৬ জুলাই, ২০১৭ ১৯:৩৮

পশ্চিমবঙ্গে ফের উত্তপ্ত রাজ্য-রাজনীতি

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

পশ্চিমবঙ্গে ফের উত্তপ্ত রাজ্য-রাজনীতি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরচব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটে গোষ্ঠী সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তির মৃত্যু হল। তার নাম কার্তিক ঘোষ (৬১)। গত সোমবার বসিরহাটের ট্যাঁটরা ঘোষপাড়া এলাকার বাসিন্দা আহত কার্তিক ঘোষকে বসিরহাট থেকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার আর.জি.কর হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার সকালে তার মৃত্যু হয়। আর এরপরই নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বসিরহাট, বাদুড়িয়ার একাধিক এলাকা। পাশাপাশি লাশের দখল নিয়ে রাজনীতি শুরু হয় শাসকদল তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে।
কার্তিকের মৃত্যুর খবর পেয়েই তাকে দেখতে এদিন হাসপাতালে যান বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, নারী নেত্রী লকেট চ্যাটার্জী। কিন্তু হাসপাতালে ঢোকার মুখেই তাদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। হাসপাতাল চত্বরেই লকেট’কে হেনস্থা করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তার হাত ধরে টানা থেকে শুরু করে গালিগালাজ করা হয় বলে অভিযোগ। বিজেপির তরফে অভিযোগ তৃণমূল আশ্রিত দুর্বৃত্তরাই বিজেপি’র কর্মীদের মারধর করছে, লাশের দখল নিয়েছে। কার্তিক ঘোষের লাশ কলকাতা থেকে বসিরহাটে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলেও বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হয়েছে। পুরো ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গে অবিলম্বে ৩৫৬ ধার জারি করে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানিয়েছে বিজেপি।
এদিকে ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণে বসিরহাটে এক প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। প্রতিনিধি দলে থাকছেন ওম মাথুর, মিনাক্ষী লেখি, সত্যপাল সিং, কৈলাশ বিজয়বর্গীয় সহ অন্য নেতারাও। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের নির্দেশেই কেন্দ্রের ওই প্রতিনিধি পাঠানো হচ্ছে বলে খবর। ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্থদের সঙ্গে কথা বলে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দিতেও বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য ফেসবুকে একটি আপত্তিকর পোস্টকে কেন্দ্র করে গত রবিবার থেকে বাদুড়িয়া, বসিরহাট, স্বরূপনগর সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দুইটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়।
সংষর্ষের পাশাপাশি দফায় দফায় রাস্তা অবরোধ, রেল অবরোধ, দোকান, বাড়ি ভাঙচুড়, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ঘটনা হয় বলে অভিযোগ। বিক্ষোভকারীদের থামাতে রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় বিএসএফ, র‌্যাফ’কেও। একাধিক এলাকায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। তবু অবস্থা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় নি।
এমন এক পরিস্থিতিতে অশান্তি তৈরি করার জন্য বিজেপিকে দোষারোপ করে রাজ্যে শান্তি, সম্প্রীতি বজায় রাখতে দুই পক্ষের কাছেই আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানর্জি। পাশাপাশি এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় “শান্তিবাহিনী” গঠনের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রাজ্যের প্রায় ৬০ হাজার বুথে এই শান্তিবাহিনী গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যার মধ্যে থাকবেন শিক্ষার্থী, যুব, বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধি, ধর্মগুরু, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বিশিষ্ট নাগরিকরা।
এদিকে গোষ্ঠী সংঘর্ষকে কেন্দ্র রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও রাজ্যটির রাজ্যপাল কেশরী নাথ ত্রিপাঠির মধ্যে সম্পর্ক চরমে উঠেছে। সংঘর্ষের পরই গত মঙ্গলবার সকালে রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা নিয়ে মমতাকে ফোন করেন কেশরীনাথ। এরপর বিকালে সংবাদ সম্মেলন ডেকে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে হুমকি অসম্মানিত করার অভিযোগ তোলেন মমতা।

বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর