১৯ এপ্রিল, ২০১৮ ০৯:৪৬

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনার গড়ার প্রস্তাব

দীপক দেবনাথ, কলকাতা:

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনার গড়ার প্রস্তাব

পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ভাষা শহীদ মিনার তৈরীর জন্য বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন’এর কাছে প্রস্তাব রেখেছেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। 

বুধবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সবুজকলি সেন সহ বিশ্বভারতীর অন্য কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে এই প্রস্তাব দেন আসাদুজ্জামান নূর। 

সংস্কৃতি মন্ত্রী জানান ‘এখন আর কেবলমাত্র বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে সারা বিশ্বেই নানাভাবে এই দিনটি উদযাপন করা হয়। বিশ্বভারতীতেও মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়। তাই সেটি যাতে আরও সুন্দরভাবে উদযাপিত হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা শহীদ মিনার তৈরির প্রস্তাব দিয়েছি’। 

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মে মাসের শেষে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দিরা ভবনের পিছনের জমিতে বাংলাদেশের অর্থায়নে ১১০০০ স্কোয়ার মিটার এলাকা জুড়ে গড়ে উঠা নব নির্মিত বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন হতে চলেছে। নতুন এই ভবনের কর্মপদ্ধতি ও কার্যকলাপ সহ বিভিন্ন রূপরেখা চূড়ান্ত করতেই এদিন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিশ্বভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠকে বসেন নূরের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে আগত প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। 

সংস্কৃতি মন্ত্রী ছাড়াও ওই প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মহম্মদ নাসিরুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ পাবলিক লাইব্রেরীর মহাপরিচালক আশিষ কুমার সরকার, বাংলাদেশ ন্যাশনাল মিউজিয়ামের মহাপরিচালক ফয়জল লতিফ চৌধুরি, স্থাপত্যবিদ এহসান খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মহম্মদ নাসিরুদ্দিন ইউসুফ, কার্টুনিস্ট রফিকুন নবি প্রমুখ। 
 
বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রী জানান ‘দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতেই আনুষ্ঠানিকভাবে এই বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনের পর এর দায়িত্ব পুরোপুরিভাবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করা হবে। ভবনটির পুরো মনিটরিং’এর দায়িত্ব থাকবে বিশ্বভারতীয় কর্তৃপক্ষের ওপর। যদিও বাংলাদেশের পক্ষে একজন প্রতিনিধিকেও রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে গবেষণা বিশেষ করে রবীন্দ্র কেন্দ্রিক গবেষণার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।
 
এদিন বৈঠকের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ঘুরে দেখেন প্রতিনিধি দলটি। পরে সবুজকলি সেনের হাতে বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক ম্যাগাজিন ও বাংলাদেশের খ্যাতনামা লেখকের লেখা স্মরণিকা বই এবং চিত্র শিল্পী জামাল’এর ১০১ টি অঙ্কন চিত্রের বই তুলে দেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার বিকালে নির্মানাধীন বাংলাদেশ ভবনের কাজ পরিদর্শন করেন  বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটির সদস্যরা। সবুজকলি সেনের সাথেও সাক্ষাত করেন মন্ত্রী সহ প্রতিনিধি দলটি। পরে মন্ত্রী জানান ‘দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এই ভবনের উদ্বোধনের ব্যপারে প্রচেষ্টা চলছে’। 

অন্যদিকে সবুজকলি সেন জানান ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় করতে পারলেই ৩০ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এই ভবনের উদ্বোধন হতে পারে’। তাঁর আশা ‘এই ভবনের মধ্যে দিয়ে দুই বাংলার সুসম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে’। 

প্রসঙ্গত ২০১০ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময়ে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগেই ওই ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় দুই দেশ। এর পর, শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া জমি ও বাংলাদেশ সরকারের ২৫ কোটি টাকা অর্থায়নে নির্মিত হয় ভবনটি। দ্বি-তল বিশিষ্ট বাংলাদেশ ভবনটিতে থাকছে ৪৫৩ আসনের বিশাল অডিটোরিয়াম, এছাড়াও মিউজিয়াম, ক্লাসরুম, লাইব্রেরী, ফ্যাকাল্টি রুম, সেমিনার হর, ক্যাফেটিরিয়া, সহ থাকছে বিশাল আয়োজন। 
ভবনটিতে থাকছে প্রায় ১০ কিলোওয়াটের সৌরবিদুৎ উৎপাদন ব্যাবস্থাও।   

জানা গেছে, ভবনটিতে বাংলাদেশের শিলাইদহে থাকাকালীন বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের রচিত কবিতা, গান ও বিভিন্ন মুহুর্তের ছবি সহ বাংলাদেশের ইতিহাস রাখা হবে। ঠাঁই পাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের ইতিহাস। প্রধানত ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে সাংস্কৃতিক বুঝাপড়া নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজ করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে এটি।

বিডিপ্রতিদিন/ ই-জাহান

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর