১৪ নভেম্বর, ২০১৮ ২১:০৮

‘ওয়েষ্টবেঙ্গল’ এর নাম পরিবর্তন নিয়ে কেন্দ্রকে ঘায়েল মমতার

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

‘ওয়েষ্টবেঙ্গল’ এর নাম পরিবর্তন নিয়ে কেন্দ্রকে ঘায়েল মমতার

ফাইল ছবি

‘ওয়েষ্টবেঙ্গল’এর নাম বদল নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের গড়িমসিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কেন্দ্রীয় সরকারকে এক হাত নেন মমতা। 

মমতার ইচ্ছা ছিল ওয়েষ্টবেঙ্গলের নাম বদল করে রাখা হোক ‘বাংলা’। এব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রস্তাবও পাঠানো হয়। কিন্তু ওই নাম বাংলাদেশের সঙ্গে মিলে যাওয়ার কারণেই নামটি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে রাজ্যের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরিবর্তে মন্ত্রণালয়ের তরফে রাজ্যকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে ‘বাংলা’র পরিবর্তে ‘পশ্চিমবঙ্গ’ নাম রাখা যেতে পারে।

এরপরই কেন্দ্রকে ঘায়েল করে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাস দেন মমতা। 

মমতা লেখেন ‘সম্প্রতি দেখছি বিজেপি নিজেদের রাজনৈতিক অসৎ উদ্যেশ্য চরিতার্থ করার জন্য প্রায় প্রতিদিনই ঐতিহাসিক স্থান ও প্রতিষ্ঠানের নাম বদল করে চলেছে। স্বাধীনতার পর থেকে কয়েকটি রাজ্য নগরের নাম বদল করা হয়েছে-যেমন ওড়িষ্যা থেকে ওড়িশা হয়েছে, পন্ডিচেরি হয়েছে পুদুচেরি, মাদ্রাজ হয়েছে চেন্নাই, বম্বে হয়েছে মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোর হয়েছে বেঙ্গালুরু। রাজ্য এবং স্থানীয় ভাষার ভাবাবেগকে মাথায় রেখে এই বদলগুলো ঘটানো হয়েছে। যেগুলো যথাযথ। কিন্তু এরাজ্যের ক্ষেত্রে পৃথক মনোভাব দেখানো হয়েছে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা আর সেই ভাবাবেগকে মাথায় রেখে রাজ্যের নাম বদলের জন্য আমাদের বিধানসভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, বাংলায় রাজ্যের নাম হবে ‘বাংলা’, হিন্দিতে ‘বঙ্গাল’ এবং ইরেজিতে ‘বেঙ্গল’।

পরে রাজ্যের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়েও দেয়া হয়েছিল। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় আমাদের পরামর্শ দেয় তিনটি ভাষাতেই বাংলা নাম ব্যবহার করা হোক। সেই পরামর্শ অনুসারে তিন ভাষাতেই রাজ্যের পরিবর্তিত নাম বাংলা রাখার ব্যাপারে বিধানসভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং তা ফের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু তা দীর্ঘ সময় ধরে মুলতুবি রাখা রয়েছে। এই ঘটনাতেই প্রমাণ যে বাংলার মানুষকে বঞ্চনা করা হচ্ছে। অবিভক্ত বাংলার রাজধানী ছিল কলকাতা। ভারত এবং বাংলাদেশ-উভয় দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা ছিলেন এই দেশের সন্তান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আমরা ভারতকে ভালবাসি, একইসাথে বাংলাদেশ ও বাংলাকেও ভালবাসি। নামের মিল কোনো সমস্যা তৈরি করবে না। কারণ আমাদের দেশের মতোই আমাদের প্রতিবেশী দেশেও একটি পাঞ্জাব রয়েছে।’ 

বিজেপিকে তোপ দেগে মমতা বলেন ‘এরাজ্যের নাম কি হবে সে বিষয়ে রাজ্যেরই ক্ষমতা শূণ্য একটি রাজনৈতিক দল সিদ্ধান্ত নেবে, নাকি রাজ্য বিধানসভায় সর্বসম্মতভাবে পাশ হওয়া সিদ্ধান্ত মেনে সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে সম্মান জানানো হবে? বাংলার মানুষ খুব শিগগির এই প্রশ্নের ইতিবাচক জবাব পাবে।’ 

উল্লেখ্য রাজ্যের নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ইংরেজীতে ‘ওয়েষ্টবেঙ্গল’ হওয়ায় এর প্রথম অক্ষর ডব্লিউ থাকায়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বা আলোচনাচক্রে রাজ্যের প্রতিনিধির ডাক আসে একেবারে শেষে। ফলে জাতীয় স্তরের সেই আলোচনায় রাজ্যটির প্রতিনিধিরা কার্যত বিশেষ কিছুই বলার সুযোগ পান না, কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সভাঘর সেসময় প্রায় ফাঁকা হয়ে যায় নয়তো অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। 

অন্যদিকে বাংলার প্রতিনিধিদের দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়। ধৈর্য্য হারিয়ে যায় রাজ্যের প্রতিনিধিদের। সেই দিক বিবেচনা করেই রাজ্যের নাম বদলের ভাবনা। 

তবে বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত ওয়েষ্টবেঙ্গলের নাম ‘বাংলা’ হলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ‘বাংলা’ ও ‘বাংলাদেশ’ নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে। নামের সাদৃশ্য থাকার কারণে দুই বাংলাকে পৃথক করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর এই কারণেই রাজ্যের নাম বদল করে ‘বাংলা’ করার যে প্রস্তাব মমতা রাখেন তাতে আপত্তি জানায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর