৪ জুলাই, ২০১৭ ২২:৪৭

রাজ্যপালের ধমকে একসময় ভেবেছিলাম ক্ষমতা ছেড়ে দিই: মমতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজ্যপালের ধমকে একসময় ভেবেছিলাম ক্ষমতা ছেড়ে দিই: মমতা

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলছেন আমি ১৩-১৪ বছর বয়স থেকে সক্রিয় রাজনীতি করে আসছি। রাজনীতি করতে করতেই সারাটা জীবন ফেলে এসেছি। কিন্তু আজ এই জায়গায় এসে আমাকে অসম্মান করা হচ্ছে...। আজকে আমাকে অপমান করার পর আমি নিজেও একসময় ভেবেছিলাম যে ক্ষমতা ছেড়ে দেবো। কারণ এত অপমান আমি জীবনে হইনি’।

রাজ্যটির রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি’র বিরুদ্ধে হুমকি ও অসম্মানিত করার অভিযোগ তুলে এই মন্তব্য করেছেন মমতা ব্যানার্জি। 

মঙ্গলবার রাজ্য সরকারের সচিবালয় নবান্নে সংবাদ সম্মেলন করে রাজ্যপালের বিরদ্ধে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী বলেন ‘আমাকে আজকে রাজ্যপাল অনেক বড় বড় কথা বলেছেন। আজকে আমি খুব অসম্মানিত হয়েছি। আমি রাজ্যপালের দয়ায় এখানে ক্ষমতায় আসিনি। আমি মানুষের রায়ে ক্ষমতায় এসেছি। আমি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত কিন্তু রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা মনোনীত’। 

ফেসবুকে ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর কিছু ছবি পোস্ট করার পরই গত রবিবার সকাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বাদুরিয়া ও সংলগ্ন এলাকাতে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। দফায় দফায় রাস্তা, রেল অবরোধ থেকে শুরু করে দোকানপাট-গাড়ি ভাঙচুড়েরও অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত যুবকের বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয় বলে অভিযোগ।

যদিও আপত্তিকর ছবি পোস্ট করার অভিযোগে ওই যুবককে আটক করা হয়। এরপরই মঙ্গলবার বিজেপি’র পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। এরপর দুপুরের দিকেই উদ্বিগ্ন রাজ্যপাল রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ফোন করেন মমতা ব্যানার্জিকে।

বিকাল গড়াতেই নবান্নে সংবাদ বৈঠকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যপালকে তোপ দাগেন মমতা। রাজ্যপালকে ব্লক সভাপতির সঙ্গে তুলনা করে মমতা বলেন ‘রাজ্যপাল এমনভাবে কথা বলছেন যেন তিনি বিজেপির ব্লক সভাপতির মতো কথা বলছেন। কেন এটা হবে? আমরা কেউ চাকর-বাকর নই। আমি এখানে একটা সরকার চালাই, মানুষ আমাকে পাঠিয়েছে বলে। আমি কারো দয়ায় আসি নি। আমি মানুষের দয়ায় এখানে আছি। মানুষ যেদিন চাইবে, আমি সেদিন ছেড়ে চলে যাবো’। 

মুখ্যমন্ত্রীর পরিস্কার বক্তব্য ‘আমি কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীত্ব করার জন্য এই চেয়ারটায় আসিনি। আমি এই চেয়ারকে মানি না। আমি মানুষের চেয়ার মেনে চলি। আমার ক্ষমতা ছেড়ে দিতে এক সেকেন্ড সময় লাগবে’। 

এছাড়া ফেসবুকের পোস্টকে কেন্দ্র করে ওই গন্ডগোলের ঘটনার তীব্র নিন্দা করে মমতা বলেন ‘ফেসবুকে যদি কেউ বলে তবে পাল্টা ফেসবুকেই বলা উচিত, তার কাউন্টার করা উচিত  কিন্তু তা না করে একটা গ্রুপ রাস্তায় নেমে পড়েছে। যারা এগুলো করছেন তারা ঠিক করছেন না। যে ছেলেটি ওই পোস্ট করেছে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এর পর নিয়ন্ত্রণে চলে আসা উচিত ছিল। কিন্তু আরেকটা গ্রুপ গিয়ে ওটাকে সাম্প্রদায়িক চেহারা দিল। যেভাবে সারা দিন ধরে রাস্তা অবরোধ, ট্রেন অবরোধ করেছে এতে তারা এই রাজ্যেল ভালের পক্ষে আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। একটা ফেসবুক পোস্ট দেখে যদি দাঙ্গা বেধে যায় তবে এর থেকে দু:খের দিন আর আসবে না। আমি এই পুরো ঘটনার নিন্দা জানাই’।

মমতা জানান ‘ওই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ যদি গুলি চালাতো তবে শতাধিক মানুষ নিহত হতো। তাই বুঝিয়ে মানুষকে শান্ত করাটাই লক্ষ্য ছিল। সেই কারণে আমাদের সময় লাগছে, আমাদের ধৈর্য্য লাগছে। কিন্তু আমার ধৈর্য্য যেন কেউ দুর্বল না ভাবে’। দুই সম্প্রদায়ের নেতাদের কাছেই শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখার পাশাপাশি হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন মমতা। 

তবে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলে মুখ্যমন্ত্রীর পদের মর্যাদা খুইয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী দলের নেতারা। বাদুড়িয়ার অশান্ত পরিস্তিতি নিয়ে মমতাকে রাজ্যপালের ফোনের পর মমতা যেভাবে সংবাদমাধ্যমের সামনে রাজ্যপালকে অপমান করেছেন এটা কোনমতেই কাম্য নয়। এতে দুই জনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি দেখা দিতে পারে।

বিডি প্রতিদিন/ ৪ জুলাই, ২০১৭/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর