১৯ নভেম্বর, ২০১৮ ২২:০৩

আসামে এনআরসি থেকে বাদ ৪০ লাখ, আবেদন সাড়ে ৪ লাখ!

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

আসামে এনআরসি থেকে বাদ ৪০ লাখ, আবেদন সাড়ে ৪ লাখ!

ভারতের অাসামে প্রকাশিত হয় জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) চূড়ান্ত খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়েছে প্রায় ৪০ লাখের মতো নাগিরিক। তবে বাদ পড়াদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন জানাননি।

সূত্রের খবর, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এনআরসিতে নাম তোলার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তাতে আবেদনকারীর সংখ্যা খুবই কম। এখন পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ৪ লাখ মানুষ তাদের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেছেন। তারাই নিজেদের ভারতীয় নাগরিক বলে দাবি করেছেন। তারা নিজেদের দাবির সমর্থনে নথিও জমা দিয়েছেন।

পাশপাশি ‘অবৈধ নাগরিক’ হওয়া সত্বেও বেশ কিছু ব্যক্তির নাম কেন ওই খসড়ায় স্থান পেয়েছে তা জানতে চেয়ে তথ্যসহ আবেদন জমা পড়েছে দুই শতাধিকের কিছু কম। 

নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য কেন এত কম সংখ্যক আবেদন জমা পড়ল তা নিয়ে দুই দিন আগেই দিল্লিতে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয় বলে খবর। সেই বৈঠকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, অাসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব রাজীব গৌবা, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)-এর ডিরেক্টর রাজীব জৈনসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। 

গত ৩০ জুলাই ভারতের অাসামে প্রকাশিত হয় জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-এর চূড়ান্ত খসড়া তালিকা। এনআরসি’এর কাছে জমা পড়া ৩.২৯ কোটি আবেদনকারীর মধ্যে চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় ২.৮৯ কোটির কিছু বেশি মানুষের নাম। তালিকা থেকে বাদ পড়ে প্রায় ৪০ লাখ বাসিন্দা। আর তারপরেই বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে যথেষ্ট সোরগোল পড়ে যায়। কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’এর বিরুদ্ধে সরব হয় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। 

এই ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি তো একে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ বলে অভিযোগ করার পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন এর ফলে দেশে ‘রক্তগঙ্গা’ ও ‘গৃহযুদ্ধ’ শুরু হবে। এমন এক পরিস্থিতিতে নাগরিক পঞ্জিতে নাম অন্তর্ভুক্তির আবেদন এবং অভিযোগের একটি আদর্শ কার্যবিধি (এসওপি) তৈরি করতে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা শেষ হবে আগামী ১৫ ডিসেম্বর। 

প্রাথমিক ভাবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের দেয়া অন্তত ১০ নথির ভিত্তিতে নাগরিক পঞ্জিতে নাম নথিভুক্তর বিষয়টি নির্ধারিত ছিল। তবে গত ১ নভেম্বর নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য অতিরিক্ত ৫ টি নথি জমা দেয়া যাবে বলে জানায় শীর্ষ আদালত। এনআরসি চূড়ান্ত খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়া মানুষদের দাবি ও অভিযোগ জানানোর জন্য অাসামের ২৫০০ টি ‘সেবা কেন্দ্র’ থেকে ফর্ম বিতরণ করা হচ্ছে।
 
উল্লেখ্য ১৯৫১ সালে প্রথম যখন অাসামে নাগরিক পঞ্জি তৈরি হয় তখন রাজ্যটির জনসংখ্যা ছিল ৮০ লাখ। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী অাসামের জনসংখ্যা ছিল ৩ কোটি ১১ লাখ। তাদের মধ্যে অনেকেই প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে এসেছেন বলে অভিযোগ। এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিতকরণ ও তাদের বিতাড়নের দাবিতেই ১৯৭৯ সালে রাজ্য জুড়ে আন্দোলন শুরু করে ‘অল অাসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ (আসু), যা স্থায়ী ছিল টানা ছয় বছর। পরে ১৯৮৫ সালের ১৫ আগস্ট ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর উপস্থিতিতে অাসাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর