৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ১৩:০৯

রাজনৈতিক মোড়কে মমতার ধর্নামঞ্চ!

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

রাজনৈতিক মোড়কে মমতার ধর্নামঞ্চ!

ধর্নামঞ্চে বক্তব্য রাখছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি

কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই’এর অভিযানের প্রচেষ্টার পরই তার প্রতিবাদ করে রবিবার রাত থেকে ধরনায় বসেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তাঁর বক্তব্য ছিল গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষার দাবিতেই তার এই ধরনা। মঙ্গলবার তৃতীয় দিনে পড়ে মমতার ধরনা। কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে, ততই এই ধর্নামঞ্চ রাজনৈতিক রূপ নিয়েছে। 

গত মাসের শেষে তৃণমূল সহ ২৩টি অ-বিজেপি বিরোধী দলকে নিয়ে ব্রিগেডে যে সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন মমতা, ধরনা শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই তারা মমতাকে সমর্থন জানাতে শুরু করে। সারদা আর্থিক কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের নাম জড়িয়ে যাওয়ার পর এতগুলো বিজেপি বিরোধী দল এই প্রথম মমতাকে সমর্থন জানালো।

মমতা নিজেও জানান ‘আমি রাহুল গান্ধী (কংগ্রেস সভাপতি), আহমেদ প্যাটেল (কংগ্রেস), তেজস্বী যাদব (রাষ্ট্রীয় জনতা দল), শরদ যাদব (লোকতান্ত্রিক জনতা দল), হেমন্ত সোরেন (ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা), অরবিন্দ কেজরিওয়াল (আপ), এইচ.ডি.দেবগৌড়া (জনতা দল সেকুলার), চন্দ্রবাবু নাইডু (টিডিপি), অখিলেশ যাদব (সমাজবাদী পার্টি)-এদের থেকে ফোন পেয়েছি। তারা প্রত্যেকেই তাদের সংহতি জানিয়েছেন।’

এমনকি সোমবার মমতার ধর্নামঞ্চে হাজির হন সপা সহ-সভাপতি কিরণময় নন্দ যিনি বিকাল পর্যন্ত মমতার পাশেই বসে ছিলেন। রাতের দিকে আসেন ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝি, বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব-তাদেরকে পাশে বসিয়েই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মমতা। 

কেন্দ্রকে তোপ দেগে মমতার বক্তব্য ‘তারা (কেন্দ্র) কি পরিকল্পনা করছেন? তারা কি এখানে ৩৫৫ বা ৩৫৬ ধারা জারি করতে চায়? রাজ্যের মানুষই ১৪৪ ধারা করে তাদের আটকে দেবে। আমরা এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ চালিয়ে যাবো।’ 

রাজীব কুমার ইস্যুতে গত দুই দিন ধরেই রাজ্য জুড়েই অবরোধ, মিছিল করেছে তৃণমূল। ভবানীপুরে বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও ধর্নামঞ্চের সামনে উপস্থিত তৃণমূলের কয়েক শ’ কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে মমতা জানান ‘এটা তৃণমূলের কর্মসূচি নয়। আমি এখানে উপস্থিত সকলকে বলছি যে তারা যেন কোনো স্লোগান, শাউটিং না করেন কিংবা দলীয় পতাকা বা কারও কুশপুতুল নিয়ে না আসে। এটা দলীয় কর্মসূচি নয়।’

কিন্তু মমতার এই বার্তা ধর্নামঞ্চের চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৪ হাজার দলীয় সমর্থকদের কানে পৌঁছয়নি তা পরিষ্কার। ধর্নামঞ্চের পাশ থেকেই স্লোগান ওঠে ‘দু হাজার ঊনিশ, বিজেপি ফিনিশ’, ‘গলি গলি মে চোর হ্যায়, নরেন্দ্র মোদি চোর হ্যায়,’ বা ‘দিদি তুমি এগিয়ে চলো, আমরা তোমার সাথে আছি,’। 

কয়েকজন সমর্থক আবার গাছের ডালে, বিদ্যুতের খুঁটিতে, রোড ডিভাইডারে দলীয় পতাকা টাঙানোর চেষ্টা করেছেন। আর মমতার চোখে পড়ার পর তা নামিয়ে ফেলার নির্দেশও দিয়েছেন। 

যদিও মমতার এই ধরনাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। মমতার পাশে থাকার বার্তা দেওয়ায় রাহুল গান্ধীকেও তোপ দেগেছে কংগ্রেস। বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রের মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর জানান ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই সিবিআই তদন্ত করছে, মোদি সরকারের নির্দেশে নয়।’ তাঁর প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রী কেন তদন্তের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন?

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর