১০ নভেম্বর, ২০১৭ ১৯:২০

বাংলায় তোষণের রাজনীতি চলছে : মুকুল রায়

দীপক দেবনাথ, কলকাতা:

বাংলায় তোষণের রাজনীতি চলছে : মুকুল রায়

সংখ্যালঘু উন্নয়নের নামে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতি চলছে বলে অভিযোগ করেছেন সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া তৃণমূলের সাবেক নেতা মুকুল রায়। শুক্রবার কলকাতার ধর্মতলার রানী রাসমণি রোডে এক জনসমাবেশ থেকে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে উদ্দেশ্য করে মুকুল বলেন ‘সংখ্যালঘু উন্নয়নের নামে যেটা চলছে সেটা সংখ্যালঘু তোষণ। এতে সংখ্যালঘু উন্নতি তো হচ্ছেই না বরং তারা ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। তোষণনীতি সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দিচ্ছে। বীরভূমের কাংলাপাহাড়িতে দুর্গাপূজা বন্ধ হয়ে গেছে, হাওড়া জেলার তেহট্ট উচ্চ বিদ্যালয়ে স্বরস্বতী পূজা হয়ে গেছে। সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুরা বাংলায় তার ঐতিহ্য নিয়ে চলতো। এখানে এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে বাংলার মানুষ। এর কৃতিত্ব কেউ দাবি করতে পারে না। এর কৃতিত্ব বাংলার মানুষের। এটা রামকৃষ্ণের বাংলা, এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার করার দায়িত্ব বা কৃতিত্ব কেউ চাইতে পারে না’।

গত সপ্তাহে বিজেপিতে যোগ দেন ভারতের সাবেক এই রেলমন্ত্রী, তৃণমূলের রাজ্যসভার সাবেক সাংসদ ও তৃণমূলের নাম্বার টু’ মুকুল রায়। তারপর এই প্রথম প্রকাশ্য জনসমাবেশে যোগ দেন তিনি। বক্তব্যের পুরোটাই ছিল তৃণমূল কংগ্রেস, ওই দলের নেত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তাঁর ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জিকে ঘিরে।

তৃণমূল ছাড়ার প্রসঙ্গে মুকুল বলেন ‘অনেক ভেবে চিন্তে আমি এই বিজেপিতে যোগদান করেছি। ওটা এখন আর ‘অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস পার্টি’ (এআইটিসি) নেই, ওটা এখন লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। তাই এই কোম্পানিতে আর থাকার কারও অধিকার নেই’। তাঁর অভিযোগ ‘যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল তার একটাও পূরণ করতে পারে নি। দ্বিতীয় কারণ তৃণমূলে দম বন্ধ হয়ে আসিছল’। 

শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষাক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে মমতা বলেন ‘কৃষি ও শিল্পের সম্পর্ক হচ্ছে হাসি ও খুশির মতো। ছয় বছর পরে হাসি মিলিয়ে গেছে আর খুশির দেখাও রাজ্যের মানুষ পায়নি। কৃষিতে ছিটেফোঁটা উন্নয়ন হয়নি, পাতে দেওয়ার মতো একজন শিল্পপতিও এরাজ্যে শিল্প গড়তে আসেন নি’। 

বিনিয়োগ টানতে মমতার বিদেশ সফরকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন ‘আমাদের রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু গরমে ছুটি কাটাতে মাঝে মধ্যে লন্ডনে যেতেন। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীরও সেই রোগ ধরে গেছে। মাঝে মধ্যেই দলবল নিয়ে তিনি বিদেশে যাচ্ছেন শিল্পপতি আনতে। কয়েকদিন আগে লন্ডন ঘুরে এলেও ফের তিনি লন্ডনে যাচ্ছেন। জ্যোতি বসু কম লোক নিয়ে গেলেও মমতা ব্যানার্জি সাংবাদিক, তাদের স্ত্রীদেরও সেখানে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন।

তাঁর অভিযোগ ‘শিক্ষাক্ষেত্রেও দলতন্ত্র ঢুকেছে। একটা কলেজেও যাঁর পড়ার রেকর্ড নেই, এমন একজন নারীকে আজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হয়েছে। স্বাস্থ্যের অবস্থা আরও খারাপ। ঘটা করে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি করা হলেও সেখানে চিকিৎসক নেই, রোগীও নেই। সামান্য ডেঙ্গুকে সামাল দিতে রাজ্য সরকার হিমসিম খাচ্ছে’।

২০০৬ সালের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে এখনকার পশ্চিমবঙ্গের তুলনা টেনে মুকুল রায় বলেন ‘আমার ২০০৬ সালের কথা মনে পড়ছে। এখনকার পশ্চিমবঙ্গ ২০০৬ সালের পশ্চিবঙ্গের মতো। একদিকে মানুষ মারা যায়, অন্যদিকে উৎসব হয়। সেদিন বাংলায় মানুষ মারা যাচ্ছিল আর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চলচ্চিত্র উৎসব করছিলেন। আর এখন ডেঙ্গুতে মানুষের প্রাণহাণি ঘটছে, অন্যদিকে মমতা চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধন করে বেড়াচ্ছেন। 

সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত অনুর্দ্ধ ১৭ বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা নিয়েও এদিন অভিযোগ তুলেছেন এই বিজেপি নেতা। মুকুল বলেন ‘বিশ্ব বাংলার ব্যানারে অনুর্দ্ধ ১৭ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। অথচ সেটা কোন সরকারি সস্থা নয়, তার মালিক অভিষেক ব্যানার্জি। জাগো বাংলার মালিকও অভিষেক’।

যদিও মুকুলের এই অভিযোগ ওঠার পরই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য সাংবাদিকের জানান ‘বিশ্ববাংলার লোগো ও ব্র্যান্ড রাজ্য সরকারের। বিশ্ববাংলা কোন ব্যক্তি মালিকানা নয়। বিশ্ববাংলা লোগো মুখ্যমন্ত্রীর সৃষ্টি। সরকারকে ব্যবহার করতে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী এতে কোন ব্যক্তির কপিরাইট নেই’। 

 

বিডি প্রতিদিন/১০ নভেম্বর ২০১৭/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর