৩১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:৫৮

মুসলিম প্রার্থীদের দিয়ে লোকসভায় বাজিমাত করতে চায় বিজেপি

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

মুসলিম প্রার্থীদের দিয়ে লোকসভায় বাজিমাত করতে চায় বিজেপি

ফাইল ছবি

ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে দেশটির পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যে বেশি সংখ্যায় মুসলিম প্রার্থীদের দাঁড় করাতে চাইছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত। আর এই সংখ্যালঘু ভোটই রাজ্যের যে কোন নির্বাচনে বড় ফারাক গড়ে দেয়। 

একটা সময় এই ভোটকে কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করেছিল বামেরা। ২০১১ সালে রাজ্যে পালা বদলের নির্বাচনের সময় থেকে সংখ্যালঘুদের একটা বড় অংশ মমতা ব্যানার্জির তৃণমূলের পাশে থেকেছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদেরও ধারনা গত কয়েকটি নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের সমর্থন থাকার কারণেই তৃণমূলের আশানরূপ ফল হচ্ছে। তাই এবার সেই সংখ্যালঘুদেরই পাশে পেতে চাইছে বিজেপি।
 
চলতি বছরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল দেখেই বিজেপির এই চিন্তাভাবনা। কারণ গত মে মাসে রাজ্যে তিন স্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৮৫০ এর বেশি মুসলিম প্রার্থী দিয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে গেরুয়া শিবির। ওই নির্বাচনে প্রায় অর্ধেক প্রার্থীই জয়লাভ করে। আর সেই সাফল্যকেই লোকসভা ভোটে কাজে লাগাতে চায় গেরুয়া শিবির। 

কার্যত সেই থেকেই মুসলিম প্রার্থীদের টিকিট দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আনে দলের শীর্ষ কর্মকর্তারা। যদিও বিগত (২০১৪) লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪২ টি আসনের মধ্যে মাত্র ২ টি আসনে সংখ্যালঘু প্রার্থী দেয় তারা। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই সিপিআইএম ও কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে পশ্চিমবঙ্গে ক্রমশ দ্বিতীয় রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠেছে বিজেপি। 

এ ব্যাপারে দলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান ‘আগামী লোকসভার নির্বাচনে অন্য বারের তুলনায় বেশি সংখ্যক মুসলিমকে প্রার্থী করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। ধর্মের ভিত্তিতে আমাদের দল কাউকে টিকিট দেয় না। তবু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের থেকে অনেক আবেদন পত্র পেয়েছি। আমাদের দলের টিকিটে প্রার্থী হতে চেয়ে তারা প্রত্যেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’
 
দিলীপ ঘোষ আরও জানান ‘বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করার এখনও অনেক সময় রয়েছে। এবং তাদের যোগ্যতা, জেতার ক্ষমতা ও ব্যক্তি দক্ষতা যাচাই করেই প্রার্থী নির্বাচন করা হবে।’  

দিলীপ ঘোষোর মতোই একই সুর শোনা গেল বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার প্রধান আলি হোসেনের গলাতেও। তিনিও মনে করেন যে, সংখ্যালঘুরাই আসন্ন নির্বাচনে নির্ণায়ক ভূমিকা নেবে এবং দলও তাদের দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না। যদিও পরিস্থিতি বুঝে দল সঠিক সিদ্ধান্তই নেবে বলে জানান তিনি। 

তার অভিমত ‘এখনই বেশি সংখ্যক মুসলিমদের প্রার্থী করার জন্য দলের ওপর চাপ দেওয়া হবে না। ওই ব্যক্তি জেতার ক্ষমতা সহ অন্য গুণাবলি দেখেই পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

যদিও বিজেপির এই সংখ্যালঘু তাস নিয়ে মোটেই চিন্তিত নয় রাজ্যটির শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের অভিমত দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জির ওপর সংখ্যালঘুদের এখনও পুরো ভরসা আছে। এব্যাপারে তৃণমূলের মহাসচিব ও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি জানান, ‘সংখ্যালঘুদের আমাদের প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে। বিজেপির এই কৌশল হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয় এবং সংখ্যালঘুরাও তাদের এই অভিসন্ধির ব্যাপারে অবগত আছে।’ 

দিলীপ ঘোষের দাবি পশ্চিমবঙ্গে তাদের দল দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মুসলিমরাও এর অংশীদার। তিনি জানান, ‘এই মুহুর্তে কেন্দ্রে ও দেশের বিশটি রাজ্যে বিজেপি শাসিত সরকার রয়েছে। সেই সব রাজ্যে মুসলিমরা শান্তিতে বসবাস করছেন, তাদের কোন সমস্যা নেই। আমরা সকলের উন্নয়নে বিশ্বাসী।’

নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিজেপির অন্য এক রাজ্য নেতা জানিয়েছেন, আমাদের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত ঘোষনা আগামী লোকসভার নির্বাচনে এরাজ্য থেকে ২২ টি আসনে জয়লাভের টার্গেট দিয়েছেন। আর এর মধ্যে ১০ থেকে ১২ টি আসনে নির্ণায়ক ভূমিকা নেবে সংখ্যালঘু ভোট। সেক্ষেত্রে তাদের কাছে পৌঁছোনো খুবই জরুরী। 


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর