১৭ জুন, ২০১৭ ১৮:৩৭

পুলিশ-মোর্চা সংঘর্ষে রণক্ষেত্র দার্জিলিং, নিহত ২

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

পুলিশ-মোর্চা সংঘর্ষে রণক্ষেত্র দার্জিলিং, নিহত ২

পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ে পুলিশ ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (জিজেএম)-এর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে মোর্চার দুই সমর্থক। মোর্চার দাবি, পুলিশের গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে তাদের সমর্থকের। যদিও মোর্চার অভিযোগকে অস্বীকার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে মোর্চার হামলায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। সবমিলিয়ে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল পাহাড়ের পরিস্থিতি।

কযেকদিন আগে মোর্চা প্রধান বিমল গুরুঙ্গ’এর অফিস এবং মোর্চার আরেক নেতা বিনয় তামাং’এর বাড়িতে পুলিশি অভিযানের প্রতিবাদে শনিবার সকালে সিংমারি এলাকায় মিছিল বের করে মোর্চার সমর্থকরা। এসময় সেই মিছিলকে বাধা দিতে গেলে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সামনের দিকে এগোতে থাকে মোর্চার সমর্থকরা। এ সময়ই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট বৃষ্টি শুরু করে মোর্চার সমর্খকরা। মোর্চা ছোড়া ইটের আঘাতে আটজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। অগ্নিসংযোগ করা হয় পুলিশের জিপে। এসময় বিক্ষুব্ধ মোর্চা সমর্থকদের হটাতে প্রথমে লাঠিচার্জ এবং পরে টিয়ার গ্যাসের সেল নিক্ষেপ করা হয়।

এরই মধ্যে পুলিশের গুলিতে মোর্চার দুই সমর্থক নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয় মোর্চার পক্ষ থেকে। মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে বিচারবিভাগী তদন্তেরও দাবি জানিয়েছে মোর্চা। যদিও রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা জানান, পুলিশ কোন গুলি চালায়নি। গুলি চলেছে মোর্চার দিক থেকে। সেই গুলিতেই মোর্চার সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে’। 

অন্যদিকে মোর্চা সমর্থকদের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছে ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটেলিংন (আইআরবি)’এর সহকারী কমান্ডান্ট কিরণ তামাং। মোর্চার সমর্থকরা খুকরি (একটি ধারালো অস্ত্র) দিয়ে তার গলার নলি কেটে দেয় বলে অভিযোগ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে শিলিগুড়ির একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে গত কয়েকদিন উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার পাহাড়ি এলাকা। গত ৮ জুন দার্জিলিং’এর রাজভবনে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বৈঠক শেষের পরই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সেই থেকেই গত এক সপ্তাহ ধরে কার্যতআন্দোলন চালিয়ে আসছে মোর্চার সমর্থকরা। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছোড়া, বোমা ছোড়া, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ঘটানো সবকিছুতেই মোর্চার মদদ ছিল বলে অভিযোগ। তাদের এই আন্দোলনের ফলে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে পাহাড়। শান্তি ফেরাতে পুলিশ, আধাসামরিক বাহিনীর পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে সেনাকেও। তবু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। উল্টে পাহাড় ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। 

এমন এক পরিস্থিতিতে মোর্চাকে সংযত হওয়ার আবেদন জানিয়ে মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘আমরা পাহাড়ের শান্তি চাই। গণতন্ত্র শান্তির কথা বলে। কথা বলতে আমাদের কোন সমস্যা নেই। কিন্তু পাহাড়ে যারা অশান্তি করছে তাদের কোন ঠাঁই নেই’। পাহাড়ে গুণ্ডামিতে বিদেশি শক্তির হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, ‘এটা কোন রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। এর সঙ্গে জঙ্গি যোগ রয়েছে। আমার কাছে তথ্য আছে যে, অশান্তি পাকানোর জন্য বিদেশ থেকে মোর্চার তহবিলে অর্থ ঢুকছে। তবে আমি কোন দেশের নাম নিতে পারবো না। আমি তাদের কাছে অনুরোধ করবো তারা যেন এই মোর্চাকে অর্থ সহায়তা না করে। 

মমতা আরও বলেন, আমি এও খবর পেয়েছি যে উত্তর-পূর্ব জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গেও মোর্চা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করবো যে, তারা যেন এই গোষ্ঠীগুলিকে উৎসাহ প্রদান না করে এবং রাজ্যকে সহযোগিতা করে’। মোর্চার বিরুদ্ধে ভারতের আচরণবিধি লঙ্ঘন করারও অভিযোগ তোলেন মমতা। তিনি জানান, ‘জাতীয় পতাকা হাতে নিয়েই তারা গুণ্ডামি করছে, পুলিশকে বোমা ছুড়ছে। কারা এটা করছে?’ 

বিডি-প্রতিদিন/১৭ জুন, ২০১৭/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর