৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০৩:০৬

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কী 'পদ্ম ফুল' ফুটবে?

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কী 'পদ্ম ফুল' ফুটবে?

আগামী বছরের শুরুর দিকেই ভারতে লোকসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির প্রধান লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন গেরুয়া শিবির বাংলা থেকে ২২ টি আসনে জিতবেই। কিন্তু প্রশ্ন হল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি কী মমতা ব্যানার্জির রাজ্যে লোকসভার ৪২ টি আসনের মধ্যে ২২ টি আসন পাবে? 

সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা গেছে, বিজেপি বড়জোর ১৬ টি আসনে জয় পেতে পারে। কিন্তু ২২ টি কোন মতেই নয়। এই ব্যাপারে বিজেপি থেকে সদ্য তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়া সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ চন্দন মিত্র জানান ‘এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে বিজেপির আসন সংখ্যা বাড়ছে।’ 

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন ‘প্রথমত কংগ্রেস ও বামেরা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। তাই তাদের সেই ভোটগুলি কোথাও না কোথাও যাবেই। যারা তৃণমূলকে চায় না তারা বিজেপিকে বিকল্প হিসাবে দেখছে।’ তবে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৬ টি আসন পেতে পারে বলে জরিপে যে তথ্য উঠে এসেছে তা হাস্যকর বলে মনে করেন চন্দন। 

তিনি বলেন ‘আমি জানি যে বিজেপি সভাপতি এই রাজ্যের ৪২ টি আসনের মধ্যে ২২ টি আসন জেতার দাবি করেছেন কিন্তু রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের কাছে ইতিমধ্যেই ৩৪ টি আসন রয়েছে। সেক্ষেত্রে বিজেপির ঝুলিতে অত আসন যাওয়ার কোন সম্ভাবনাই আমি দেখছি না। আমার মনে হয় না মমতা ব্যানার্জির জনপ্রিয়তায় এতটা ভাটা পড়েছে যাতে তাদের আসন সংখ্যা এতটা নিচে নেমে যাবে।’
 
যদিও বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র-এর অভিমত উত্তরপ্রদেশ ও ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে দলের যে সাফল্য এবং ২০১৪ সালের মোদি ঝড়-এই দুইয়ে মিলে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ভাল ফল করা সম্ভব। তিনি জানান ‘হাস্যকর বলে যেটা মনে করা হচ্ছে, সেটাই বাস্তব। কারণ আমরা বাস্তবের মাটিতে বাস করতেই ভালবাসি। মোদি ও অমিত শাহ’এর নেতৃত্বে বিজেপি দল ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে উপস্থিত থাকে, টেলিভিশন স্টুডিও বা বিতর্ক সভায় নয়। আর সেই কারণেই আমরা নির্বাচনে জয়লাভ করি।’
 
অন্যদিকে, এই রাজ্য থেকে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ১৬ টি আসন জেতার ব্যাপারে যে পূর্বাভাষ পাওয়া গেছে-তার থেকেও বেশি পাবেন বলে জানিয়েছেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। তিনি বলেন ‘আমরা ২৪ টিরও বেশি আসন পাব। এবছর বাংলার মানুষ মমতা ব্যানার্জির শাসনকালে বিরক্ত হয়ে পড়েছে। আমি নিশ্চিত আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মমতার দল অর্ধেক আসনও পাবে না।’  

শনিবার কলকাতার গ্র্যান্ড হোটেলে ‘ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভ ইষ্ট ২০১৮’ অনুষ্ঠানে লেফট অর রাইট: হুইচ ওয়ে উইল বেঙ্গল সোয়ে’ শীর্ষক এক আলোচনা চক্রে উপস্থিত থেকে বক্তারা এসব অভিমত ব্যক্ত করেন। 

চন্দন মিত্র, সম্বিত পাত্র, মুকুল রায় ছাড়াও সেই প্যানেলে অংশ নিয়েছিলেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী, সিপিআইএম’এর যুব সংগঠন ডেমোক্রেটিক ইউথ ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (ডিওয়াইএফআই) নেতা শতরুপ ঘোষ। 

শতরুপ ঘোষের মতে ‘পশ্চিমবঙ্গ বাম ও ডানের মধ্যে দাঁড়িয়ে নেই বরং বলা যায় বাম ও দাঙ্গার মধ্যে অবস্থান করছে। তবে ভোটের হার নিম্নমুখি হওয়ার কারণে বামেরা কিছুটা হয়তো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে বলে মনে করেন তিনি। 

কিন্তু ‘অপ্রাসঙ্গিক’ হয়ে পড়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শতরুপ জানান, ‘বামেরা রাম নবমী মিছিলও বের করে না বা শিশুদের হাতে অস্ত্র ও লাঠি তুলে দেয় না কিংবা ‘পদ্মাবাত’ ছবি চলার সময় সিনেমা হলের দিকে ইঁট ছোঁড়ে না। বরং বামেরা চা শ্রমিকদের মজুরীর দাবিতে কিংবা শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার দাবিতে আন্দোলন করে।’
 
তৃণমূল ও বামেদের কটাক্ষ করে বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্র-এর অভিযোগ এই দুই দল যৌথভাবে পশ্চিমবঙ্গকে ফ্রাইং প্যান থেকে একেবারে আগুনের দিকে ঢেলে দিয়েছে। তারাই বাংলাকে ধ্বংস করেছে। তার মতে এই রাজ্যে ‘আকাঙ্খিত’  ও ‘ইতিবাচক’ রাজনীতির প্রয়োজন।’ 

 

বিডি-প্রতিদিন/ আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর