১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ১৪:১৭

পশ্চিমবঙ্গে ৫০ কপি বিক্রি হলে বাংলাদেশে বিক্রি হয় ৫০০: শীর্ষেন্দু

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

পশ্চিমবঙ্গে ৫০ কপি বিক্রি হলে বাংলাদেশে বিক্রি হয় ৫০০: শীর্ষেন্দু

বাংলা ভাষা এই পশ্চিমবঙ্গে যথাযথ সম্মান ও স্বীকৃতি পাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলা সাহিত্যেও অন্যতম লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তার অভিমত বিষয়টি নিয়ে সমীক্ষার প্রয়োজন আছে। কলকাতা সাহিত্য উৎসবের শেষ দিন শনিবার ‘দুই দেশ-এক বাংলা’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেছেন।

বাংলা ভাষার প্রতি আবেগ ও ভালবাসা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে তুলনা টেনেছেন তিনি।

শীর্ষেন্দু বলেন, বাংলা ভাষার প্রতি ভালবাসা ও আবেগ বাংলাদেশের নাগরিকদের অনেক বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় এই বাংলার বাঙালিরা যা করে তা কিছুই নয়।

৮৩ বছর বয়স্ক সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার প্রাপ্ত এই লেখক জানান, বিশ্বের ষষ্ঠতম কথ্য ভাষা হল বাংলা এবং ভারতেও বহু মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। তাই নিজেকে বাংলা ভাবা বা বলার মধ্যে কোনও বিব্রত বোধ বা বেমানানের কিছু নেই।

এপার বাংলার চেয়ে বাংলাদেশের পাঠকরা যে বেশি সাহিত্যিক মনস্ক-সেই বিষয়টি বর্ণনা করে তিনি বলেন, এই বাংলায় আমার নির্দিষ্ট কোনও বই যদি ৫০ কপি বিক্রি হয়, তবে ওপার বাংলায় সেই সংখ্যাটা হবে কমকরে পাঁচ শতাধিক।

তার অভিমত দেশভাগ দুই দেশের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে মানসিক দূরত্ব তৈরি করে দিতে পারেনি, কারণ তার কথায় দেশ ভাগ হয়েছে রাজনৈতিক সমীকরণর জন্য। আমাদের দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীতও একই কবি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেছিলেন।

অন্যদিকে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত কবি শ্রীজাত বন্দোপাধ্যায়ের অভিমত সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে দুই দেশের মধ্যে যে ভৌগলিক বিভেদ-তাতে সেতু বন্ধনের কাজ করেছে। তার ফলে বাংলাদেশের মানুষরা বাঙালি লেখক-কবিদের নতুন লেখা সম্পর্কে অবগত হয়ে যাচ্ছেন। এমনকি কখনও কখনও পশ্চিমবঙ্গে আমার বই নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে বাংলাদেশের পাঠকরাই জানতে আগ্রহ দেখায়। আমার বইগুলো তারা কোথায়, কখন পাবেন সে ব্যাপারে বাংলাদেশি বন্ধুরা আমার কাছ থেকে জানতে চায়। সামাজিক মাধ্যম আমাকে তাদের সাথে তাৎক্ষনিক সংযোগ স্থাপনের সুযোগ করে দিয়েছে।

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের একটি বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে শ্রীজাত বলেন, কলকাতায় কোন বহুতলে ঢুকতে গেলে সেখানে নির্দিষ্ট খাতায় (ভিসিটর’স বুক) নাম লিখতে হয়। সেখানে যদি আমি বাংলায় নাম লিখি, তখন নিরাপত্তা কর্মীরা অবাক হয়ে যান এবং আমার দিকে তাকিয়ে কারণ জানতে চান। তারা বলেন সবাই ইংরেজিতেই নাম লেখেন। অথচ ঢাকায় মোটেও সেই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় না, সেখানে বাংলাতে লেখাটাই নিয়ম।

শ্রীজাত জানান, তিনি সেই দিনটার দিকেই অপেক্ষা করে আছেন যেদিন নিজের মাতৃভাষায় কথা বলতে, লিখতে বা আলোচনা করতে কারও সঙ্কোচ হবে না-বরং গর্ব হবে, একাত্মতার অনুভূতি হবে এবং স্বাচ্ছন্দ বোধ হবে।

ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী, পশ্চিমবঙ্গের লেখক ও সাংবাদিক প্রচেত গুপ্ত প্রমুখ।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর