২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ২৩:৩৬

ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্ক আরও উন্নত করার পক্ষে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী

দীপক দেবনাথ, কলকাতা:

ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্ক আরও উন্নত করার পক্ষে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার পক্ষে অভিমত দিয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিকভাবে বন্ধনশীল এই দুই দেশেরই এগিয়ে আসা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

রবিবার আগরতলা প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে ‘ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক সুদৃঢ় করণে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক একদিনের একটি সেমিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে বিপ্লব দেব এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। উভয় দেশই অগ্রগতির পথে চলেছে। আমরা হয়তো দুইটি পৃথক রাষ্ট্র কিন্তু ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভুটান এমনকি ইন্দোনেশিয়া’র মধ্যে সংস্কৃতি কমবেশি প্রায় একই ধরনের। এই সংস্কৃতির দ্বারাই আমরা একত্রিত।’

বাংলাদেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান তুলে ধরার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে শেখ হাসিনা সেদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।’
 
দক্ষিণ ত্রিপুরায় ফেনী নদীর ওপর নির্মানাধীন সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হলেই বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্য রাজ্যগুলির সাথে বাকী বিশ্বের মধ্যে পণ্য পরিবহন আরও সহজতর হবে বলে এদিন আশা প্রকাশ করেছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। 

মুখ্যমন্ত্রী জানান ‘ফেনী সেতু তৈরি হয়ে গেলে সাব্রাম উত্তর-পূর্ব ভারতের গেটওয়ে-তে পরিণত হবে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এই সেতু নির্মাণের অগ্রগতির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। ইতিমধ্যেই ১৯টি পিলার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং আগামী বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই এই সেতুর কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যাবে এবং এর ফলে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে প্রবেশ করাও সহজতর হয়ে যাবে। 

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী জানান ‘ত্রিপুরা ও উত্তরপূর্ব ভারতের অন্য রাজ্যগুলির উন্নয়নের লক্ষ্যে একাধিক অবকাঠামো সম্পর্কিত পণ্য বাংলাদেশের মাটি ব্যাবহার করেই সেদেশ থেকে আমদানি বা সেদেশে রপ্তানি করা যাবে। বাংলাদেশ সরকারও পরিবহন ব্যাবসার মাধ্যমে বিপুল রাজস্ব আদায় করতে পারবে।’ এক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য কমানোর ক্ষেত্রে তিনি বলেন মাঝপথে পণ্য লোডিং-আনলোডিং না করে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি পণ্য আগরতলায় পৌঁছানো সম্ভব হলে পণ্যের দাম অনেকটাই কমে যাবে। বিষয়টি নিয়ে সরকার চিন্তাভাবনা করছে বলেও জানান তিনি।

দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের সদর্থক ভূমিকা পালনের ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, সীমান্তের দুই পাড়েই যদি সঠিক চিন্তাভাবনার বীজ রোপণ করা হয় তবে উভয় দেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হতে বাধ্য। আর এক্ষেত্রে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা উচিত।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরার উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিশেষ প্রতিনিধি শাবান মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আতিউর রহমান, সাবেক সাংসদ আর.এ.এম ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সভাপতি মোহম্মদ শফিউল ইসলাম, পটুয়াখালি চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি মইনুউদ্দিন আহমেদ, আগরতলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক প্রণব কুমার সরকার প্রমুখ।

দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে আতিউর রহমান জানান সীমান্ত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ট্রেড ব্যারিয়ার ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৈষম্য দূর করার মধ্যে দিয়েই ভারত ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হতে পারে। যদিও বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধিতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাই এখনও বড় বাধা বলে অভিমত তাঁর। দুই দেশই সাম্প্রতিক সময়ে কয়েক দশক পুরোনো ছিটমহল ও সামুদ্রিক সমস্যার সমাধান করেছে বলেও এদিন জানান তিনি। 

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করে ইকবাল সোবহান চৌধুরী জানান, ‘ভারতের সাথে বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধি উভয় দেশের অর্থনীতিতেও অগ্রগতি আনবে। পারস্পরিক সহায়তার ভিত্তিতে দুই দেশই বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছে বলেও জানান তিনি। যদিও দুই দেশের মধ্যে ভিসার আরও সরলীকরণ করা প্রয়োজন বলেও অভিমত তাঁর।

বিডি-প্রতিদিন/ ই-জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর