৯ জুলাই, ২০১৭ ১৩:৫৭

জিএসটির প্রভাব পড়েছে কলকাতার যৌনপল্লীতেও!

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

জিএসটির প্রভাব পড়েছে কলকাতার যৌনপল্লীতেও!

স্যানিটারি ন্যাপকিনের ওপর ১২ শতাংশ হারে পণ্য পরিসেবা কর (জিএসটি) যুক্ত হওয়ার কঠিন সমস্যায় পড়েছেন এশিয়ার সবচেয়ে বড় যৌনপল্লী কলকাতার সোনাগাছির কয়েক হাজার যৌনকর্মীরা। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছছে যে যৌনকর্মীদের অনেকেই এই ন্যাপকিনের ব্যবহার কমিয়ে বিকল্প ভাবছেন। 

ভারত জুড়ে স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জনসচেতনতা প্রচারণার পর ১০ বছর আগে থেকেই যৌনকর্মীরা এই স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন। কিন্তু জিএসটির ফলে সেই ন্যাপকিনের দাম অত্যাধিক হারে বেড়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে ভাল কাজের উদ্যোগ, বড়সড় ঝুঁকির মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে হাজার হাজার যৌনকর্মীর স্বাস্থ্যের বিষয়টি। যদিও কন্ডোমের ওপর কর যুক্ত না হওয়ায় যৌনকর্মীরা কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে।

যৌনকর্মীদের ভাল-মন্দ দেখার জন্য রয়েছে নিজস্ব সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি (ডিএমএসসি)। যার ছাতার তলায় রয়েছে প্রায় দেড় লাখেরও বেশি নিবন্ধিত যৌনকর্মী। ডিএমএসসি’এর কর্মকর্তা সমরজিত জানা বলেন, ২০০০ সালে যৌনকর্মীদের মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহারের হার ছিল ২০ শতাংশ, আর এখন সেই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ শতাংশেরও বেশি। প্রথমত সুসংহত সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারণার কারণে এই ন্যাপকিন ব্যাবহারের মাত্রা অনেকটাই বেড়েছে, দ্বিতীয়ত ভতুর্কি দেওয়ায় বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল এবং যৌনকর্মীদের কাছেও তা সহজলভ্য ছিল। কিন্তু জিএসটির প্রভাবে সেই ন্যাপকিন ব্যবহার করাই কঠিন হয়ে পড়েছে যৌনকর্মীদের।

দুই সন্তানের মা সোমা (৩৪) নামে এক যৌনকর্মী জানান, স্যানিটারি ন্যাপকিন আমাদের কাছে খুবই প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। কিন্তু যদি এর দাম বেড়ে যায় তবে এই ন্যাপকিন ছেড়ে স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখে  রক্ষা আমাদের অন্য কোন বিকল্প পথের দিকে যেতে হবে।

সমরজিত জানা আরও বলেন, ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত উষা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি (উষা ব্যাঙ্ক নামেই অধিক পরিচিত) থেকেই ভর্তুকিযুক্ত স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়া হয়ে থাকে। উষা ব্যাঙ্ক ও দুর্বারের কাউন্টার থেকে প্রতি মাসে শুধু কলকাতার যৌনকর্মীদের কাছেই ৬০ থেকে ৭০ হাজারের বেশি প্যাকেট বিক্রি করা হয়ে থাকে।

ডিএমএসসির অন্য এক কর্মকর্তা জানান, যে সংস্থাগুলির সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে, তারা আমাদের বাজারের তুলনায় অনেক কম দামে স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু কাঁচামালের ওপর ১২-১৮ শতাংশ জিএসটি যুক্ত হওয়ায় অনেকেই এখন কম দামে ন্যাপকিন দিতে অস্বীকার করছে। 

তবে কন্ডোমের ওপর কোন কর না চাপানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে যৌনকর্মীদের সংগঠন ডিএমএসসি। এর ফলে এইডসসহ যৌনরোগ নিয়ন্ত্রণে বড় সাফল্য আসবে বলেও আশাপ্রকাশ করেছে তারা। সমরজিত জানা বলেন, এইডস নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে আমরা অনেক সফলতা পেয়েছি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার শূণ্যে নামিয়ে আনা।

উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই থেকে ভারতে আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হয় জিএসটি। এর উদ্দেশ্য, সারা ভারতে ‘এক দেশ এক কর ব্যবস্থা’ চালু করা। কোন কোন সামগ্রীতে যেমন কোন কর দিতে হচ্ছে না আবার তেমনি কিছু কিছু পণ্যে মোট চারটি স্তরে কর নেওয়া শুরু হয়েছে (৫, ১২, ১৮ ও ২৮ শতাংশ)। স্যানিটারি ন্যাপকিনের ক্ষেত্রে সেই জিএসটি ধার্য করা হয়েছে ১২ শতাংশ। 

যদিও এর পর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিনকে কর মুক্ত করার দাবি জানানো হয়। স্যানিটারি ন্যাপকিনে করমুক্তি চেয়ে ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির কাছে চিঠিও পাঠিয়েছিলেন ভারতের শিশু ও নারী কল্যাণ উন্নয়ন মন্ত্রী মানেকা গান্ধী। মানেকার যুক্তি ছিল এই পণ্যটিকে করমুক্ত করা হলে গ্রামীণ এলাকায় গরিব নারীদের মধ্যে স্যানিটারি ন্যাাপকিনের ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হবে। সুস্থ ও স্বচ্ছ ভারত গড়ার লক্ষ্যেই এটা করা উচিত। কিন্তু ‘স্বচ্ছ ভারত’এর প্রবক্তা মোদির মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন জিএসটি কাউন্সিল সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি।


বিডি প্রতিদিন/৯ জুলাই, ২০১৭/ফারজানা
 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর