১১ জানুয়ারি, ২০১৮ ১২:৩৮

২৯ রোহিঙ্গা মুসলিমকে আশ্রয় দিলেন পশ্চিমবঙ্গের হোসেন গাজী

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

২৯ রোহিঙ্গা মুসলিমকে আশ্রয় দিলেন পশ্চিমবঙ্গের হোসেন গাজী

মিয়ানমার থেকে অত্যাচারিত হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তাঁর সেই আবেদনের কথা মাথায় রেখেই এবার ২৯ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিলেন তাঁর রাজ্যেইর এক সমাজ কর্মী। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বারুইপুরের হরদহ গ্রামের বাসিন্দা হোসেন গাজী (৪৫), ‘দেশ বাাঁচাও সামাজিক কমিটি’ নামে একটি এনজিও চালান। কয়েকমাস আগেই মিয়ানমার থেকে ভারতে চলে আসা আটটি পরিবারের ২৯ জন সদস্যকে এখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন গাজী।  

হোসেন গাজী জানান, ‘আমি নিজে একজন ঠিকা শ্রমিক। আমাদের পৈত্রিক জমি আছে, আমি কয়েকটি সংগঠনের কাছ থেকে কিছু অর্থ সংগ্রহ করি এবং ঠিক করি যে রোহিঙ্গাদের জন্য বাসা তৈরি করে দেব’। গাজীর দাবি, ৩.২৬ লাখ রুপি খরচ করে আটটি পরিবারের থাকার জন্য দুইটি করে টিনের ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের জন্য একটি টিউবওয়েল, কূয়া ও কযেকটি শৌচাগার বানিয়ে দেওয়া হয়েছে’। 

মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় রোহিঙ্গাদের অবস্থা নিজের চোখে দেখে এসেছেন গাজী। তিনি জানান, ‘বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৯ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। কিন্তু এই ২৯ রোহিঙ্গাদের জন্য আমি কিছু করতে পারি এবং সেটাই করেছি’। 

প্রাথমিক অবস্থায় পুলিশের পক্ষ থেকে পরিদর্শন করা হয় এবং আপত্তি তোলা হয়। যদিও পরে কয়েকজন স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে পুরো কাজটি সম্পন্ন হয়েছে।
 
নির্যাতনের শিকার হয়ে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের বুধিডং এলাকার সেগাম পারা থেকে প্রথমে বাংলাদেশ, পরে ভারতে আশ্রয় নেন মোহম্মদ শাহিদুল ইসলাম (২৭)। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বারুইপুরে ওই আট রোহিঙ্গা পরিবারের ২৯ সদস্যের একজন শাহিদুল জানান, ‘আমাদের পরিবার রাখাইন থেকে পালিয়ে প্রথমে বাংলাদেশে চলে আসে। সেখানে কয়েকদিন থাকার পর আমরা দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে আসি। প্রথমে আমরা দিল্লি যাই, সেখানে শরণার্থী কার্ড জোগাড় করি। এরপর এক পরিচিত ব্যক্তির হাত ধরে আমরা হোসেন গাজীর কাছে আসি।''
 
হোসেন গাজীর আশ্রয় শিবিরে অবস্থান নেওয়া ৫০ বছরে জুবেইদা তাঁর নিজের নামের পদবীটাই ভুলে গেছেন। তিনি জানান, ‘আমরা প্রথমে বাংলাদেশ, পরে ভারতে চলে আসি। আমরা এখানে খুব শান্তিতে আছি। আমাদের অন্তত এই ভয়টা নেই যে আমাদেরকে মেরে ফেলা হবে বা ধর্ষণ করা হবে’।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সহিংসতার কারণে গত কয়েকবছর ধরেই রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিচ্ছে। তবে গত বছরের আগস্টের শেষে নতুন করে সহিংসতা তৈরি হওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। বাংলাদেশে সবমিলিয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ। অন্যদিকে ভারতে অবস্থান নিয়েছে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। যদিও দেশের নিরাপত্তার কারণেই রোহিঙ্গাদের ভারতের বসবাসের অনুমতি দেওয়া যাবে না বলে দেশটির সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়ে দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্কার জানিয়ে দেওয়া হয় ‘রোহিঙ্গারা এদেশে শরণার্থী হিসাবে থাকতে পারবে না। রোহিঙ্গা মুসলিমরা দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় হুমকি’। কেন্দ্রের ওই নীতির সমালোচনা করেই রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। 

বিডি-প্রতিদিন/১১ জানুয়ারি, ২০১৮/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর