শিরোনাম
২৯ এপ্রিল, ২০১৭ ২০:৫৭

আনন্দ পুরস্কার গ্রহণ করলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

আনন্দ পুরস্কার গ্রহণ করলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

বাংলাদেশের প্রখ্যাত লেখক, গবেষক এবং ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ১৪২৩ বঙ্গাব্দের ‘আনন্দ’ পুরস্কার পেয়েছেন। তার আত্মজীবনীর নতুন পর্ব ‘বিপুলা পৃথিবী’-বইটির জন্য তাকে এই পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। 

আজ শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতার ‘দ্য ওবেরয় গ্র্যান্ড’ হোটেলে এক অনুষ্ঠানে তার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন কবি শঙ্খ ঘোষ। 

পুরস্কার পেয়ে উদ্যোক্তাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে আনিসুজ্জামান বলেন ‘এই পুরস্কার পেয়ে আমি অত্যন্ত গৌরবান্বিত। বিশ্বের যেখানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা করছেন তাদের সকলের জন্য একটি মাত্র পুরস্কার উন্মুক্ত আছে, সেটি হল এই ‘আনন্দ’ পুরস্কার। আমি মনে করি যে আনন্দ পুরস্কার লাভ করে আমি প্রাপ্যের অধিক সম্মান পেয়েছি। আমি আরও গর্বিত এবং নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে যে শ্রদ্ধেয় শঙ্খ ঘোষের হাত থেকে এই পুরস্কারটি পেলাম’। 

এই পুরস্কারের সঙ্গে দীর্ঘদিনের যোগ রয়েছে প্রখ্যাত এই লেখক ও গবেষকের। সেই প্রসঙ্গটি তুলে আনিসুজ্জামান বলেন, ‘১৯৯৪ সাল থেকেই আনন্দ পুরস্কারের সঙ্গে আমার যোগ রয়েছে। তখন একাধিক শাখায় এই পুরস্কার দেওয়া হতো। সে বছর মননশীল রচনায় এই পুরস্কার পান অন্নদাশঙ্কর, শামসুর রহমান পেয়েছিলেন কবিতায় এবং বাংলা সাহিত্যের প্রচার ও প্রসারে আমি ও নরেন বিশ্বাস এই পুরস্কার লাভ করি। তার এক বছর পর থেকে টানা বিশ বছর আনন্দ পুরস্কার প্রদান প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম। সেই দায়িত্ব শেষ হওয়া মাত্রই আমায় এই পুরস্কার প্রদান করা হল। আজকাল বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’ বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। আমার এই আনন্দ পুরস্কার পাওয়াটা কারও কারও ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’ বলে মনে হতে পারে। কারণ আমার দায়িত্ব থেকে বিদায় নেওয়ার সময়ই এই পুরস্কার পেলাম’। 

দুই দেশের মানুষের মধ্যে থেকে ভয়, সন্দেহ দূর করার বার্তাও দিলেন আনিসুজ্জামান। তিনি বলেন ‘অজানা থেকেই মানুষে মানুষে সন্দেহ ও ভয় তৈরি হয়। তাই মানুষকে জানার একটা বড় উপায় হল সাহিত্য পাঠ করা। দুই দেশের মধ্যে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে যে দীর্ঘকালীন সম্পর্ক রয়েছে সেই সম্পর্কের মধ্যে এখনও কিছু ভয়, সন্দেহ রয়েছে গেছে। তাই আমরা যত পরস্পরকে জানবো, তত এই সন্দেহ, ভয় দূর হবে। এই জানার ক্ষেত্রে সাহিত্য একটা বড় ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। 

উল্লেখ্য, ভারতের জনপ্রিয় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা প্রতি বছর একটি বাংলা বইকে এই পুরস্কার দিয়ে থাকে। ১৯৫৮ সালে আনন্দ পুরস্কার শুরু। প্রথম বছর এই পুরস্কার পান বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় ও সমরেশ বসু। এরপর ছয় দশক ধরে এই পুরস্কার শুধুমাত্র কলকাতার গন্ডীতে সীমিত না থেকে তা ক্রমশই আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠে। ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের জন্য আনন্দ পুরস্কার পান আনিসুজ্জামান। ৯০ এর দশকে আনিসুজ্জামানকে উপদেষ্টা করে বাংলাদেশ থেকে বেরিয়েছিল হাজার বছরের বাংলা কবিতা, গান ও নাটক নিয়ে ১৪টি ক্যাসেটের সংকলন ‘ঐতিহ্যের অঙ্গীকার’। সেই কৃতিত্বের জন্য ‘আনন্দ’ সম্মান পান তিনি। 

এরপর আবার ১৪২৩ বঙ্গাব্দ। এবারের ‘আনন্দ’ পুরস্কারের জন্য ২০১৫ সালের জানুয়ারী থেকে ২০১৬ এর ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশিত বইগুলোর মধ্য থেকে প্রথম পর্বের বাছাই হয়। সেই প্রাথমিক তালিকায় বইগুলো পাঠানো হয় পাঁচ বিচারকের কাছে। এবারের ‘আনন্দ’ পুরস্কার নির্বাচনের বিচারক মন্ডলীতে ছিলেন কৃষ্ণা বসু, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রামানন্দ বন্দোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, সেলিনা হোসেন। তাদের প্রথম পছন্দ অনুযায়ী মনোনীত হয় তিনটি বই। এগুলো হল- অনিতা অগ্নিহোত্রীর ‘মহানদী’, পথিক গুহের ‘ঈশ্বরকণা, মানুষ ইত্যাদি এবং আনিসুজ্জামানের ‘বিপুলা পৃথিবী’। এরপর পাঁচ বিচারকই এই তিনটি বই নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা বেছে নেন ‘বিপুলা পৃথিবী’কে। এই বইটি প্রকাশ করেছে ঢাকার প্রথমা প্রকাশনী। 

এদিনের অনুষ্ঠানে বিচারক মন্ডলীর পাঁচ সদস্যরা ছাড়াও ছিলেন কবি শ্রীজাতসহ সমাজের বহু বিশিষ্ট মানুষেরা। মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে সঙ্গীত পরিবেশন করেন ওস্তাদ রশিদ খান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শঙ্খ ঘোষ।

বিডি প্রতিদিন/২৯ এপ্রিল ২০১৭/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর