২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ২১:৪৪

বাংলাদেশ ভবনের দায়িত্ব এবার থেকে বিশ্বভারতীর

দীপক দেবনাথ, কলকাতা:

বাংলাদেশ ভবনের দায়িত্ব এবার থেকে বিশ্বভারতীর

পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শান্তিনিকতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনির্মিত বাংলাদেশ ভবন’এর দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের হাতে। 

শনিবার 'বাংলাদেশ ভবন' এর নির্মাণকারী সংস্থা ভারত সরকারের ‘ন্যাশনাল বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন’ (এনবিসিসি) এই ভবনের দায়িত্ব হস্তান্তর করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে। 

এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য সবুজকলি সেন, বাংলাদেশ ভবনের কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, এনবিসিসি’র প্রকৌশলী চন্দন সেন সহ অন্যরা।
 
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের লক্ষ্যে শান্তিনিকতনে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৪ সালের মার্চে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি মেমোরান্ডাম অব আন্ডারস্ট্যাডিং (মউ) চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। পরে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া জমি ও বাংলাদেশ সরকারের ২৫ কোটি টাকা অর্থায়নে নির্মিত হয় ভবনটি। ভবনটি তৈরি করে এনবিসিসি। 

এরপর গত ২৫ মে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এই ভবনটির উদ্বোধন করা হয়। এরপর বাংলাদেশ ভবনের গ্রন্থাগার সকলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু নিরাপত্তা সহ অন্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ না হওয়ায় সকলের জন্য খুলে দেওয়া যাচ্ছিল না শান্তিনিকেতনের আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ ভবনের সংগ্রহশালা বা জাদুঘরটি। অবশেষে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সর্বসাধারনের জন্য জাদুঘরের দরজাও সকলের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়।
 
বাংলাদেশ ভবনের কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন ‘বুধ ও বৃহস্পতিবার এবং সরকারি ছুটির দিন ছাড়া সপ্তাহের অন্য দিনগুলিতে এই জাদুঘর খোলা থাকবে। জাদুঘরের জন্য আপাতত কোনও প্রবেশমূল্য লাগছে না, তবে নিরাপত্তার স্বার্থেই প্রবেশের সময় ব্যক্তির সচিত্র পরিচয়পত্র লাগবে। ভবনের মধ্যে সংগ্রহশালাটি খোলা থাকবে সকাল ১০.৩০ টা থেকে বিকাল ৪.৩০ পর্যন্ত এবং গ্রন্থাগার খোলা থাকবে সকাল ১০.৩০ মিনিট থেকে বিকাল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত।’ 

শান্তিনিকতেন গড়ে ওঠা বাংলাদেশ ভবনটিতে বাংলাদেশের শিলাইদহে থাকাকালীন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত কবিতা, গান ও বিভিন্ন মুহুর্তের ছবি সহ বাংলাদেশের ইতিহাস রাখা হয়েছে। ঠাঁই পেয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ডাক টিকিট, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকারের একাধিক নির্দেশন রয়েছে এখানে। এছাড়াও সুলতান যুগের বিভিন্ন মুদ্রা, ব্রিটিশ আমলের মুদ্রা, পনেরো-ষোল শতকের মাটি খনন করে প্রাপ্ত টেরাকোটার মূর্তিসহ একাধিক মূল্যবান প্রত্মতাত্মিক নির্দশন রয়েছে এখানে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ ভবনকে ঘিরে পর্যটকদের মধ্যে কৌতুহলও শেষ নেই। 

এ ব্যাপারে সবুজকলি সেন জানান ‘বাংলাদেশকে জানতে হলে বা গবেষণা করতে হলে শান্তিনিকেতনের বাংলাদেশ ভবনে আসতেই হবে। তাঁর অভিমত বাংলাদেশ সম্পর্কিত এরকম গ্রন্থাগার ভারতে আর কোথাও নেই। 

সংগ্রহশালাটিতেও অবিভক্ত বাংলার ২ থেকে ৩ হাজার বছরের পুরোনো ইতিহাস সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস সর্বোপরি রবীন্দ্রনাথ ও শিলাইদহের ইতিহাস সম্বলিত এই সংগ্রহশালাটি দর্শকদের মন কেড়েছে। তাঁর আশা গবেষণার ক্ষেত্রে এই ভবনটি যথেষ্ট সহায়ক হবে।’ 

এদিকে বাংলাদেশ ভবনের বাইরে দুই প্রান্তে দুইটি মুর‌্যাল তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর একটি করবেন পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট শিল্পী যোগেন চৌধুরী। অন্যটি করবেন বাংলাদেশেরই একজন বিশিষ্ট শিল্পী। 

বিডি-প্রতিদিন/ ই-জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর