্কুলে ভর্তি নেয় না। এখানে কোন স্কুলেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নেই। তাই এক প্রকার নিরুপায় হয়েই বাড়িতে মেয়েকে বসিয়ে রেখেছিলেন প্রভাস।

১৪ বছরেও দাঁত গজায়নি। কথা বলার আগে তাকিয়ে চারদিকটা দেখে নেয়। নিজে থেকে নড়তে না পারলেও বড় হয়ে শিক্ষিকা হতে চায় রিঙ্কি। ওর এই স্বপ্ন দেখার পেছনে ২০০৮ সাল থেকে যাঁরা রয়েছেন তাঁরা শিলিগুড়ির কয়েকজন শিক্ষিকা। তাঁদের হাত ধরে পড়ছে, আঁকছে রিঙ্কি। হাকিমপাড়ায় ‘‌উদয়’‌ নামে ওই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা রীতা চৌধুরি জানান, আমরা এই ধরনের শিশুদের স্বপ্ন সফল করায় ব্রতী হয়েছি। আমাদের প্রচেষ্টায় পাশে পেয়েছি অনেককেই।‌‌‌

সূত্র: দৈনিক আজকাল

বিডি-প্রতিদিন/২৪ মে, ২০১৬/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর