২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০১:০০

ভারতে দিদিমাকে দেখতে গিয়ে অপহৃত বাংলাদেশি কিশোরী

দীপক দেবনাথ, কলকাতা:

ভারতে দিদিমাকে দেখতে গিয়ে অপহৃত বাংলাদেশি কিশোরী

প্রতীকী ছবি

পাসপোর্ট বা ভিসা কোনটাই নেই, এদিকে দিদিমাকে দেখার জন্য উতলা হয়ে উঠেছে মন। তাই দালালের সহায়তায় অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ এক বাংলাদেশি কিশোরীর। আর ভারতে প্রবেশ মাত্রই সেই কিশোরীকে জিম্মি করে মুক্তিপণ চাওয়ার অভিযোগ উঠল এক ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁ থানার সাতভাইকালী তলা এলাকায়। 

বাংলাদেশি কিশোরীকে অপহরণের অভিযোগ শনিবারই তিন ভারতীয় নারীকে গ্রেফতার করেছে রাজ্যটির বনগাঁ থানার পুলিশ। তবে অপহরণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ভারতীয় যুবক ফটিককে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে দিদিমার বাসায় আসার জন্য ওই বাংলাদেশি কিশোরী অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এ কাজে তাকে সহায়তা করে ফটিক নামে এক ভারতীয় দালাল। এবাবদ তাকে রুপিও দেওয়া হয়। কিন্তু সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করা মাত্রই ওই কিশোরীকে ফটিক জিম্মি করে বলে অভিযোগ। 
বনগাঁয় ওই কিশোরীকে আটকে রেখে ১ লাখ রুপি মুক্তিপণের দাবি করে ফটিক। পাশাপাশি কিশোরীর ওপর ফটিকের মা ও দুই বোন অত্যাচার চালাতে থাকে বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় রুপির জন্য কৃষ্ণনগরে নিজের মামা অর্জুন দেবেনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই কিশোরী। ভাগ্নিকে অপহরণের কথা শুনে তাকে মুক্ত করতে অর্জুনও বনগাঁয় চলে আসেন। এসময় ফটিক ও তার কয়েকজন সঙ্গী অর্জুনের ওপর হামলা চালায় ও তাকে ব্যাপক মারধর করে বলে অভিযোগ। কেবল তাই নয়, অর্জুন দেবনাথের ব্যাঙ্কের এটিএম কার্ড হাতিয়ে নিয়ে ছয় হাজার রুপিও তুলে নেয় বলে অভিযোগ। কিন্তু তাতেও থেমে না থেকে অর্জুনের কাছ থেকে আরও অতিরিক্ত অর্থ দাবী করতে থাকে ফটিক। এসময় রুপি সংগ্রহের নামে সেখান থেকে রেরিয়ে বনগাঁ থানায় যান কিশোরীর মামা অর্জুন এবং পুলিশের কাছে ফটিক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান।

অভিযোগ পেয়েই শনিবার অভিযুক্ত ফটিকের বাড়িতে অভিযান চালায় বনগাঁ থানার পুলিশ। সেখান থেকেই উদ্ধার করা হয় ওই বাংলাদেশি কিশোরীকে। তবে পুলিশের হাত থেকে প্রধান অভিযুক্ত ফটিক পালাতে সক্ষম হলেও আটক করা হয় তার মা ও দুই দিদিকে। তাদের বিরুদ্ধে ওই বালাদেশি কিশোরীকে মারধরসহ একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যাক্তিদের এদিন দুপুরে বনগাঁ মহুকুমা আদালতে তোলা হয়। 
যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ফটিকের দুই দিদি। এদিন সংবাদ মাধ্যমের সামনে তারা বলেন ভাইয়ের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। ভাই যদি অপরাধ করে থাকে তবে তার শাস্তি হওয়া উচিত বলেও জানান তারা। 

অন্যদিকে, অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে অভিযুক্ত বাংলাদেশি কিশোরীকে এদিনই বিধাননগর জুভেনাইল কোর্টে তোলা হয়। আদালতের নির্দেশে পরে শিশু হোমে প্রেরণ করা হয় ওই কিশোরীকে।  
এপ্রসঙ্গে ওই কিশোরী জানান ‘আমার সামনেই আমার মামাকে ফটিক নামের এক যুবক ও তার সঙ্গীরা মারধর করে এবং বলে রুপি না দিলে আমাকে মুক্ত করা হবে না।’ 

ওই কিশোরী আরও জানান ‘আমাকে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে বাইরে ফটিকের মা ও দুই বোন বাইরে পাহারা দিত। ফটিক ও তার কয়েকজন সঙ্গী আমাকে মারধর করতো।’ 
অর্জুন দেবনাথ জানান ‘বোনকে ছাড়িয়ে আনতে গেলে ফটিকের লোকেরা আমাকে একটি জঙ্গলের মধ্যে আটকে রাখে ও এক লাখ রুপি আনতে বলেও মারধর করতে থাকে। একসময় আমাকে এটিএম’এ নিয়ে আমার কাছ থেকে ছয় হাজার ভারতীয় রুপি ছিনিয়ে নেয়। এরপর আমি পুলিশের কাছে এসে অভিযোগ জানানোর পর পুলিশের সাহায্যে বোনকে মুক্ত করি।’

বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর