১৭ মার্চ, ২০১৯ ১৭:৩২

লোকসভা নির্বাচন আসতেই পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে রং বদল শুরু

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

লোকসভা নির্বাচন আসতেই পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে রং বদল শুরু

রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে দলবদলের ঘটনা নতুন কিছু নয়। সারা বছর ধরেই তারা এটা করে থাকেন। কিন্তু নির্বাচনের আগে তা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। সামনেই ভারতে লোকসভা নির্বাচন, ইতিমধ্যেই নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আর তারপরই রাজনৈতিক নেতাদের দল-বদলের পালা শুরু হয়েছে। পুরোনো দলের তরফে লোকসভার প্রার্থী হওয়ার টিকিট না পেয়ে ‘নীল-সাদা-সবুজ-হলুদ’ (তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকার রং) এর মোহ কাটিয়ে কেউ যাচ্ছেন বিজেপি শিবিরের দিকে। কেউ আবার ‘লাল’ (সিপিআইএম-এর পতাকার রং) কিংবা ‘হাত’ চিহ্নের (জাতীয় কংগ্রেস) বদলে নীল-সাদা-সবুজ-হলুদের দিকে ঝুঁকেছেন। 

তবে দলবদলের এই খেলায় এখনও পর্যন্ত অ্যাডভানটেজ বিজেপি ও তৃণমূল। বছর দুই আগে পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বড় দলবদলের নজির ছিলেন মুকুল রায়। তৃণমূলের নাম্বার টু-মুকুল যোগ দিয়েছিলেন বিজেপি শিবিরে। আর এরপর থেকেই তার হাত ধরে বহু তৃণমূল কর্মী নাম লিখিয়েছিলেন পদ্ম শিবিরে। সাম্প্রতি কালে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলের দুই সাংসদ- অনুপম হাজরা (বোলপুর কেন্দ্র) ও সৌমিত্র খাঁ (বিষ্ণুপুর)। চলতি সপ্তাহেই পদ্ম শিবিরে যোগ দেন তৃণমূলের আরও হেভিওয়েট নেতা-ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিং ও বাগদা’র বিধায়ক দুলাল বর।
 
যদিও মুকুল রায় থেকে শুরু করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষরা বিভিন্ন সময়ে বলে আসছেন ‘ইয়ে ট্রেলার হ্যায়, পিকচার আভি বাকি হয়’। বিজেপি সূত্রে খবর, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লেখানোর ব্যাপারে পা বাড়িয়ে রয়েছে আরও কয়েকজন হেভিওয়েট নেতারা। এর মধ্যে অর্জুন সিং’এর বোন জামাই নোয়াপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক সুনিল সিং, বাঘমুন্ডির তৃণমূল বিধায়ক নেপাল মাহাতো, রাজারহাটের তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত, পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ কুমার মুখার্জির মতো নেতারাও আছেন। তবে এদের কেউই এখনও বিজেপিতে যোগদানের ব্যাপারে কিছু জানাননি। অন্য দল ভাঙিয়ে নিজের দলে লোক টানতে এখনও নিয়মিতভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিদ্রোহী নেতাদের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছেন মুকুল রায়। 

রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে অন্ততপক্ষে ২২টি আসনে জেতার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। কিন্তু তা পূরণে এ রাজ্যে বিজেপির যে সেই সাংগঠনিক শক্তি নেই একথা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। তাই অন্য দলগুলি থেকে নেতা ভাঙিয়ে পদ্ম শিবির সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের খেলায় মেতে উঠেছেন বলে কারও কারও অভিযোগ। 

তবে এই অভিযোগ মানতে নারাজ বিজেপি। নাম না প্রকাশ করার শর্তে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, ‘অধিকাংশ তৃণমূল নেতারা-যারা নিজের দলের মধ্যে দমবন্ধকর পরিস্থিতির মধ্যে কাটিয়েছেন বা কাটাতে হচ্ছে-তারা বিজেপির সাথে যোগাযোগ রাখছেন এবং বিজেপিতে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তারা প্রত্যেকেই রাজ্যে ‘নির্বাচনী আচরণবিধি’ চালুর অপেক্ষায় ছিলেন।’  

অন্যদিকে, জাতীয় কংগ্রেসের তিন বিধায়ক আবু তাহের খান, কানাই লাল আগরওয়াল এবং অপূর্ব সরকার পুরোনো দল ছেড়ে নাম লিখিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসে। ইতিমধ্যেই ওই তিন বিধায়ককে লোকসভার প্রার্থীও করেছে তৃণমূল। কিন্তু কংগ্রেসের বিধায়ক পদে ইস্তফা না দিয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় দলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে ওই তিনজনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে কংগ্রেস। 

কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীর খাসতালুক বহরমপুরে তৃণমূলের প্রার্থী করা হয়েছে অপূর্ব সরকারকে, মুর্শিদাবাদ থেকে লড়াই করবেন আবু তাহের খান এবং রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিটে লড়ছেন কানাই লাল আগরওয়াল। কয়েকদিন আগেই তৃণমূলে যোগ দেওয়া কংগ্রেস সাংসদ মৌসম নূর-কে মালদা উত্তর কেন্দ্রে প্রার্থী করেছেন মমতা। 

বিডি-প্রতিদিন/১৭ মার্চ, ২০১৯/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর