২৫ এপ্রিল, ২০১৭ ২০:৪৬

আত্রাই নদী থেকে বাঁধ তুলে দিতে বাংলাদেশকে অনুরোধ মমতার

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

আত্রাই নদী থেকে বাঁধ তুলে দিতে বাংলাদেশকে অনুরোধ মমতার

ফাইল ছবি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাটের ওপর দিয়ে বয়ে চলা আত্রাই নদীর ওপর বাঁধ তুলে নিতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মঙ্গলবার কোচবিহার জেলার রাসমেলার মাঠে অনুষ্ঠিত এক প্রকাশ্য সভা থেকে মমতা বলেন, ‘আজকে বালুরঘাটে আত্রাই নদীতে সমস্যা হচ্ছে। ওখানে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে দেওয়া হচ্ছে। আমি বাংলাদেশকের বন্ধু সরকারকে অনুরোধ করবো, আত্রাই নদীর পানিকে কেন বাঁধ দিয়ে আটকানো হচ্ছে। ওটা ছেড়ে দিন। আমাদের বালুরঘাটের লোকেরা পানি পাচ্ছে না’। 

বালুরঘাটের লাইফলাইন বলে পরিচিত আত্রাই নদীর ওপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাঁধ নির্মাণের ফলে এই নদীর নব্যতা কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। দেখা দিয়েছে তীব্র জলাভাব। তাই বাংলাদেশ সরকার যাতে আত্রাই নদীর ওপর থেকে বাঁধ তুলে নেয় এদিন সেই দাবিই তোলেন মমতা। 

এদিন ফারাক্কা প্রসঙ্গটিও তোলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা ফারাক্কার পানি দিয়েছিলাম। কিন্তু তার ফলে কত গ্রাম চলে গেছে মাটির তলায়। কেন্দ্র আমাদের যে রুপি দেবে বলেছিল, তা আজও দেয়নি। ফারাক্কা শুকিয়ে গেছে, কলকাতা বন্দর শুকিয়ে গেছে। একটা ড্রেজিং পর্যন্ত করা হয় না’। 

এর আগে তিস্তা নিয়েও ফের নিজের বক্তব্য স্পষ্ট করে দেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আজকে আমি পরিস্কার করে বলে দিতে চাই যে বাংলাদেশকে আমরা খুব ভালবাসি। বাংলাদেশ পানি চায়, আমাদের তাতে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু আমি বলেছিলাম যে পানি যেখানে আছে সেখান থেকে দেবো, কিন্তু যেখানে নেই সেখান থেকে কি করে দেবো। তিস্তায় পানি নেই। তিস্তার পানি চলে গেলে শিলিগুড়ির লোক পানি পাবে না। জলপাইগুড়ির লোক পানি খেতে পাবে না। কৃষকরা চাষ করতে পারবে না। আমি দেখেছি বলেই বিষয়টি জানি’। 

তিস্তার পানির বদলে বিকল্প ব্যবস্থা সম্পর্কে মমতা বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি যে আপানারা বিকল্প ব্যবস্থা দেখুন। যেখান থেকে পানি গেলে কোন সমস্যা হবে না। সংকোশ নদীর পানি আমায় ভাসিয়ে দিয়ে চলে যায়। কেন পরিকল্পনা করেন না? ওখান থেকে পানি নিয়ে যান না। তোর্সা, ধানসাই, মানসাই আছে ওখানে থেকে নিয়ে যান, আমার কোন আপত্তি নেই। আমি বাংলা (পশ্চিমবঙ্গ)-কেও ভালবাসি, বাংলাদেশকেও ভালবাসি। বাংলাদেশ আমার বন্ধু দেশ’। 

এই প্রসঙ্গে ছিটমহল প্রসঙ্গটিও টেনে আনেন মমতা। তিনি বলেন, ‘আমরা ৭০ বছরের পুরোনো ছিটমহল সমস্যার সমাধান করে দিয়েছি। কই আমায় তো বলতে হয়নি। আমি নিজে ছিটমহলে গিয়েছি। ওখানকার মানুষ চেয়েছে, আমরা ছিটমহল করে দিয়েছি। ওখানকার মানুষেদের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষরা বাংলাদেশে গেছে, ভারতের মানুষরা ভারতে এসেছেন। তাদের ঘরবাড়ি খাবারদাবার সব করে দিয়েছি। কিন্তু করিনি বললে ভুল হবে। আমি মনে করি যেখানে আমাদের যতটুকু প্রয়োজন... আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক খুব ভাল এবং এই সম্পর্ক ভাল থাকবে। দুই দেশ, দুই দেশের জন্য কাজ করবে। আমরা বাংলাদেশকেও ভালবাসি, বাংলাকেও ভালবাসি। আমার কোন তফাৎ নেই, পার্থক্য নেই...। 

এর আগে গতকাল সোমবারই কোচবিহারে প্রশাসনিক বৈঠকের পরই তিস্তা নিয়ে নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন মমতা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিস্তার বদলে বিকল্প ব্যবস্থার ওপর জোর দেন তিনি।
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার দিল্লি সফরেও প্রতিবেশী দেশকে তিস্তার পানির বদলে বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিলেন মমতা। গত ৮ এপ্রিল শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত বৈঠকের পর মমতা জানান, ‘তিস্তা আমাদের লাইফলাইন, উত্তরবঙ্গের লাইফ লাইন। এর পানি বণ্টন নিয়ে আমাদের সমস্যা রয়েছে। তিস্তার পানি দিলে রাজ্য আরও বিপন্ন হয়ে পড়বে’। এর বদলে আরও চারটি বিকল্প নদীর প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী। দুই দেশের সরকারকেই এই নিয়ে ভেবে দেখার অনুরোধও জানান তিনি। যদিও মমতার সেই বিকল্প প্রস্তাবে মোদি কিংবা শেখ হাসিনা কেউই সাড়া দেয়নি। এমন এক পরিস্থিতিতে প্রতিটি অনুষ্ঠান-সভা থেকেই তিস্তা নিয়ে সরব হচ্ছেন মমতা। পানির বণ্টন নিয়ে প্রতিবারই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করছেন তিনি।

বিডি-প্রতিদিন/২৫ এপ্রিল, ২০১৭/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর