১ আগস্ট, ২০১৮ ১০:১১

জটিল অস্ত্রোপচারে সফল হলেন কলকাতার চিকিৎসকরা

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

জটিল অস্ত্রোপচারে সফল হলেন কলকাতার চিকিৎসকরা

একটা-দুটি নয়, পর পর দশটি সুঁচ বের করা হল ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীর গলা থেকে। আর এই সফল জটিল অস্ত্রোপচার করলো কলকাতার চিকিৎসকেরা। 

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার বাসিন্দা অপরূপা বিশ্বাস। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী অপরূপার গলায় আটকে ছিল এই দশটি সুঁচ। গত ২১ জুলাই স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পরই গলায় অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করে অপরূপা। সাথে সাথেই বাবা-মা’কেও বিষয়টি জানায় সে। পরিবারের সদস্যদের প্রাথমিক ধারণা ছিল ঠাণ্ডা লেগেই হয়তো মেয়ের গলায় ব্যাথা হয়ে থাকতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি তারা। কিন্তু খেতে বসে হঠাৎ করেই অচেতন হয়ে পড়ার পরই টনক নড়ে বাবা-মায়ের। এক মুহূর্ত দেরি না করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে। সেখানেই এক্সরে করে দেখা যায় অপরূপার খাদ্যনালী ভেদ করে দিয়ে ফুসফুস, লিভারের দিকে তাক করে রয়েছে বেশ কয়েকটি সুঁচ। যে কোনও মুহূর্তে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে কিশোরীর একাধিক অঙ্গে। এর পরেই গত বৃহস্পতিবার ওই কিশোরীকে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ভর্তি করা হয় নাক-কাল-গলা (ইএনটি) বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. মনোজ মুখার্জির অধীনে। মঙ্গলবার ওই হাসপাতালেই জরুরি ভিত্তিতে ওই কিশোরীর অস্ত্রোপচার করা হয়। প্রায় তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অস্ত্রোপচার শেষে উদ্ধার করা হয় সুঁচগুলি।  

অস্ত্রোপচার শেষে চিকিৎসক মনোজ মুখার্জি জানান, ‘অপরূপা আপাতত বিপদমুক্ত। তবে আগামী দুই দিন পরে আবার এক্সরে করে দেখতে হবে খাদ্যনালীর মধ্যে কিছু রয়ে গেল কি না। তারপরই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
 
ইএনটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. অতীশ হালদার জানান, ‘সুঁচগুলো যদি খাদ্যনালির ভেতর সীমাবদ্ধ থাকত, তবে ইসোফেগোসস্কোপির মাধ্যমে সেগুলো বের করা যেত। কিন্তু যেহেতু সুঁচ গুলি খাদ্যনালি ভেদ করে ফুসফুস এবং হৃদপিন্ডের দিকে এগিয়ে রয়েছে, তাই কার্ডিয়াক সার্জেনদের সহায়তায় এই জটিল অস্ত্রোপচার করা  হয়েছে।’

তবে কী কারণে ওই কিশোরীর শরীরে এতগুলি সুঁচ গিয়েছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে অস্ত্রোপোচারের চিকিৎসক মনোজ মুখার্জি জানান, সুঁচগুলি যেভাবে অপরূপার শরীর থেকে বার করা হয়েছে তা কোনও ভাবেই গিলে খায়নি ওই কিশোরী। সুঁচগুলি বাইরে থেকে নাবালিকার গলায় ফুঁটিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। আর তা থেকেই সন্দেহ করা হচ্ছে কোন তান্ত্রিক কিংবা সোশ্যাল সাইটে কোন ছবি দেখেই মৃত দাদাকে ফিরে পাওয়ার আশায় এই কাজ করে থাকতে পারে ওই কিশোরী। কারণ কয়েকদিন আগেই তার দাদার মৃত্যু হয়। আর দাদার মৃত্যুর ঘটনায় মানসিক অবসাদের কারণে ভুগছিল ওই কিশোরী। 

তবে প্রকৃত কারণ জানতে মনোবিদের সাহায্য নেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন চিকিৎসকরা। আপাতত ওই কিশোরীকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

বিডি-প্রতিদিন/০১ আগস্ট, ২০১৮/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর