৩০ আগস্ট, ২০১৮ ১৫:০২

প্রথম দেখাতেই প্রেম, এরপর...

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

প্রথম দেখাতেই প্রেম, এরপর...

বিশ্বজিৎ পোদ্দার

ভারতের দক্ষিণ কলকাতার জোকা অঞ্চলের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ পোদ্দার (২৯)। পেশায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পরিবেশ দফতরের কর্মী। গত ২৩ জুলাই বীরভূম জেলার তারাপীঠ থেকে কলকাতায় ফিরছিলেন বিশ্বজিৎ। প্রথমে তারাপীঠ থেকে বর্ধমান লোকালে চাপেন তিনি। ট্রেনের কামরায় ঠিক উল্টো দিকের আসনে বা-মাকে সাথে নিয়ে বসেছিলেন এক তরুণী। তরুণীকে এক দেখাতেই মনে ধরে বিশ্বজিতের।

বারে বারেই চোখ পড়ছিল ওই তরুণীর ওপর। তারাপীঠ থেকে বর্ধমান পর্যন্ত প্রায় তিন ঘন্টার পথ এভাবেই আসেন বিশ্বজিৎ। এরপর বর্ধমান স্টেশনে নেমে ট্রেন পাল্টে হাওড়াগামী ট্রেন ধরেন বিশ্বজিৎ এবং ট্রেনে উঠে নিজের আসনে বসেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ওই ট্রেনেও তার উল্টোদিকের আসনে বসেন ওই তরুণীর পরিবার। স্বাভাবিকভাবেই গল্পেও নতুন মোড় নেয়। বিশ্বজিৎ এবার একটু সাহস করেই ওই তরুণীর সাথে আলাপ জমানোর চেষ্টা করেন। একসময় নিজের ফোন নাম্বার ওই তরুণীকে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু বাবা-মা সাথে থাকায় তা আর হয়ে ওঠেনি। তিনিও ওই তরুণীর ফোন নাম্বার চেয়েছিলেন যদিও কোন্নগর প্ল্যাটফর্মে নামার পর বাবা-মা’এর নজর এড়িয়ে অস্ফুটে নাম্বার দিয়েছিলেন কিন্তু সেটাও ভাল করে বুঝতে পারেননি বিশ্বজিৎ। আর এই ঘটনার পর থেকেই ওই স্বপ্নের সুন্দরীকে আর ভুলতে পারছেন না বিশ্বজিৎ।

বিশ্বজিৎ জানিয়েছেন, দুই মাস আগে যে জামা পরে তার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল ওই তরুণীর, প্রতিদিনই সেই একই টি-শার্ট পরে তার স্বপ্নের সুন্দরীর খোঁজে ট্রেনে চাপেন তিনি। বিশ্বজিতের দাবি, ওই তরুণীও তার প্রতি মুগ্ধ হয়েছিল। এমনকি তাকে নিজের মোবাইল নাম্বারও দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তরুণীর তার বাবা-মায়ের সাথে থাকায় তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

এরপর ওই তরুণীকে খুঁজে পেতে এখন নতুন ভাবনা শুরু বিশ্বজিতের। অফিস টাইমের পর প্রতিদিন হাওড়া থেকে কোন্নগর পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার ট্রেনে চেপে আসেন বিশ্বজিৎ। কোন্নগরে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। তার ধারণা ওই তরুণীর বাড়ি কোন্নগরে, যদিও ওই পরিবারের মুখে বালি স্টেশনের নামও তিনি শুনতে পান। আর সেই সূত্র ধরেই কোন্নগর থেকে বালি প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রায় চার হাজার পোস্টার সাঁটিয়েছেন বিশ্বজিৎ।

প্রথম দিন যে পোশাক পরে ওই তরুণীকে দেখেছিলেন সেই টি-শার্ট এবং পিঠে থাকা একটি কালো রঙের ব্যাগ-এই ছবি তুলেই পোস্টার তৈরি করে পোস্টারের মাথায় বড় বড় অক্ষরে লেখা হয় ‘কোন্নগরের কনে’, আর নিচে বিশ্বজিতের ফোন নাম্বার। এরপর তা কোন্নগর (কোন্নগর-হিন্দমোটার-উত্তরপাড়া-বালি) থেকে বালি পর্যন্ত চারটি রেল স্টেশনে সেই পোস্টার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বপ্নের ওই সুন্দরীকে উদ্দেশ্য করে বিশ্বজিতের ওই পোস্টারেলেখা রয়েছে, চিনতে পেরেছো তো, সেদিন দেখা হয়েছিল ট্রেনে, আই উইল বি ওয়েটিং ফর ইউ...।'

যাতে ওই তরুণীও একবার দেখলেই চিনতে পারেন এবং তার সাথে যোগাযোগ করেন। তবে এখানেই থেমে থাকেননি বিশ্বজিৎ, তরুণীকে খুঁজে পেতে বন্ধুদের পরামর্শে সেই ট্রেনের গল্প নিয়ে ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যর ভিডিও তৈরি করেন বিশ্বজিৎ। এরপর গত ১৪ আগস্ট তা ইউটিউবে আপলোডও করে দেওয়া হয়। যদিও ইতিমধ্যেই দুই সপ্তাহ সময় কেটে গেছে।বিশ্বজিতের ফোনে এখনও ওই তরুণীর ফোন এসে পৌঁছায়নি।

বিশ্বজিৎ বলেন, আমার এই কাজের জন্য আমার পরিবার ও বন্ধুরা আমাকে পাগল বলে। আমি নিজেও জানি যে আমি যেটা করছি তা পাগলামোই। কিন্তু আর কোন উপায় নেই। এটা অনেকটা প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা। আমি কিছুতেই তাকে মন থেকে মুছে ফেরতে পারছি না।

তবে বিশ্বজিতের বিশ্বাস, এই ভিডিও দেখেই ওই তরুণী তার সাথে একবার যোগাযোগের চেষ্টা করবেন। ওই তরুণীকে বিপদে ফেলা বা তার সম্মানহানি করার কোন ইচ্ছাই তার নেই বলেও জানান বিশ্বজিৎ।

তিনি বলেন, আমি এই সব কর্মকাণ্ড করছি তার একটাই কারণ যাতে ওই তরুণী বুঝতে পারেন যে আমি তাকে খুঁজছি। এবং তিনি যদি চান তবে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর