২৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ১৯:৫৬

বাংলাদেশি নারীকে শ্লীলতাহানির ঘটনার সেই বিএসএফ সদস্যকে বহিষ্কার

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

বাংলাদেশি নারীকে শ্লীলতাহানির ঘটনার সেই বিএসএফ সদস্যকে বহিষ্কার

ফাইল ছবি

মৈত্রী এক্সপ্রেসের ভিতর এক বাংলাদেশি নারীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে অভিযুক্ত ৯৯ ব্যাটলিয়ানের বিএসএফ (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী) সদস্য ভিরানা ভবিকে কর্ম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে বাহিনীর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিএসএফের আইজি (দক্ষীনবঙ্গ) আরপি এস জয়সওয়াল এই কথা জানান। পাশাপাশি তদন্তে রেল কতৃপক্ষকে বিএসএফের পক্ষ থেকে যাবতীয় সহায়তা করা হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

এদিকে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের সামনে জানান ভারতের পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ কর্মকর্তা রবি মহাপাত্র। তিনি আরও জানান, অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্যের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেবে রেল।

মহাপাত্র জানান, ‘কলকাতা স্টেশন থেকে ‘এন্ড টু এন্ড’ ইমিগ্রেশনসহ যাবতীয় পরীক্ষার পরই ট্রেনটি বিএসএফ’এর আওতায় চলে যায়। যাত্রীরা ট্রেনের মধ্যে প্রবেশের পরই ট্রেনের দরজা বন্ধ করে দেয় এবং ভারতের অংশে শেষ স্টেশন গেদে গিয়ে ট্রেনের দরজা খোলা হয়। ওই চলন্ত ট্রেনের মধ্যেই বিএসএফ সদস্যের বিরুদ্ধে এক বাংলাদেশি নারীকে শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ উঠে।

উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার মৈত্রীর মধ্যে ৩৫ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশি নারীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে বিএসএফ’এর ওই সদস্যের বিরুদ্ধে। জানা যায়, কলকাতার চিৎপুর স্টেশন থেকে সকাল ৭ টা ১০ মিনিটের দিকে ট্রেনটি ছেড়ে আসার পর দমদম ও ব্যারাকপুর-এর মাঝে এই ঘটনাটি ঘটে। ট্রেনের ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে নিজের আসনের দিকে আসার পথে অভিযুক্ত সদস্য ওই নারীর গায়ে অসৎ উদ্যেশ্য নিয়ে স্পর্শ করছিলেন ও আপত্তিকর ব্যবহার করছিলেন বলে অভিযোগ। দুইজনের মধ্যে ধস্তাধস্তিতে ওই বাংলাদেশি নারী পড়ে যায় এবং হাঁটুতে সামান্য আঘাত পান বলেও খবর। এরপরই ওই নারী বিষয়টি তার স্বামীকে জানান। পরে স্বামী ট্রেনের মধ্যেই টিকিট পরীক্ষক (টিটিই)-কে জানান, কিন্তু ওই টিকিট পরীক্ষক তাকে লিখিত অভিযোগ জানাতে বলেন। সেই মতো গেদে স্টেশনে (ভারতীয় সীমানায় শেষ স্টেশন) নেমে স্টেশন মাস্টারের কাছে অভিযুক্ত সদস্যের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ নম্বর ধারায় (মোলেস্টশন) লিখিত অভিযোগ জানান ওই নারী। অভিযোগের পরই মুহূর্তের মধ্যে সেই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনায় যথেষ্ট শোরগোল পড়ে যায় রেল, বিএসএফ, জিআরপিসহ বিভিন্ন এজেন্সিগুলির মধ্যে। খোঁজ চলে অভিযুক্ত সদস্যের। এদিন বিএসএফের পক্ষ থেকে অভিযুক্তকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে খবর। 

মৈত্রী এক্সপ্রেসই হল ভারতের মাটি থেকে ছাড়া প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রেন, যেটি 
সরাসরি অন্য রাষ্ট্রে গিয়ে পৌঁছয়। ২০০৮ সালের এপ্রিল-এ যাত্রা শুরুর পর থেকেই এই ট্রেনটি কলকাতা (চিৎপুর) স্টেশন থেকে ছেড়ে সোজা চলে যায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। সেদিক দিয়ে মৈত্রী এক্সপ্রেসের একটা আলাদা গুরুত্ব আছে। 

স্বাভাবিকভাবেই এই রকম একটি ট্রেনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। নিরপত্তা নিয়ে যাত্রীরাও যথেষ্ট আতঙ্কিত। যদিও ‘মৈত্রী’র যাত্রীদের নিরপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার বা বিপদের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে সমস্ত যাত্রীদের আশ্বস্ত করেছেন রবি মহাপাত্র। ওই ঘটনা ভারতের পক্ষে যে যথেষ্ট অস্বস্তিকর সেকথা স্বীকার করেই রেলের এই কর্মকর্তা জানান, ‘এতদিন ধরে দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও কোনোদিনই এরকম অভিযোগ আসেনি। গতকালই প্রথম এরকম একটি অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটল। বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে আর এই ধরনের ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করতে বিএসএফ-এর সাথেও কথা বলা হচ্ছে’। 

দুই দেশের মধ্যে ট্রেন বাড়ানো নিয়ে এদিন তিনি জানান, ‘বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে দুইটি ট্রেন চলাচল করে। মৈত্রী আগে থেকেই চলছিল, গত বছর থেকে ‘বন্ধন’ এক্সপ্রেস যাতায়াত করছে। ভবিষ্যতে যদি চাহিদা থাকে তবে আরও নতুন ট্রেন বাড়ানোর ব্যাপারে বিবেচনা করা হতে পারে’। 

বিডি-প্রতিদিন/২৩ জানুয়ারি, ২০১৮/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর