২১ মার্চ, ২০১৯ ২০:৩৭

লোকসভার ভোট : রঙকে হাতিয়ার করেই প্রচারণা রাজনীতিকদের

দীপক দেবনাথ,কলকাতা

লোকসভার ভোট : রঙকে হাতিয়ার করেই প্রচারণা রাজনীতিকদের

রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে যেমন আদর্শের মতভেদ রয়েছে তেমনি দলীয় পতাকার রঙও ভিন্ন।  কিন্তু সেই রঙকে হাতিয়ার করেই ভারতে লোকসভার নির্বাচনের আগে ভোটারদের মধ্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করলেন রাজনীতিবিদরা। 

আগামী ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে ভারতে লোকসভার নির্বাচন। প্রায় একমাসের বেশি সময় ধরে সাত দফায় চলবে এই ভোটপর্ব। তাই সময় নষ্ট না করে হোলিকে সামনে রেখেই জনসংযোগে নেমে পড়লেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা। কেউ সরাসরি রাস্তায় নেমে-মিছিল করে-দলীয় কর্মী,সমর্থকদের সাথে সেলফি তুলে, আবির খেলে-কেউ আবার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসীর হৃদয় ছুঁতে চাইলেন।
  
বসন্ত উৎসব উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাধের শান্তিনিকেতন থেকে শুরু করে পাড়ার অলিগলি-সর্বত্রই ছিল রঙের ঘনঘটা। এদিন, সকাল থেকেই কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় লোকসভার প্রার্থীরা দোল খেলাতে মেতে উঠতে দেখা যায়। বীরভূমের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় যখন সবুজ রঙের আবির খেলায় মেতে উঠলেন, তখন কলকাতা উত্তরের সিপিআইএম প্রার্থী কনিনিকা ঘোষ দেওয়াল লিখনে ব্যস্ত ছিলেন। চেতলায় রঙ খেলনে দক্ষিণ কলকাতার সিপিআইএম প্রার্থী নন্দিনী মুখার্জি। 

নৈহাটিতে আবির খেলার পাশাপাশি দেদার সেলফি তুললেন ব্যারাকপুরে তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী। শ্রীরামপুরে রঙ খেলতে দেখা যায় তৃণমূলের প্রার্থী কল্যাণ ব্যানার্জিকে। ভাটপাড়ায় বিজেপি নেতা অর্জুন সিং, রাস্তায় নেমে আবির খেলে ভোট প্রচারণা করলেন বালুরঘাটের তৃনমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষ, ব্যারাপুরের সিপিআইএম প্রার্থী গার্গী চ্যাটার্জিরা। বারাসতে রাস্তায় রবীন্দ্র সঙ্গীতের গানের তালে তালে নেচে প্রচারণা সারেন তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার। এছাড়াও রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, ক্রেতা সুরক্ষা ও উপভোক্তা মন্ত্রী সাধন পান্ডেকেও জনসংযোগ করতে দেখা যায়।
 
নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীদের পরণের পোশাকেও ছিল বসন্তের ছোঁয়া। পুরুষদের পরনে যেমন ছিল সাদা পায়জামা-হলুদ কিংবা সবুজ পাঞ্জাবী, তেমনি নারী প্রার্থীরাও হলুদ রঙের পোশাক ব্যবহার করেছেন আর কাপড় কিংবা পাঞ্জাবীর ভাঁজে ছিল দলীয় প্রতীক। 

রাজ্যের বাইরে ত্রিপুরা, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র সহ একাধিক রাজ্যে ছবিটা কমবেশি একরকম। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে দেখা গিয়েছে গোরখপুরে আরএসএস প্রধান কার্যালয়ে হোলি উৎসবে মাততে।
 
যদিও পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় নিহত সিআরপিএফ জওয়ানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে হোলি খেলা থেকে দূরে থেকেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিরা। তবে তারা প্রত্যেকেই হোলি উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

 ট্যুইট করে মমতা লিখেছেন ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও, যাও, যাও গো এবার যাওয়ার আগে...বসন্ত উৎসবের শুভেচ্ছ। রঙিন হয়ে উঠুক সকলের জীবন।’ একইসাথে তিনি এও জানান ‘পুলওয়ামা সহ অন্য হামলায় নিহত সেনাদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা। চলতি বছরে আমি হোলি উৎসবে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
 
হোলিতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী-ও। ট্যুইট করে মোদি লিখেছেন ‘সমস্ত ভারতবাসীকে এই শুভ মুহুর্তে আমি শুভেচ্ছা জানাই। এই খুশির উৎসব, রঙের উৎসবের মধ্যে দিয়ে আমাদের একতা ফুটে ওঠে।’
 
রঙের ছোঁয়া লেগেছে নির্বাচন কমিশনেও। দেশজুড়ে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে এই কমিশনের ওপর। তাই আসন্ন নির্বাচনের বিষয়টি ভোটারদের আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ‘হোলি উৎসব’এর মেজাজ নিয়ে ভোট দেওয়ার আবেদনও জানাল নির্বাচন কমিশন। 

ট্যুইট করে কমিশনের তরফে জানানো হয় ‘ভোট আপনার অধিকার, ভোট আপনার দায়িত্ব। হোলির উৎসাহ নিয়েই আপনারা ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে গিয়ে অবিচ্ছিন্ন কালি দিয়ে আপনার আঙুলটিও রঙিন করে তুলুন।’ 

 

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ তাফসীর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর