২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১৫:৩২

চুপ, আমি এমপির জামাই

অনলাইন ডেস্ক

চুপ, আমি এমপির জামাই

প্রতীকী ছবি

শিক্ষক পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু এখন যার কথা বলা হচ্ছে তিনি শিক্ষক হয়েও সেই পরিচয় দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। সবার কাছে তিনি পরিচয় দেন, ''আমি সাবেক এমএলএ-এর জামাই।'' আর ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায়। ইংরেজি মেম্বর অব পার্লামেন্ট' (এমপি) বা মেম্বর অব দ্য লেজিসলেটিভ এসেম্বলি'র (এমএলএ) বাংলা প্রতিশব্দ সংসদ সদস্য। যাকে ছোট বাক্যে বাংলাদেশে বলা হয়, এমপি।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, শিক্ষক পরিচয় নিয়ে সেই প্রাক্তন এমএলএ-এর জামাই জাহিদুল ইসলামের কোনো গর্ব নেই, বরং স্কুল থেকে চায়ের দোকান— সর্বত্রই নিজের প্রথম পরিচয়টুকু দিয়েই বাড়তি কদরের খোঁজ করেন বলে অভিযোগ। স্কুলের সহ-শিক্ষকেরা তাই বলছেন, ‘ফলও মেলে তাতে, তাঁর সাত খুন মাফ!’ 

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে সরিয়ে চেয়ার দখল করে তিনি তাই অনায়াসে চেয়ার আঁকড়ে বসে আছেন। তবে,
ভগবানগোলার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক চাঁদ মোহাম্মদের সেই জামাই জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সম্প্রতি  অভিযোগ জমা পড়েছে জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরে।

লালগোলা দক্ষিণ চক্রের ডিহিপাড়ার খাদেম আলি মেমোরিয়াল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুর রেজ্জাক। অভিযোগ, তাতে প্রথমেই আপত্তি জানিয়ে ছিলেন জাহিদুল। মাস খানেকের মধ্যেই আচমকাই তিনি ঘোষণা করেন, তিনিই আপাতত প্রধান শিক্ষক! তার জেরেই কখনও বরখাস্ত করেছেন চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের। স্কুলের নোটিস বোর্ডে টাঙিয়ে দিচ্ছেন নতুন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি।

জাহিদুলের এমন কর্মকাণ্ড কানে গেছে জেলা শিক্ষা দফতরের পরিদর্শকেরও। ডিআই মুর্শিদাবাদ পুরবী দে বলছেন, ‘‘ওই শিক্ষক অন্যায়ভবেই দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁকে সরকারি কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কারণ নিয়ম অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা তাঁর নেই।’’ ডি আই জানিয়ে দিয়েছেন, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের যে বিজ্ঞপ্তি জারি তিনি করেছেন তাও নিয়মের বাইরে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সহকারী পরিদর্শকের কাছে জবাবদিহিও চেয়েছেন তিনি। ডিআই বলেন, ‘‘এ বিষয়ে এসআই’কে বহুবার আমি এসে দেখা করতে বলেছি, তিনি কনো উত্তরই দেননি।’’ তবে স্থানীয় এসআই, দীপঙ্কর রায়ের একটাই কথা, ‘‘ আমি কোনও কথা বলব না।’’

তবে চাঁদ মোহম্মদ তাঁর জামাইয়ের কোনও দোষ দেখছেন না। তাঁর সার্টিফিকেট, ‘‘জাহিদুল অন্যায় কিছু করছে না ওঁর কাছে এসআই-এর নির্দেশ আছে বলেই জানি।’’

পাঁচ বছর আগে ওই বিদ্যালয়ে ভূগোল বিভাগে শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছিলেন জাহিদুল ইসলাম, অভিযোগ তারপর থেকেই নানা আরাজকতার সৃষ্টি করছেন। তাঁকে সতর্ক করতে গেলেই মেলে পাল্টা হুমকি। স্কুল সূত্রে জানা গেছে, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করেই তিনি চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছেন স্কুলের দুই চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক গোলাম রাইহান ও মোহম্মদ ডালিম নামে শিক্ষককে। 

ওই দুই শিক্ষকের অভিযোগ, জাহিদুলের হুমকি ছিল, ‘মৌখিকভাবে আপনাদের কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছিল, মৌখিকভাবেই বললাম, বেরিয়ে যান।’ ওই স্কুলের শিক্ষক মোহম্মদ ডালিম বলছেন, ‘‘ওঁকে কিছু বলতে গেলেই শুনতে হয়, ‘চুপ, আমি কোনও অর্ডার মানি না, আমি এমএলএ’র জামাই।’’ তা হলে? জাহিদুল অবশ্য মুচকি হেসে চেনা ভঙ্গিতে বলছেন, ‘‘আরে ভাই, আমার কাছে এসআই-এর নির্দেশ রয়েছে। যা করার নিয়ম মেনেই করছি, অন্যায় কোথায়!’’

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

বিডি-প্রতিদিন/২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর