১৪ জানুয়ারি, ২০১৮ ২১:৩৬

সবাইকে বেহুঁশ করে কলকাতার জেল থেকে পালায় সেই তিন বাংলাদেশি!

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

সবাইকে বেহুঁশ করে কলকাতার জেল থেকে পালায় সেই তিন বাংলাদেশি!

কারাগারের কুঠুরিতে অন্য বন্দী ও কারারক্ষীকে মোয়া খাইয়ে বেহুঁশ করে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানীর কলকাতার আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়েছে তিন বাংলাদেশি বন্দী। প্রাথমিক তদন্তে এখনও পর্যন্ত এই চাঞ্চল্যকর তথ্যই উঠে এসেছে। এর মধ্যে দুইজন বিচারাধীন বন্দী, অন্যজন দোষী সাব্যস্ত। এই তিন বন্দী হল ফারুক হাওলাদার (২৪), ইমন চৌধুরী (২৫) ও ফিরদৌস শেখ (২৯)। 

কারাগার সূত্রে খবর, রবিবার সকালে বন্দিদের গণনার সময় ওই তিন বন্দির না থাকার বিষয়টি নজরে আসে কারাগার কর্তৃপক্ষের। এরপরই তাদের খোঁজখজর শুরু হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। আসে পুলিশ কুকুরও। কিন্তু তিন বন্দীর কোন খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি।

জেল পালানোর ঘটনায় ইতিমধ্যেই ডিআইজি কারার নেতৃত্বে তদন্ত শুরু হয়েছে। চূড়ান্ত রিপোর্ট না আসলেও প্রাথমিক তদন্তে যে তথ্য উঠে এসেছে তা সত্যিই চাঞ্চল্যকর। জানা গেছে, ওই তিন পলাতক বন্দীকে পৃথক ওয়ার্ডে রাখার কথা থাকলেও তারা প্রত্যেকেই ছিল গ্রাউন্ড ফ্লোরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই তিন বন্দীর সাথে ছিল আরও ৭/৮ জন বন্দী। এর মধ্যে ওই তিন বাংলাদেশি বন্দীরাই প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পালানোর পরিকল্পনা করেছিল। এজন্য তারা সমস্ত আঁটঘাট বেঁধেই নেমেছিল। লোহা কাটার হ্যাকশো ব্লেড দিয়ে প্রত্যেকদিন একটু একটু করে সেই কারাগারের লোহার রড কাটতো এবং গতকাল শনিবার রাতে শেষবারের মতো রডটিকে কেটে মাথা গলার মতো জায়গা করে ওয়ার্ডের বাইরে বেরিয়ে আসে। কিন্তু ওই তিন বাংলাদেশি বন্দী পালালেও সেখানকার অন্যরা কেন তা টের পেল না? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই তদন্তকারীদের চোখ কপালে ওঠে। 

জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যায় কারাগারের ক্যান্টিন থেকে জয়নগরের মোয়া কেনে ওই তিন বন্দী। এরপর তাতে মাদক জাতীয় কোন পদার্থ মিশিয়ে বাকী ৭/৮ জন বন্দীকে খাইয়ে দেয় বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে রাতের বেলায় বাকী বন্দীরা কিছুই টের পায়নি। এমনকি ওই মোয়ার ভাগ ওয়ার্ডের প্রহরার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তার রক্ষীও পায়। এমনও মনে করা হচ্ছে যে ওই কারারক্ষী সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়ে ছিলেন, ফলে পুরো বিষয়টি তারও নজর এড়িয়ে যায়। কারাগারের যে দেওয়াল রয়েছে সেই নিরাপত্তারক্ষীও শীতের রাতে ঘুমিয়ে পড়ার কারণে তিনিও বিষয়টি টের পাননি বলে মনে করা হচ্ছে। আর এই সুযোগেই তারা পাঁচিল টপকে পালায়। কিন্তু বিশাল উচ্চতার পাঁচিল টপকাতে গায়ের শাল ও পেয়ারা গাছের সহায়তা নিয়েছিল বলে প্রাথমিক অনুমান তদন্তকারীদের। 

জানা গেছে, কয়েকদিন আগেই একটি এনজিও’এর পক্ষ থেকে শীত নিবারণের জন্য কারাগারের বন্দীদের মধ্যে শাল বিতরণ করা হয়। ওই তিন বন্দী সেই শালকে দড়ি বানিয়ে এবং পেয়ারা গাছের ডাল কেটে আঁকশি বানিয়ে তারা দোতলা বাড়ির সমান কারাগারের উঁচু পাঁচিল টপকে পালায়। কিন্তু সেসময় ওয়াচটাওয়ারে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীরাও টের পাননি ।
কারণ মনে করা হচ্ছে শীতের রাতে ওই নিরাপত্তারক্ষীও সম্ভবত ঘুমিয়ে থাকতে পারেন। 
কারাগারের পাঁচিলের গায়ে দড়ি পায়ের ছাপ দেখে তদন্তকারীদের আরও সন্দেহ হয় যে, এই অংশ দিয়েই বন্দীরা অন্য জায়গায় চলে যেতে পারে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, পাঁচিল টপকে আদি গঙ্গা সাঁতরে অন্য পারে উঠেও ওই বন্দীরা গা ঢাকা দিতে পারে কিংবা কারাগারের গা’বেয়ে পাশের রাস্তা দিয়ে সাধারণের সাথে মিশে গা ঢাকা দিতে পারে।
 
জানা গেছে, বাগেরহাটের বাসিন্দা ফারুককে ২০১৩ সালে ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে আটক করে সোনারপুর থানার পুলিশ। এর আগে দিল্লির দ্বারকাতেও একবার পুলিশের জালে ধরা পড়ে সে। বাংলাদেশের মাদারিপুরের বাসিন্দা ফিরদৌস শেখ ওরফে রানার বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগ ছিল। ওই ঘটনায় ২০১৪ সালে তাকে আটক করে সোনারপুর থানার পুলিশ। এর পর থেকেই ওই কারাগারের এক নম্বর ব্যারাকে বন্দী ছিল। অন্যদিকে ইমন চৌধুরীকে ২০১৪ সালে অপহরণ ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় আটক করে ওই একই থানার পুলিশ। পাঁচ বছরের সাজা হয়। এরপর থেকেই ঠিকানা ছিল আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের এক নম্বর ওয়ার্ড। 
ওই তিন বন্দী যাতে বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন সেদিকে লক্ষ্য রেখে ইতিমধ্যেই  বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের জেলা থানাগুলোতে তাদের ছবি পাঠিয়ে দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এই ঘটনার পরই কারাগারের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। 

এদিকে, আলিপুরের মতো একটি হাইপ্রোফাইল কারাগারে এরকম একটি ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যাচাই না করে কিভাবে ওই মোয়া কারাগারের ওয়ার্ডে পৌঁছে গেল, মোয়াতে যে মাদক জাতীয় দ্রব্য মেশানো হয়েছে বলে অনুমান তা কিভাবে বন্দীদের হাতে এল। সর্বোপরি লোহা কাটার হ্যাকশো ব্লেড কিভাবে ঢুকল। 

ইতিমধ্যেই দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্য ওই কারাগারের পাঁচ রক্ষীকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে খবর। 

বিডি-প্রতিদিন/১৪ জানুয়ারি, ২০১৮/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর